বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?আশা করি ভালই আছেন।আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম একটি ভিন্নধর্মী পোষ্ট।সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের উপজাতি চাকমাদের জীবনধারা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৃহত্তম অংশই হলো চাকমা।প্রাচীন চম্পক নগরের বাসিন্দা হওয়ার কারনে এই জনগোষ্ঠী চাকমা নামে পরিচিত।চাকমাদের মধ্যে অনেকে মনে করে তারা এক সময় চম্পক নগরের বাসিন্দা ছিল।চম্পক নগরীর অবস্থান সম্পর্কে কেউ কেউ বলে উত্তর-পশ্চিম ভারতে,উত্তর-পূর্ব ভারতে,হিমালয়ের পাদদেশে,আবার কেউ কেউ বলে চম্পক নগরীর অবস্থান মালয়েশিয়ায়।বাংলাদেশে এদের বেশির ভাগই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস করে।চাকমাদের পরিবার পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়।পারিবারিক ক্ষমতা পুরুষের হাতেই ন্যস্ত থাকে।পিতার বংশ অনুযায়ী সন্তানের পরিচয় নির্ধারিত হয়।এবং বিয়ের পর স্ত্রী স্বামীর গোষ্টীর আওতাভুক্ত হয়।চাকমারা বোদ্ধ ধর্মের অধিকারী।তবে কিছু সংখ্যক চাকমা হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী।বিশ্বাস অনুসারে বুদ্ধ পূজার অনুসারে তারা ধর্মকাম,তাতদ্যা,থানমানা,জুমমারা প্রভৃতি অনুষ্ঠান করে থাকে।এদের প্রধান উৎসব হচ্ছে বিজু ও মর্দারের পানাথার।বৈশাখী পূর্ণিমা ও মাঘী পূর্ণিমা জমকালোভাবে পালনের পাশাপাশি বিজু উৎসবটি সগৌরবে পালন করে থাকে।চাকমা সম্প্রদায়ে একক বিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন আছে।বিবাহে অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন হয়।চাকমারা সাধারণত মাটি থেকে ছয় ফুট উচ্চতায় মাচার উপর ঘর তৈরি করে।তারা ঘরে উঠার জন্য মই ব্যবহার করে থাকে।চাকমাদের দেহে ৮৪.৫ ভাগ মঙ্গলীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।এদের গায়ের রঙ সুন্দর ও ঠোঁট পাতলা।চুলের রঙ কালো ও অনেকটা সোজা।মুখমন্ডল গোলাকার এবং দেহ প্রায় কেশহীন।চোখের মনি কালো রঙ্গয়ের হয়ে থাকে।পুরুষের উচ্চতা গড়ে ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি ও মহিলাদের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে। থেকে চাকমা পুরুষরা ধূতি,লুংগি,কোট,খাগং,গামছাকাটিন পরিধান করে থাকে।মেয়েরা খাদি,পিনান,শাড়ি ইত্যাদি পরিধান করে থাকে।চাকমারা হাডুডু,লাটিম,রশি টানা,ফার খেলা,সাতার প্রভৃতি খেলাধুলায় অভ্যস্ত।চাকমাদের জীবিকা নির্বাহের মূল হলো জুম চাষ।তারা নরম মাটিতে ধান,গম,ভূট্টা,ঢেড়শ,শসা ইত্যাদি ফসল উৎপাদন করে থাকে।পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি পরিশ্রমী।তবে বর্তমান সময়ে এরা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে।চাকমাদের লোক সাহিত্য খুবই সমৃদ্ধশালী।বিভিন্ন ছড়া,ধাধা,প্রবাদ,রূপকথা,গল্প ইত্যাদি চাকমাদের বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে আছে।ধর্মীয় গান ছাড়াও বারোমাসী গান,পালাগান এবং বিভিন্ন কবিতা রয়েছে।চাকমাদের নিজস্ব বর্ণমালায় রচিত প্রচুর সংখ্যক লিখিত বই রয়েছে।চাকমারা শিক্ষা-দীক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উন্নতি করছে।চাকমা সমাজে মৃত দেহ পোড়ানো হয়।তবে সাত বছরের ছোট বাচ্চা মারা গেলে কবর দেয়া হয়।মৃত্যুর সাত দিন পর বিদেহী আত্মার কল্যাণে সাত দিন্যা নামের এক অনুষ্ঠান করা হয়।এ অনুষ্ঠানে তারা গরীব ও ভিক্ষুকদের দান করে থাকে।কিন্তু চাকমা সমাজে বুধবারে মৃত দেহ পোড়ানোর নিয়ম নেই।
তো আজকে এপর্যন্তই।পরবর্তীতে আবারো অন্য কোনো বিষয় নিয়ে উপস্থিত হবো,ইনশাআল্লাহ।সবাই ভাল থাকবেন।