আসসালামু আলাইকুম,! সবাই কেমন আছেন আশা করি সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্কে বলব:
শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। বলা যায় পৃথিবীর সবচাইতে সম্মান ও মর্যাদার পেশা হলো শিক্ষকতা। শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। কিন্তু ইট, বালু, সিমেন্ট নিয়ে যত সহজে দালান কোঠা পড়া যায়, একজন প্রকত মানুষ গড়ে তোলা বোধ হয়। একজন কারিগর অত্যন্ত যত্ন, আন্তরিকতা ও ধৈর্যের সাথে তার জিনিসটি তৈরী করেন। তেমনি একজন শিক্ষককেও ছাত্রদের মন মেজাজ, পছন্দ-অপছন্দ ও গ্রহণ করার ক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে অত্যন্ত যত্ন, আন্তরিকতা ও ধৈর্যের সাথে তার কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। তবেই তিনি প্রকৃত শিক্ষক হিসেবে পরিগণিত হতে পারেন।।
ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ? শিক্ষকের নিকট ছাত্র যেমন হবে সন্তানতুলা তেমনি হারের কাছেও শিক্ষক হবেন পিত বা মাত তুল্য। যেখানে থাকবে শাসন এবং সোহাগের সংমিশ্রন। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ। সেই শিক্ষকই এই সম্পর্ক গড়তে পারেন যার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীর জন্য সহানুভূতি থাকে, তাদের পছন্দ-অপছন্দ বুঝতে পারেন এবং যত্ন ও ধৈর্য নিয়ে তাদের শক্তিকে বাড়াতে এবং সীমাবদ্ধতাকে শক্তিতে রূপান্তর করতে পারেন। শাসন যখন একজন বন্ধুর কাছ থেকে আসে তখন সেটা শাসন থাকে না।
আমাদের দেশের মানুষের মানসিক বিকাশ বিষয়ে সচেতনতা কম। আমরা সন্তান এবং নিজের ভবিষ্যত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিন্তায় যতটা সময় ব্যয় করি তার এক তৃতীয়াংশ ও বায় করিনা তার মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার ভাবনা ভেবে। আমরা ধরেই নেই যে বাচ্চারা স্বাভাবিক ভাবেই মানসিক ভাবে সুস্থ হয়ে বড় হবে। সন্তানের সঠিক বিকাশে পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের পরেই বড় ভূমিকা রাখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একজন শিক্ষক শত-সহস্র শিশু কিশোরের মানসিক বিকাশে সরাসরি ভূমিকা পালন করে থাকেন।
কয়েক বছর আগেও শিক্ষকদের কাছে কোন শিক্ষার্থী তাদের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলতে দ্বিধা বোধ করত। অথচ বলতে চাইত। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের চিন্তা ভাবনারও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন তারা শিক্ষকদের কাছে আসছে; সমস্যার কথা বলছে, সাহায্য চাইছে। আশা করা যায় আমরা শিক্ষকরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গায় থেকে প্রতিটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক অস্থিরতা কমিয়ে, নানা রকম সমস্যার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে পড়া লেখায় মনোযোগী করতে পারব এবং তাদের জীবনেও আনতে পারব ইতিবাচক পরিবর্তন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি শিক্ষক সঠিক দিক নির্দেশনার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের নানা সমস্যার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে কাউন্সেলিং করে অনায়াসে তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন।
বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নানাবিধ মানসিক সমস্যা দেখা যায় যেমন-পড়ালেখার প্রতি অমনোযোগীতা, স্কুল পালানো, পিতা-মাতার সাথে দ্বন্দ্ব, সহপাঠীদের সাথে দ্বন্দ্ব, কাঙ্খিত ফলাফল করতে না পারার কারনে হতাশাগ্রস্থ হওয়া, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত মোবাইল নির্ভরতা, আচরনগত বৈকল্য ইত্যাদি। শিক্ষকগণ তাদের শিক্ষার্থীদের সমস্যার ধরন অনুধাবন করে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করতে পারেন।
