চড়ুই পাখির সংসার
পার্টঃ-০২
সাদিয়া ভাবীর দেওয়া নুডুলস খেয়ে সামীর পেটের বারোটা বেজে গেছে ৷বারবার টয়লেটে যেতে যেতে সামীর বেহাল দশা ৷ সামীর চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে কতদিন থেকে যেন অসুস্থ্য বিছানায় হয়ে বিছানায় পড়ে ছিল ৷
বিকাল বেলা জাহিদ ফোন করেছিল কিন্তু সামী টয়লেটে থাকার কারণে কল রিসিভ করতে পারেনি ৷
সামী মন মরা হয়ে বিছানায় বসে অাছে ৷
সামীর মা বাবা দুজনেই চাকুরী করে ৷ রাতে দুজনেই অফিস থেকে ফিরেছে ৷
সামীর মা ছেলের খোঁজ করার জন্য সামীর রুমের দরজায় নক করে ৷
ভিতর থেকে সামীর দরজা খুলে দেয় ৷
সামীর মা জানতে চায় দুপুরে খাওয়া করেছে কিনা ৷
সামীর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয় ৷
সামীর মা রুম থেকে চলে যায় ৷
সামী বিছানার উপর বসেই থাকে ৷ অার ভাবতে থাকে সাদিয়া ভাবীর রুমে গিয়ে নুডুলস খাওয়া তার মোটেও ঠিক হয়নি ৷
সামী মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে এই জীবনে অার সাদিয়া ভাবীর দেওয়া কিচ্ছু খাবে না ৷ এমন কি কারো বাসায় দাওয়াত খাবে না ৷
দাওয়াত জিনিষটা তার জন্য না ৷
সামীর রুম থেকে বের হয়ে দোকানে যাবে স্যালাইন কেনার জন্য ৷
সবে মাত্র দরজা খুলে বাইরে বের হয়েছে ঠিক তখনই সাদিয়া ভাবীর সাথে দেখা ৷
_কি ব্যাপার সামী সেই যে নুডুলস খেয়ে গেলে অার দেখতে পেলাম না যে ? এতোক্ষন কোথায় ছিলে বলো তো ?
সাদিয়া ভাবীর কথা গুলো সামীর কাছে কেমন জানি টকটক লাগছিল ৷ তবুও সম্মান দেখানোর জন্য সামী মুচকি হেসে জবাব দিলো ,,,,,, ভাবী নুডুলস খাওয়া বেশী হয়েছিল তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ৷
সাদিয়া ইসলাম চকচকে দাঁত বের করে হেসে বলে ,,,,,,,,,, মনে হচ্ছে এমন স্বাদের নুডুলস কখনো খাওনি ?
_হুম ভাবী ঠিক ধরেছেন ৷ অাসলে কি জানেন অাপনার হাতের রাঁন্না করা নুডুলস অন্যরকম টেস্ট হয়েছিল ৷
মা রাঁন্না করলে এমন হয় না ৷
_সামী তুমি কিন্তু একটু বাড়িয়ে বলছো ৷ অামি অান্টির হাতের রাঁন্না খেয়েছি ৷ অামার চেয়ে অান্টি শত গুনে ভালো রাঁন্না করে ৷
_হুম ৷ কিন্তু অাপনার হাতে যাদু অাছে হয়তো ,নইলে এতো সুস্বাদু রাঁন্না করেন কিভাবে ?
_হয়েছে হয়েছে অার পটানোর চেষ্টা করো না ৷ কোথায় যাচ্ছো সেটা বলো ?
_একটু বাইরে যাবো ৷
_এখন বাইরে কেন ?
_বাইরের ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখার জন্য ৷
_ও অাচ্ছা ! অাংকেল অান্টি অফিস থেকে ফিরেছে ?
_হুম ৷
_যাই অান্টির সাথে একটু গল্প করে অাসি ৷
_অাচ্ছা যান ৷
_তুমি বাইরে থেকে ফিরলে অামার দরজায় নক কইরো তো ৷
_কেন ভাবী ?
_একটু কাজ অাছে ৷
_অাচ্ছা ঠিক অাছে ?
সামী বাইরে চলে যায় ৷ বাসার সামনের দোকানে গিয়ে ফোনে রিচার্জ করে জাহিদকে কল দেয় ৷
সাদিয়া ভাবীর নুডুলস খেয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা জাহিদকে বলে ৷
জাহিদ সামীর মনে একটি ভয় ঢুকিয়ে দেয় ৷ (যদিও সেটা জাহিদের মনের ধারণা )
যে সাদিয়া ভাবী নুডুলসে কিছু মিশিয়ে দিয়েছে সামীকে নিজের বশে অানার জন্য ৷
জাহিদের কথা শুনে সামীর অাত্মা কেঁপে উঠে ৷ মনের ভিতর ভয়ের বাসা বাঁধে ৷
সামী ফিরে যায় ছয় মাস অাগে ঘটে যাওয়া সাদিয়া ভাবী অার অাতিক ভাইয়ের লজ্জাজনক ঘটনার কথা ৷
তাছাড়া প্রায়ই সাদিয়া ভাবী এখন অাতিক ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হয় ৷ অাতিক ভাই সাদিয়া ভাবীকে ইচ্ছা মতো মাইর দেয় ৷
এসব কথা কেউ না জানলে সামী ভালো জানে ৷ এই স্বার্থপর শহরে কেউ কারো খোঁজ খবর রাখে না ৷ সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকে ৷ কে কি করলো না করলো সেটা খোঁজ রাখার দরকার কারো হয় না ৷
এমনটা তো নয় সাদিয়া ভাবী অাতিক ভাইয়ের কাছে থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অামাকে ওনার জালে বেঁধে ফেলতে চেষ্টা করছে ?
