বাংলাদেশের চরাঞ্চল বলতে কুড়িগ্রামকে বোঝানো হয়েছে। কুড়িগ্রাম বাংলাদেশের ভেতর সবুজে ঘেরা দৃষ্টিনন্দন একটি গ্রাম। ভৌগলিক দিক দিয়ে কুড়িগ্রাম কৃষিকাজ ও চাষাবাদের জন্য খুবই উত্তম। চরাঞ্চলের বেশীরভাগ নারীরাই কৃষিকাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ ও বন্যার কারণে এবছর কৃষিকাজ ও চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পূরণের জন্য কুড়িগ্রাম চরাঞ্চলের বেশীরভাগ নারীরাই কৃষিকাজে নিয়জিত হয়ে অর্থ উপার্জন করে সাবলম্বী হয়েছেন। তারা বসতবাড়ির আঙ্গিনায় শাক-সবজি চাষ করে এবং পশু-পালন করে ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করছে। বন্যায় চাষের জমিতে পানি উঠে যাওয়াও চারা ও শাক-সবজি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এতে কৃষকের দারিদ্রতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে যা আগামী বছরও পূরণ করা সম্ভব নই। এই চরম পরিস্থিতে নারীরা বিভিন্ন কৃষিকাজ করে তাদের সংসারের হাল ধরছে। হাঁস, মুরগী, ছাগল, গরু ও ভেড়া পালন করে নারীরা আর্থিকভাবে নিজেরাই সাবলম্বী হচ্ছেন।
এতেই ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও তারা বাড়ির আঙ্গিনায় তরীতরকারীর চাষাবাদ ও ফলন করে আর্থিকভাবে খুবই লাভবান হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন ট্রেনিং গ্রহন করে নারীরা অর্থ উপার্জনে সামলন্বী হয়েছেন। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার নায়ারহাট ইউনিয়নের নাইয়ারচর এফডিএমসির সদস্য মোছা. বুলবুলি বেগম। তিনি কুড়িগ্রাম ইউনিয়নের ফ্রেন্ডশিপের ট্যান্সজিশন ফান্ড থেকে ৩,৬০০ টাকা মূল্যের একটি ভেড়া উপহার পান এবং এই ভেড়া লালন-পালন করে এখন সর্বমোট ৪টি ভেড়া হয়েছে এবং তিনি এই ভেড়া থেকে আর্থিকভাবে অত্যন্ত লাভবান হয়েছেন এবং ভেড়াগুলো বুলবুলি বেগকে ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করেছেন যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৬,০০০ টাকা। এ
ছাড়াও বুলবুলি বেগম বসতবাড়িতে শাক-সবজির চাষ করে আর্থিকভাবে উন্নয়ন করার চেষ্টা করছে। বুলবুলি বেগম বসতবাড়িতে সবজি উৎপাদন করে সর্বমোট ৫,১০০ টাকার সবজি চাষাবাদ করেছে। কুড়িগ্রাম ইউনিয়নের আইয়ুব আলী, সুমারী বেগম, বেহুলা খাতুন ও কছিরন বেগম বসবাড়িতেই সার উৎপাদন করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতেই সার উৎপাদন করছে এবং সার বাজারে সরবারহ করে আর্থিকভাবে ব্যাপক লাভবান হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম চিলমাড়ী উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশিদুল হক জানান, চিলমারী উপজেলায় ফ্রেন্ডশিপের ট্রান্সজিশন ফান্ড প্রকল্পের মাধ্যমে ২১১ টি পরিবারকে ভেড়া উপহার দেওয়া হয়েছে এবং বর্তমানে পরিবারগুলো ভেড়া পেয়ে আর্থিকভাবে উন্নয়ন করেছে। কুড়িগ্রাম ইউনিয়নের নারীরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্প হয়ে নারীর সম্মান, বাল্য বিয়ে নিধন ও নারী শিক্ষার অগ্রধিকার সম্পর্কে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এছাড়াও বিভিন্ন সমতি তৈরী করে তারা কুড়িগ্রাম ইউনিয়নে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডও পরিচালনা করে আসছে। সমিতির মাধ্যমে তারা অর্থ সঞ্চয় করে গাবাদি পশু-পাখি ক্রয় করে থাকে। নারীরাই ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন।
সূত্র: জাগোনিউজ২৪.কম