অনেক শিক্ষার্থীর জীবনের শুরুতে অনেক সমস্যা থাকে যেমন দারিদ্রতা, পারিবারিক ভাঙ্গন, নেতিবাচক আবেগ, শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা ইত্যাদি। শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীদের এসব দ্বন্দ্ব নিরাময় করতে চেষ্টা করেন, সাহস এবং উৎসাহ দিয়ে তাদের মধ্যে আশা পারেন তবে একসময় তারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে এবং এই শিক্ষার্থী তাঁকে আজীবন ভালবাসবে এবং শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে রাখবে।
ছাত্র-ছাত্রীদেরও মনে রাখতে হবে পরিবারের বাইরে যদি কেউ আপনজন হতে পারেন, তো তিনি তার শিক্ষক। যে শিক্ষকের সংগে তার সম্পর্ক সবচেয়ে সুন্দর, তিনি মা-বাবার বিকল্প হতে পারেন। জীবনের স্বাভাবিক সমস্যগুলোকে সহজভাবে গ্রহণ করতে হবে এবং সেগুলো সমাধানের জন্য বিভিন্ন উপায়ের মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপটি গ্রহনের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে। নিজেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত রাখতে হবে, নিজের মস্তিষ্ককে সব সময় সচল রাখতে হবে। সমস্যা হলে মা-বাবা, শিক্ষক, বন্ধুরা থাকে বিশ্বস্ত মনে হলে তাকে বলতে হবে অথবা পেশাগত কোন কাউন্সেলের পরামর্শও নেওয়া যেতে পারে।
প্রকৃতিপক্ষে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যদি তার জীবনের স্বাভাবিক সমস্যা ও কষ্টগুলো সম্পর্কে সঠিক
দিক-নির্দেশনা পায় তাহলে সে অযথাই তার জীবনের সমস্যাগুলোকে বড় করে দেখবেনা। আর সেটা
সমাধানের জন্য অস্থির হয়ে যে কোন উপায় গ্রহণ করবে না। এক্ষেত্রে মা-বাবা এবং শিক্ষক সঠিক দিক
নির্দেশক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে মা-বাবারও উচিত ছেলে-মেয়ের
সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা যাতে তাদের সন্তানরা কোন সমস্যায় পড়লে তাদেরকে জানাতে পারে।
শিক্ষক হওয়ার আনন্দই আলাদা। কারন সারা পৃথিবীতে তার ছাত্ররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যেখানেই যাওয়া যাক সেখানেই তাদের সাথে দেখা যায়। তাদের আনন্দমাখা মুখ দেখে এবং ভক্তি-শ্রদ্ধা পেয়ে শিক্ষকের মন আনন্দে ভরে উঠে। তাই ছাত্র জীবনে প্রত্যেকের উচিত শিক্ষকের সাথে শ্রদ্ধাচিত্তে কথা বলা। খেয়াল রাখতে হবে তার আচরনে শিক্ষকখন যাতে বিরক্ত না হন এবং সহপাঠীর মনে আঘাত না লাগে। ছাত্র জীবনে যে ছাত্রটি গুরুজনকে শ্রদ্ধা করতে শিখল না, যার উদ্ধত আচরনে শিক্ষক বিরক্ত, যার অমার্জিত ব্যবহারে সহপাঠীরা ক্ষুব্ধ ও আহত পরবর্তী জীবনেও তার চরিত্রে একই ধরনের আচরন দেখা যাবে যা তার জীবনকে বিপদগ্রস্থ করতে পারে। ছাত্রদের সার্বিক কল্যান কামনায় শিক্ষকগন যেভাবে ত্যাগের পরিচয় দেন, তার জন্য শিক্ষকগনকে যথাযথ সম্মান করা প্রতিটি ছাত্রের অবশ্যই কর্তব্য। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকের যেমন ভূমিকা রয়েছে তেমনি ছাত্রদেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ছাত্রকে বিনয়, নম্রতা ও বিশ্বস্ততার সাথে শিক্ষকের নিকট তার সমস্যাগুলো তুলে ধরতে হবে যাতে শিক্ষক তার শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরনকে অনুভব করতে পারেন। একজন শিক্ষক স্নেহ করতে পারলে শাসনও করতে পারেন। তবে সে শাসন শরীর বা মনকে কষ্ট দিয়ে নয়। সেটা হবে তার অক্ষমতা সীমাবদ্ধতাকে বুঝিয়ে দেয়া। সেটা যদি তিনি করতে পারেন তাহলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হয়ে উঠবে একেবারে বন্ধুর মত। অনেক শিক্ষকই শিক্ষা দান করে থাকেন। কিন্তু ছাত্ররা মনে রাখে ২/১ জনকেই। বস্তুত ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হবে সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ, যেখানে থাকবে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, স্নেহ ও ভালবাসা।
ভালো লাগলে শেয়ার করুন
জাজাকাল্লাহ