সামী জাহিদের সাথে কথা শেষ করে বাসায় ফিরে অাসে ৷
রুমের ভিতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভাবতে থাকে ৷ অাজকাল এই শহর জুড়ে নানান রকমের ঘটনা ঘটছে ৷ মানুষ অার মানুষ জাতে নেই , মানুষ হয়েছে গেছে বহুরুপী ৷ নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য মানুষ সব কিছু করতে পারে ৷
দেশের অবস্থা মোটেও ভালো না ৷ দিন দিন অপরাধ বেড়েই যাচ্ছে ৷ না জানি কবে অামি অপরাধী হয়ে পড়ি ৷
এমন চিন্তা ভাবনা সামীকে ঘিরে ফেলেছে ৷
সামীর মাথার ভিতর টং টং অাওয়াজ হচ্ছে ৷ মনে হচ্ছে কেউ তার মাথায় হাতুরী দিয়ে পেটাচ্ছে ৷
সামী রুম থেকে বের হয়ে ওর মায়ের রুমে যায় ৷ গিয়ে দেখে ওর বাবা বিছানায় বসে টিভি দেখছে ৷
সামীকে দেখে ওর বাবা টিভি থেকে চোখ ফিরিয়ে সামীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ,,,,,,,,,,,,
কি ব্যাপার রাজপুত্র কি খবর ?
—এই তো ভালো ৷
_কিছু বলবে ?
_না অাব্বা ৷
_ওহ ৷
_মা কোথায় ?
_কিচেনে ৷
অামি মায়ের কাছে গেলাম ৷
_অাচ্ছা যাও ৷
সামী কিচেনে গিয়ে দেখে ওর মা নেই ৷ সাদিয়া ভাবী রাঁন্না করতেছে ৷
_কি ব্যাপার ভাবী অাপনি রাঁন্না করছেন কেন ?
সাদিয়া ইসলাম মুচকি হেসে জবাব দেয় ,,,,,,, কেন অামি রাঁন্না করতে পারিনা বুঝি ?
_হুম পারেন ৷ অবশ্যই পারেন ৷ কিন্তু মা কোথায় ?
_অামি অান্টিকে রেষ্ট করতে বলেছি ৷ উনি সারাদিন অফিসে অনেক কাজ করেছে ৷ এখন এসে বাসায় রাঁন্না চরবে খুব কষ্ট হয় অান্টির ৷
_কাজ করলে তো কষ্ট হবেই তাই না ? অাব্বা তো মাকে চাকুরী করতে দিবে না তারপরও মা নিজে থেকে চাকুরী করে ৷
_চাইলে তুমি কিন্তু রাঁন্নায় অান্টিকে হেল্প করতে পারো ৷
_অামি অাবার কি হেল্প করবো ? অামি তো রাঁন্না করতে পারিনা ৷
_অামি তোমাকে রাঁন্না করা শিখিয়ে দিবো ৷
এবার সামীর মনে সন্দেহ ঢুকে গেল ৷ এর অাগে কখনো সাদিয়া ভাবী এমন কথা বলেনি ৷ তাছাড়া অামার সাথে এভাবে খুব কাছাকাছি এসে কথাও বলেনি ৷
মাঝে মাঝে ছুটির দিন কথা হতো ৷ তবুও সেটা হাই, হ্যালো ভালো ,মন্দ জিজ্ঞেস করা ছাড়া অন্যকিছু বলা হতো না ৷
_কি হলো সামী চুপ করে অাছো যে ?
_নাহ এমনিতেই ৷
_কিছু ভাবছো নাকি ?
_না ভাবী ৷ কিছু ভাবছি না ৷
_জানো সামী অামি চাকুরীটা ছেড়ে দিবো ৷ অার চাকুরী করতে ইচ্ছা করছেনা ৷ অনেক দিন চাকুরী করলাম এবার একটু ছুটি নেই ৷
_কেন ভাবী হঠাৎ চাকুরী ছাড়ার কারণ কি ?
_তেমন কোনো কারণ নেই ৷ মনটা ভীষণ খারাপ তাই কিছু দিন ছুটি কাটাবো ৷ তারপর ভালো লাগলে অাবার নতুন কোনো কোম্পানীতে চাকুরী নিবো ৷
_বাহ ভালো অাইডিয়া তো ৷
অাতিক ভাইয়া চাকুরী ছেড়ে দিতে দিবে তো ?
