অনেকেই ঘোড়ার মাংস খায়। আজকে আলোচনা করবো ঘোড়ার মাংস কেন হারাম, কিভাবে খেলে হালাল ? ইসলাম কি বলে?
ঘোড়ার মাংস হারাম নাকি হালাল? ঘোড়ার মাংস কেন হারাম
আমাদের দেশেও ঘোড়ার মাংস বিক্রি ও খাওয়া নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে।
তবে গরু, খাসি, মুরগির মতো এতটা প্রচলিত না হলেও ঘোড়ার মাংস খাওয়া ইসলামে হালাল বলা হয়েছে।
জাবের (রাঃ) বলেন- খায়বারের যুদ্ধে রাসূল (সাঃ) গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশত খাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন (বুখারী হা/৫৫২০; মিশকাত হা/৪১০৭)। আসমা (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (সাঃ) এর যুগে ঘোড়া যবহ করেছি এবং গোশত খেয়েছি (বুখারী হা/৫৫১৯)। তাই বলা চলে, ঘোড়ার মাংস খাওয়া হালাল। তবে গাধার মাংস খাওয়া হারাম।
তবে খাদ্য সংস্কৃতি অনুযায়ী চাইলে আপনি ঘোড়ার মাংস নাও খেতে পারেন। তবে শরীআহ অনুযায়ী ঘোড়ার মাংস চাইলে খাওয়া যাবে।
ঘোড়ার মাংস খাওয়া কি মাকরুহ?
তবে আগে জিহাদের সময় ঘোড়া ব্যবহার করা হতো। ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য।
তাই যদি গণহারে সবাই ঘোড়ার মাংস খেতে শুরু করে তাহলে সংকট দেখা দিবে। তাই কিছু কিছু হাদিসে জিহাদকে কারণ দেখিয়ে ঘোড়ার মাংস খাওয়াকে মাকরুহ বলা হয়েছে।
তবে পুরোপুরি নিষেধ করা হয়নি। আরেকটা কথা। অসুস্থ বা আহত ঘোড়ার মাংস খাওয়া চলবে না।
খেতে হলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জবাই দিয়ে তারপর খেতে হবে।
তবে কোনো কোনো হাদীসে ঘোড়ার মাংস খাওয়াকে হারাম বলা হয়েছে।
কেননা ঘোড়া পালনের সময় শক্তি আর বল বাড়াতে অনেক ধরণের ওষুধ ও দ্রব্য খাওর্য়নো হয় যা ইসলামে নিষিদ্ধ। যেমন- মাদক হতে পারে। এছাড়া সবাই যদি ঘোড়ার মাংস খায় তাহলে বন্য ঘোড়া এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত ঘোড়ার সংকট দেখা দিবে অচিরেই।
আর আগে যোগাযোগে ঘোড়া রাজা- বাদশাহদের অন্যতম বাহন ছিলো। তাই সেই সময় ঘোড়ার মাংস খাওয়া হারাম বলা হয়েছিলো।
কিন্তু মূল ধারার হাদীসে যেমন- বুখারী শরীফ, মিশকাতে ঘোড়ার মাংস খাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ বলা হয়েছে।
ঘোড়ার মাংস খাওয়া কি স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ?
