বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (Science and Technology) একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির লালনভূমি হিসেবে বাংলাদেশ অতি প্রাচীনকাল থেকেই সুপরিচিত। মৌসুমি জলবায়ু আর উর্বর বদ্বীপীয় পাললিক ভূমিসমৃদ্ধ ভারতীয় উপমহাদেশের এ অঞ্চলে বিজ্ঞান ও ললিতকলারও বিকাশ ঘটে। আবার ভৌগোলিক সুবিধাও এ অঞ্চলের ছিল, অর্থাৎ ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশ তথা ভারতে বৈদেশিক আক্রমণের প্রচলিত পথ থেকে অনেক দূরে ছিল বাংলাদেশের অবস্থান। বিজ্ঞান শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ ‘Science ‘ যা ল্যাটিন শব্দ ‘Scio’ থেকে এসেছে,যার অর্থ জানা বা শিক্ষা করা। আভিধানিক অর্থে বিশেষ জ্ঞানই হলো বিজ্ঞান।
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। প্রয়োজনই উদ্ভবনের প্রেরনা যোগায়।
মানবজীনের অফুরন্ত সুখে গড়ে তুলার সাধনায় সদা নিয়োজিত বিজ্ঞান তার বিস্ময়কর আবিষ্কার চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। বিজ্ঞান আজ মৃত্যু কে জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান: উনিশ শতকে উদ্ভব ঘটলেও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে বিশ শতকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উল্লেখযোগ্য অবদানগুলোর মধ্যে আছে- কালাজ্বরের জীবাণু আবিষ্কার (১৯০০), সহযোগী হৃৎপি- আবিষ্কার (১৯০৮), কোলেস্টেরল (১৯১২), পেনিসিলিন (১৯২৮), রক্তরস আবিষ্কার (১৯৪০), কিডনী ডায়ালাইসিস মেশিন (১৯৪৩), ডিএনএ (১৯৫৩), পেসমেকার (১৯৫৩) ইত্যাদি। এ ছাড়াও ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, ওপেন হার্ট সার্জারি ও বাইপাসের সহযোগী যন্ত্রপাতি আবিষ্কার চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। শব্দ তরঙ্গ ও আলোকরশ্মির সাহায্যে অস্ত্রোপচার না করেই মূত্রথলি ও পিত্তকোষের পাথর চূর্ণ করা চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অভাবনীয় সাফল্য। দূরারোগ্য ঘাতক ব্যাধি এইডসএর জীবাণু আবিষ্কার (১৯৮৪), আধুনিক কন্টাক্ট লেন্স (১৯৫৬) ছাড়াও ১৯৭৮ সালে সর্বপ্রথম টেস্টটিউবের মাধ্যমে মানব শিশুর জন্ম এবং ১৯৯৭ সালে ভেড়ার দেহকোষের সাহায্যে পূর্ণাঙ্গ শিশু ভেড়া ডলির জন্মগ্রহণের মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিপ্লব ঘটিয়েছে। এতো সবের পরেও বিজ্ঞান থেমে থাকেনি বরং উত্তরোত্তর চিকিৎসা ক্ষেত্রে নানা আবিষ্কার অব্যাহত রেখেছে।
রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান: রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অনবদ্য সাফল্যের দাবিদার। রঞ্জনরশ্মি, এক্সরে, আলট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, সিটি স্ক্যান, লেজার, মাইক্রোস্কোপ প্রভৃতি যন্ত্র আবিষ্কারের ফলে রোগ নির্ণয় অনেক সহজ হয়ে গেছে। আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে যকৃত, কিডনি, পিত্তথলিসহ শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা নিরুপণ করা সম্ভব। আলোক তন্তু বা ফাইবার অপটিকস্ এর সাহায্যে ফুসফুস, পাকস্থলী, শিরা, ধমনী, বৃহদন্ত, ক্ষুদ্রান্ত্র প্রভৃতির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সঠিক রোগ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যুগান্তকারী পরিবর্তনের ফলে ক্যান্সার, টিউমার প্রভৃতি দূরারোগ্য ব্যাধি সহজেই ধরা পড়ছে, যথাসাধ্য চিকিৎসা প্রদান সম্ভব হচ্ছে। রক্ত এবং মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে।
রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞান: বিজ্ঞানের সহায়তায় রোগ প্রতিরোধেরও বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। শিশুদের আটটি মারাত্মক রোগ পোলিও, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস-বি, যক্ষ্মা, হাম, হুপিং কাশি, ডিপথেরিয়া এবং ধনুষ্টংকারের প্রতিরোধক টীকা আবিষ্কারের ফলে শিশু মৃত্যুর হার অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া বসন্ত, জরায়ু ক্যান্সার প্রভৃতি জটিল রোগের প্রতিরোধক টীকা আবিষ্কার মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে। অন্যদিকে, মাতৃত্বকালীন বিভিন্ন টীকা মাতৃ মৃত্যু হ্রাস ও নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।
রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান: চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের আর্শীবাদেই অনেক দূরারোগ্য ও জটিল রোগ থেকে মানুষ মুক্তি লাভ করছে। এমনকি অধ্যাপক কুরি ও মাদাম কুরি আবিষ্কৃত রেডিয়ামের সাহায্যে ক্যান্সারের মতো ঘাতক ব্যাধিরও চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে। আগুনে পোড়া কিংবা অ্যাসিড দগ্ধ মানুষকেও প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে স্বাভাবিক আকৃতি দেয়া সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানেরই অবদানের ফলে। অন্যদিকে দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি ঘটলেও বর্তমানে মানুষকে আর পঙ্গু হয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে না কেননা বিজ্ঞানের আর্শীবাদে মানবদেহে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযো জন করার মতো অবিশ্বাস্য কাজটিও সম্ভব হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে কোনো রোগই চিকিৎসা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে থাকবে না।
ওষুধ শিল্পে বিজ্ঞান: চিকিৎসার অপরিহার্য অঙ্গ হলো ওষুধ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলেই পেনিসিলিনের মতো মহৌষধ আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়াও জ্বর, কাশি, সর্দি, মাথাব্যাথা, গ্যাসট্রিক প্রভৃতি সাধারণ অসুখ-বিসুখের জন্যেও নানা ধরণের ওষুধ আবিষ্কার করেছে বিজ্ঞান। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের ওষুধ আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে। ওষুধ আবিষ্কারে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে অনেক জটিল রোগে অস্ত্রোপচার না করে কেবল ওষুধের মাধ্যমে রোগ নিরাময় করা যাচ্ছে। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় covid-19 এর পক্ষে লড়াই করে যাচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
ভ্যাকসিন আবিষ্কার এর জন্য বিজ্ঞান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।