মানুষ জীবনকে উপভোগ করতে চায়, চায় আনন্দমুখর করতে। খেলাধুলা মানব জীবনে আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে অত্যন্ত সহায়ক। খেলাধুলা বিনোদনের উওম মাধ্যম। জাতীয় জীবনে বিনোদন হিসেবে খেলাধুলার কোন বিকল্প নেই।এর প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তি থেকে জাতীয় পর্যায়ে পর্যন্ত সমভাবে গুরুত্বপূর্ন
সুপ্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে সুস্থদেহী,সবল ও কর্মক্ষম করে রাখার জন্যে বিভিন্ন খেলার প্রচলন ছিল। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩০০০ বছর আগে প্রাচীন মিশরের খেলা ছিল ডালকুকুর নিয়ে শিকার। কুস্তি খেলার প্রথম সূচনা হয়। ইরাকে ৪০০০ বছরেরও বেশি আগে। খ্রিস্টপূর্ব ২০৫০ সনে মিশরে শুরু হয় হকি খেলা। এছাড়া মুষ্ঠিযুদ্ধ,অসিযুদ্ধ,দৌড়-ঝাপ ইত্যাদি ইতিহাসের সূচনাও প্রায় ৪০০০ বছর আগে। প্রাচীনকালে বিভিন্ন দেশে শারীরিক সামর্থ্য পরীক্ষার জন্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজিত হত।খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ২৫০ বছর আগে প্রাচীন রোমে ক্রীড়া হিসেবে মল্লযুদ্ধ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আসিরিয়া ও মিশরের স্হাপত্য থেকে জানা যায়, সেকালের তীর চালনা খেলার কথা। খেলাধুলার ইতিহাসে অনন্য ঘটনা খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে প্রাচীন গ্রীসে অলিম্পিক খেলার সূএপাত হয়। সেই বিশাল প্রতিযোগিতায় গ্রিসের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াকুশলীরা দৌড়, ঝাপ,মল্লযুদ্ধ,চাকতি নিক্ষেপ বর্শা ছোড়া, মুষ্ঠিযুদ্ধ ইত্যাদি প্রতিযোগিতায় অংশ নিত।এভাবে অতি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের জীবনে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা স্বীকুতি পেয়ে এসেছে।
আবার খেলাধুলা সাধারনত দু’ধরনের। একটি হচ্ছে ঘরোয়া খেলাধুলা এবং অপরটি হচ্ছে বহির্জগতের খেলাধুলা। এ দু’শ্রেনীর খেলার মাঝে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক খেলাও হতে পারে।আমাদের দেশীয় খেলার মধ্যে হা – ডু- ডু অথবা কাবাডি,কানামাছি,বৌছি,গোল্লাছুট ইত্যাদি প্রধান।আন্তর্জাতিক খেলার মাঝে রয়েছে ফুটবল,ক্রিকেট,হকি,টেনিস,দাবা,ব্যাডমিন্টন, বলিভল ইত্যাদি। জাতীয় জীবনে দেশীয় এবং অান্তর্জাতিক এ দু’প্রকার খেলাই অাবশ্যক।
খেলাধুলা মানুষকে নিয়মানুবর্তী ও চরিএ গঠনে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে। খেলার মাঠে খেলােয়াড়দেরকে অবশ্যই মাঠ কর্তৃপক্ষ ও রেফারির সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়।এছাড়া পরিমিত খেলাধুলা মানুষের মনকে সুন্দর ও প্রফুল্ল রেখে চরিএ গঠনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে। খেলাধুলার প্রেক্ষিতে পরোক্ষভাবে হলেও গোটা মানব সভ্যতার চরিএ সুন্দর ও বিকশিত হয়।
জীবন গঠনের সূচনায় সব প্রানীর ক্ষেএেই খেলাধুলা শিক্ষার উপায়। ছাএছাএীদের বিদ্যাশিক্ষাকে চিওাকর্ষক করতে এবং পাঠ্য বিষয়ের প্রচন্ড চাপ লাগব করতে শিক্ষার সাথে সাথে খেলাধুলাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।খেলার ছলে শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার নিয়মও আজকাল অনেক স্কুলে দেখা যায়।যেমন বলা যায় বার্লিনের একটি স্কুলের কথা।সেখানে হয়তো ক্লাস করতে করতে শিক্ষাকা হঠ্যৎ করে ছাএছাএীদের ব্যায়াম করার নির্দেশ দিলেন। এতে অঙ্ক কষায় ছাএছাএীদের একঘেয়েমি কেটে যায়। আজকাল ছাএছাএীদের খেলাধুলায় উৎসাহী করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
সারা বিশ্বের প্রগতিশীল সকল রাষ্টের খেলাধুলা জাতীয় উন্নতির কর্মপ্রেরনার শক্তি হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।জাপানের কলকারখানায় কাজ শুরু করার আগে হাজার হাজার কর্মী খোলা মাঠে ১৫ মিনিট খালী হাতে ব্যায়াম করেন। জার্মানরা প্রতি পাঁচ জনের অন্তত একজন কোন না কোন ক্রীড়া সংস্হার সক্রিয় সদস্য। একসময় চীনারা ছিল পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে রোগগ্রস্ত জাতি। কিন্তু গনপ্রজাতন্তী চীনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে চৈনিকরা খেলাধুলাকে সুস্বাস্হ্য গঠনের পথ হিসেবে বেছে নিয়ে সেই বদনাম কেবল ঘোড়ায় নি,খর্বতা সও্বেও সোনা জিতেছে। অনেক ক্ষেএে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করেছে বিশ্বক্রীড়ায়। বিশ্বের সকল উন্নত রাষ্টেই এখন খেলাধুলাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়।বিভিন্ন ধরনের নেশা ও ধূমপান প্রতিরোধের জন্যেও এখন খেলাধুলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিশ্ব সম্প্রদায়। এক কথায় সারা বিশ্বের সকল উন্নত – অনুন্নত রাষ্টের এখন খেলাধুলার গুরুত্ব স্বীকৃত।
আর তাই ক্রীড়াই জাতির শক্তি। জাতির সুস্হতা, জাতির আন্তর্জাতিক পরিচিত এবং জাতির আনন্দের উৎস খেলাধুলায় নিহিত। তাই সর্বস্তরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে যেমনি সুস্হ সবল জাতি গড়ে উঠবে,তেমনি জাতির উন্নতিও হবে ত্বরান্বিত। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে খেলা হোক নির্মল, খেলা হোক শুদ্ধ।খেলার মাধ্যমে গড়ে উঠুক একটি সুখী সুন্দর ও সমৃদ্ধ জাতি।