এখন জেনে আসি ঘোড়ার মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ কিনা। যদি আপনার শারীরিক কোনো জটিলতা থাকে যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, হার্টের সমস্যা তাহলে নতুন কিছু খাবার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যদিও ঘোড়ার মাংসে চর্বি এবং কোলেস্টোরোল কম। কিন্তু এতে জিংক এবং আয়রনের মাত্রা বেশি থাকে।
যা মানবদেহে ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়া রেসে দৌড়ানোর জন্য ঘোড়াকে অনেক ধরণের ড্রাগ জাতীয় পদার্থ খাওয়ানো হয়।
দ্রুত দৌড়াতে পারে এজন্য মেডিসিন খাওয়ানো হয়। আর এসব বিষাক্ত ঘোড়ার শরীরে জমে থাকে।
তাই এই মাংস খেলে মানুষের ক্ষতি হতে পারে। অতএব, রেসের ঘোড়া বা বাণিজ্যিকভাবে পালন করা ঘোড়ার চেয়ে গৃহস্থালি বা কসাইয়ের আস্তাবলে পালিত ঘোড়ার মাংস খাওয়া ভালো।
একটি ঘোড়া সারাজীবনে নানারকম রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসতে পারে।
যেমন- আইসোক্সসুপ্রিন, জিলপেটেরল, র্যাক্টোপমেইন, ট্রায়ামসিনোলোন অ্যাসিটোনাইড বা ডেক্সামেথাসোন ইত্যাদি।
এটি মানবদেহে বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। যেমন- পেশি ব্যথা, গর্ভপাত, অন্ত্রের সমস্যা, কিডনির সমস্যা ইত্যাদি।
ঘোড়ার মাংস খানিকটা মিষ্টি স্বাদের হয়। রংটাও গরুর মাংসের চেয়ে গাঢ় হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মাংস মাঝে মাঝে খাওয়া যায়। তবে নিয়মিত না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি থাকে।
অন্যদিকে ঘোড়ার মাংস উচ্চ প্রোটিন এবং এনজাইম সমৃদ্ধ। তাই যারা ক্রিড়াবিদ আছেন তারা খেতে পারেন। পেশিতে বল পাবেন। আর বাড়ন্ত বাচ্চারাও প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে খেতে পারে।
তবে অতিরিক্ত প্রোটিন আমাদের শরীরে ইউরিয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই খেতে হলে অল্পবয়সী ঘোড়ার মাংস খাওয়াই ভালো।
সাধারণত যাযাবরেরা ঘোড়ার মাংস পছন্দ করে। তবে ঘোড়ার মাংস রাননা করার আলাদা কোনো পদ্ধতি নেই।
শুধু কটু গন্ধ সরাতে সাধারণ মশলা ব্যবহার করবেন। কাবাব করে খেতে পারেন। আবার সবজি দিয়েও রান্না করতে পারেন।
তবে যেহেতু ঘোড়ার মাংস নরম হয় তাই নামানোর আগে লবণ দিবেন।
ঘোড়ার মাংসের উপকারিতা
যেহেতু খাওয়া হারাম নয়, তাই ঘোড়ার মাংস খেতে পারবেন। তবে ততটা সহজলভ্য না হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি পড়বে।
১| ঘোড়ার মাংস প্রোটিণের ভালো উৎস।
২| এই মাংসে চর্বি কম।
৩| এই মাংস শরীর, হাড় এবং দাঁত গঠনে সাহায্য করে।
৪| শরীরের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান যেভন-ফসফরাস, জিঙ্ক, লোহা, উচ্চ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম আছে এই মাংসে।
৫| মুখের স্বাদ বদলের জন্য ঘোড়ার মাংসের বিভিন্ন পদ রেধে খাওয়া যেতে পারে।
কারা খেতে পারবে ঘোড়ার মাংস? ঘোড়ার মাংস কেন হারাম, কিভাবে খেলে হালাল
অনেক দেশের মানুষই ঘোড়ার মাংস খায়।
যেমন- জাপান, কাজাখস্তান, পোল্যান্ড, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, এবং আইসল্যান্ড। .
কাজাখস্তানে ঘোড়ার মাংসের তৈরি কাবাব আর অন্যান্য পদ রুটি বা নানের সঙ্গে বেশ জনপ্রিয়।
মুসলমানেরাও খেতে পারবে। তবে শরীআহর নিয়ম মেনে খেতে হবে।
আর যাদের শারীরিক জটিলতা আছে, উচ্চ প্রোটিনে বদহজম হয় বা ডাক্তার খেতে বারণ করেছে তাদের না খাওয়াই ভালো।
কিছু সতর্কতা
১| ঘোড়ার মাংস কিনতে হলে সুপারশপ বা কসাইয়ের থেকে দেখে কিনুন।
২| কোনোরকম বিষ প্রয়োগ হয়েছে কিনা আগেই জেনে নিন।
৩| খাওয়ার আগে সতর্ক থাকবেন আপনার কোনো এলার্জির সমস্যা আছে কিনা।
৪| ভালো করে রান্না করবেন যাতে মাংস কাঁচা না থাকে।
এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।