আমাদের মধ্যে হয়তোবা অনেকেই এমন আছে যারা সাধারণত উন্নত মেধার কিংবা উন্নত বৈশিষ্ট্যের অধিকারী । তবে এর সংখ্যাও ঠিক ততটা বেশি নয়। কিন্তু কখনো কি চিন্তা করেছ কেমন হয় যদি মানুষ জন্ম হওয়ার পূর্বেই তার জেনেটিক কোডগুলো পরিবর্তন করা যায়!আসলে এটিকে বলা হয় “ডিজাইন শিশু”।তবে এ পদ্ধতিটা টেস্ট টিউব বেবি (IVF) এর সাথে সমন্বয় করার চিন্তা রয়েছে। এ ডিজাইন শিশু এর জন্য প্রয়োজন জিনোম সিকুয়েন্স ।
জিব্রা ফিশের রংয়ের জন্য দায়ী জিন এবং সেগুলোর সাথে সম্পর্কিত মানব জিনসমূহ নিরূপণ করা হয়েছে!শুধু তাই নয় এমন একটি মাইক্রোচিপ আবিষ্কার করা হয়েছে যেটিতে কিনা প্রায় ১৫০০’এর মতো জেনেটিক বৈশিষ্ট্য একসাথে নিরূপণ করা যায়। তবে এ ডিজাইন শিশু এর ধারণাটি উন্নত এবং অভীষ্ট সন্তানের অভিপ্রায়ে ভবিষ্যতের জন্য কল্পিত একটি প্রযুক্তি!কিন্তু এ প্রযুক্তির ধারণা কখন শুরু হয়!!তাহলে একটু ইতিহাসটা দেখা যাক!
ইউজেনিক্স কথাটার অর্থ উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানব সম্প্রদায় সৃষ্টিকরণ,কথাটা শোনার সাথে সাথে শিহরিত হচ্ছো তাই না!!আমরা অনেকেই জানি হিটলার কর্তৃক হত্যা যজ্ঞের কথা, এটির মূল উদ্দেশ্য ছিল নিঁখাদ আর্য জাতিভুক্ত জার্মান জাতি (white, blond-haired, blue -eyed master Nordic race) ব্যতীত অন্য জাত সম্প্রদায়ের নির্মূল। যদিও এ মতবাদটি হিটলার এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় শুরু হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই ক্যালিফোর্নিয়া হয়ে উঠে ইউজেনিক্স এর মূল কেন্দ্র বিন্দু। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেই ইউজেনিক্স চর্চাকারিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৬০,০০০ লোককে বন্ধ্যাত্ব বরণ করায়!এছাড়াও বিয়েও নিষেধ করা হয়!এমনকি মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ও একই মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠে!মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি “অলিভার ওয়েল হোমস” লিখেন->
“It is better for the entire world, if instead of waiting to execute degenerate offspring for crime,or to late them starve for their imbecility, society can prevent those who are manifestly unfit from continuing their kind…….Three generations of imbeciles are enough “.
জাতিগত পরিশুদ্ধতার নামে দেওয়া এ বক্তব্য হাজার হাজার মানুষের উপর হয়ে উঠে নির্যাতনের হাতিয়ার। এই ঘটনাকে পরবর্তীতে গণহত্যার হিসেবে বিবেচনা করে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তবুও এটি থেমে থাকে নি!তাহলে কীভাবে চলছে এটি বর্তমান বিশ্বে।”উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানব সম্প্রদায় সৃষ্টির (Improvement of human race) ধারণাটি মূলত চার্লস ডারউইনের সর্বোত্তম বেঁচে থাকার অধিকার (Survival for the fitttest) বিষয়ক মতবাদের উপর ভিত্তি করে পশ্চিমা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজ হতে দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষ, পাগল,বধির,অন্ধ ইত্যাদির বংশবৃদ্ধি বন্ধ করা।”
এই ইউজেনিক্স প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যের উন্নতি সাধন এবং বংশগত রোগ দূরীকরণ ।
অনেকক্ষণ ত হলো ইউজেনিক্স, টেস্ট টিউব বেবি , ডিজাইন শিশু নিয়ে কথা তাহলে এখন চলো আরেকটি মজার টপিক এ প্রবেশ করি!”জিন এখন পেটেন্টিং হচ্ছে! “এই পেটেন্ট হলো একধরনের মেধাস্বত্ব। জেনেটিকেলি মডিফাইড করে অনেক নতুন আবিষ্কার ও সম্ভব হয়ে যেটি আমাদের জানার বাহিরে নয়! জি এম শস্য এর একটি উদাহরণ । জিন পেটেন্টিং দিয়ে কি হয় তার একটি বাস্তব উদাহরণ এর সাথে পরিচিত হওয়া যাক!
” আফ্রিকার মালেতে ধানের একটি বুনো প্রজাতি “Orayza longistaminata” এর সন্ধান পাওয়া গেছে । ভারতের একজন বিজ্ঞানী আর সি চৌধুরী এ প্রজাতির মধ্যে প্রথম ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইট রোগের প্রতিরোধী জিন, Xa21 শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এ জিনটি পরবর্তীতে Oryza sativa তে স্থানান্তর করতে সক্ষম হওয়া যায়। এখন এ জিনটির ব্যবহার পেটেন্টধারি ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ করছে! অথচ এ জিনটি কিনা নেয়া হয়ে ছিল এক বুনো প্রজাতির ধান থেকে!!”
বলা হয়ে থাকে জিন কিংবা জেনেটিক কোড এমন একটি অকল্পনীয় কম্পিউটার প্রোগ্রাম যার কাছে কিনা পৃথিবীর সকল সফটওয়্যারই নগন্য।