_কেন দিবে না ৷ অামি চাকুরী না করলে জোর করে চাকুরী করাবে নাকি ?
—কি জানি ৷ অাপনার বিষয় নিয়ে নাক গলাতে চাই না ৷ অাপনার যা ইচ্ছা তাই করেন ৷
_সামী শোনো ?
_জ্বী ভাবী বলেন ৷
_রাঁন্না তো শেষ অান্টিকে ডেকে অানো তো ৷
সামী ওর মাকে ডাকতে যায় ৷ সাদিয়া ইসলাম কিচেনের সব জিনিষপত্র সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে ৷
সামী এবং ওর মা কিচেনে হাজির হয় ৷
_অান্টি অাপনার রাঁন্না শেষ ৷ এখন খাওয়ার পালা ৷ অাপনারা খাওয়া দাওয়া শুরু করেন অামি তাহলে যাই ৷ একটু পর ও অাসবে ৷
সামীর মা বলে ,,,,,,,, যাই মানে ?
তুমি রাঁন্না করলে অার তুমিই খাবে না এমনটা তো হতে দিবো না ৷ অাজ তুমি অামাদের সাথে ডিনার করবে ৷
_না অান্টি অাজকে পারবো না ৷ ও না অাসা অব্দি অামি ডিনার করবো না ৷
_অাতিক কখন অাসবে ?
_এই তো অাসার সময় হয়ে গেছে ৷
_অাচ্ছা যাও তাহলে ৷ মনে রেখো তোমার জন্য অামাদের রুমের দরজা খোলা ৷
সাদিয়া ইসলাম চকচকে দাঁত বের করে হেসে জবাব দেয় ,,,,,,,, জানি অান্টি ৷ এজন্যই তো অাপনাদেরকে অামার খুব অাপন অাপন মনে হয় ৷
সাদিয়া ইসলামের কথা শুনে সামীর মনে অারো ভয় জন্মে যায় ৷ সামী মনে মনে ভাবে সাদিয়া ভাবী কি প্ল্যান করছে কে জানে ? অবশেষে সামীর মান সম্মান হারাবে না তো ?
সাদিয়া ইসলামের হাসিটা কেমন জানি বাংলা সিনেমার রিনা খানের মতো লাগছে ৷
অাগে তো খুব চমৎকার লাগতো ৷ কিন্তু এখন মোটেও ভালো লাগছেনা সামীর ৷
_অান্টি অাপনি এতো কষ্ট না করে ছেলের বিয়ে দিতে পারেন ৷ অাপনার বয়স হয়েছে এখন তো একটু অারাম করেন ?
সাদিয়া ইসলামের কথা শুনে সামীর মা হেসে বলে ,,,,,,,,,,কি যে বলো না সাদিয়া ৷ সামী তো সবেমাত্র ক্লাস টেনে পড়ে ৷ ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে ? তাছাড়া ওর বাবার অনেক দিনের ইচ্ছা ওকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে ৷
সাদিয়া ইসলামের মুখে বিয়ের কথা শুনে সামী অবাক হয়ে যায় ৷ সামী মনে মনে ভাবে বয়সে বড় না হলে সাদিয়া ভাবীর সাথে অাজ ঝগড়া বেঁধে দিতো ৷ ভাগ্যিস অাজ মা অাছে ৷
_মা চলো তো অামার খুব ক্ষিদা লেগেছে ৷
—বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেলে নাকি সামী ? (হাসতে হাসতে সাদিয়া ইসলাম বললো )
সামী কিছু না বলে কিচেন থেকে বের হয়ে যায় ৷
সামীর মা এবং সাদিয়া দুজনে একসাথে ডাইনিং রুমে যায় ৷
সাদিয়া ইসলাম সামীর মায়ের কাছে বিদায় নেয় ৷
সাদিয়া ইসলাম দরজা খুলে রুমের ভিতর ঢুকে সোজা ওয়াশ রুমে যায় ৷
ফ্রেশ হয় রুমে অাসে ৷
অায়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সাঁজুগুজু করতে ব্যস্ত হয় ৷
হয়তো একটু পরেই প্রাণের প্রিয় মানুষটি অফিস থেকে ফিরবে ৷
ভালোবাসার মানুষটির জন্য একটু সাঁজুগুজু না করলে কেমন হয় !
সাদিয়া ইসলাম তার মাথার লম্বা চুল গুলোকে দুটি বেনী বাঁধে ৷ ঠোঁটে লাল লিপস্টিক ,হাতে কাঁচের চুড়ি এবং জলপাই রঙের শাড়ি পরে রাজকন্যার মতো সাঁজে ৷
ভালোবাসার মানুষটার জন্য এক গ্লাস শরবত বানিয়ে রেখে টিভি অন করে সিরিয়াল দেখতে শুরু করে সাদিয়া ইসলাম ৷
চলবে ,,,