আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমাদের জীবনে খুশির পরিমানটা বেশি ছিল আর দুঃখের পরিমাণ কম ছিল কিন্ত আস্তে আস্তে আমরা যত বড় হতে শুরু করলাম ততই যেন আমাদের খুশির পরিমাণ কমে যেতে লাগল এবং দুঃখের পরিমাণটা বেড়ে যেতে লাগলো। কিন্তু এরকম আমাদের কেন হয়?
সেই প্রশ্ন তো আমরা কখনো নিজেকে নিজে করিনা। আর যদি করি তাও হুট করে একটা উত্তর দিয়ে এড়িয়ে যাই। কখনো গভীর ভাবে আসল ব্যাপারটি কি তা কোনদিন ভেবে দেখি না।তো আজকের এই পোষ্টে আমি আপনাদের সেই কারনটি খুঁজে বের করতে চেষ্টা করব,তো চলুন শুরু করা যাক।
যখন আপনি ছোট ছিলেন তখন আপনার খুশি থাকার জন্য শুধু মা যথেষ্ট ছিল, কিন্তু আপনি যখন একটু বড় হলেন তখন খুশি থাকার জন্য মার সাথে কিছু বন্ধু থাকার দরকার পড়লো। তারপর যখন আরেকটু বড় হলেন তখন মা এবং বন্ধু থাকার সাথে একটা ভালো গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড থাকা দরকার পড়লো।
এরপর যখন আরেকটু বড় হলেন তখন এগুলোর সাথে একটি ভালো চাকরি থাকার দরকার পড়লো। তারপর একটা দামি গাড়ি, একটা ভাল বাড়ী এভাবে যতদিন যেতে লাগলো খুশি থাকার জন্য আরো আমাদের চাওয়া পাওয়া বাড়তে থাকলো। এবং যত বেশি চাওয়া পাওয়া যোগ হতে লাগলো ততবেশি আমাদের জীবন থেকে হাসি,আনন্দ কমে যেতে লাগল। আর দুঃখ বাড়তে থাকলো।
আমরা যদি একটু গভীরভাবে চিন্তা করি তো এটা বুঝতে আমাদের এমন সমস্যা হয় না,ছোটবেলায় আমরা যখন খুশি ছিলাম তখন আমাদের লাইফের প্রতি যে জিনিসটা একদমই কম ছিল সেটা হল এক্সপেক্টটেশন। একসময় শুধু বাবা মায়ের সাথে থেকেই খুশি ছিলাম তারপর বন্ধু এড হল, তারপর যত বড় হতে থাকলাম লাইফের প্রতি এক্সপেক্টেশন গুলো ততো বেশি বাড়তে থাকলো আর খুশি,আনন্দটা ঠিক ততটাই কমে গেলো।
অর্থাৎ এভাবে যদি আমরা লাইফটাকে একটা দাঁড়িপাল্লার সাথে তুলনা করি, যেমন দাঁড়িপাল্লার একদিকে রয়েছে এক্সপেক্টেশন আর অন্যদিকে হ্যাপিনেস । এক্সপেক্টেশন তত বাড়তে থাকে তত হ্যাপিনেস কমতে থাকে এবং স্টেশন কোনটি থাকে অন্যদিকে হেপিনেস ততো বাড়তে থাকে।
এই এক্সপেক্টেশন দুই ধরনের হয়।
প্রথমটি হচ্ছে ,Outer World Expectation
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, Inner World Expectation
Outer World Expectation মানে বাইরের কারোর কাছে বা বাইরের কোন সিচুয়েশনে থেকে আপনি যা যা একসেপ্ট করেন।যেমন ধরুন, আপনার অফিসের বস আপনি চান আপনাকে একটু যেন কম চিল্লায়, বা আপনার গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড আপনাকে যেন আর একটু বেশি ভালোবাসে। বা ধরুন আপনি যেখানে থাকেন ঐ শহরের সবগুলো মানুষ যেন আপনাকে ভালো মানুষ হিসেবে ভাবে। এগুলো Outer World Expectation এর মধ্যে পড়ে। যে এক্সপেক্টেশন গুলো একেবারে মূল্যহীন এবং বরং এগুলো ক্ষতিকারক।
কারণ আপনার চাওয়াতেই আপনার বস আপনাকে কম চিল্লাবে না, আপনার চাওয়াতেই আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে বেশি ভালোবাসবে না,আপনার বস যদি মনে করে,আপনি ভালো কাজ করেন, কাজে খুবি এক্টিভ তাহলে হয়তো একটু কম রাগারাগী করবে।তার উপর আপনার কোনো কন্ট্রোল নেই।আপনি চান আপনাকে সবাই একজন ভালো মানুষ বলে ভাবুক। এখন সরকার একটি ঘোষণা দিয়েছে যে ভালো মানুষকে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে।
এখন আপনার মতো ওই তালিকায় আরও অনেক ভালো মানুষের নাম উঠে এলো।কেউ কিন্তু কোন পুরস্কার আশায় ভালো মানুষ হয় না যে ভাল মানুষ হয় সে এমনিতেই হয়।এখন ওই বাছাইপর্বে আপনি হেরে গেলেন অন্য একজন ভালো মানুষ সেই পুরস্কার জিতে নিল।তখন আপনি মন খারাপ করে বসে থাকলেন আর মনে মনে ভাবলেন আমি দেশের এত ভালো কাজ করেছি, আমি সমাজে ভালো মানুষ তবুও আমি পুরস্কার পেলাম না।এরকম যদি ভাবতে থাকেন তবে আপনার ভালো মানুষ হওয়ার কোন দাম নেই্ত।যতই ভাল মানুষ হন আপনি জীবনে কখনো সুখী হতে পারবেন না বরং দুঃখগুলো আরো বেশি বাড়াতে থাকবেন।
তাই এই ধরনের এক্সপেক্টেশন গুলো সম্পূর্ণ মিনিংলেস, পুরোটাই বোকামি করা।
এসব বাজে চিন্তা ধারার মাধ্যমে আপনি আপনার দুঃখকে অযথা বাড়িয়ে তুললেন।
এবার Inner World Expectation এর আসি।
Inner World Expectation হচ্ছে অর্থাৎ আপনি নিজের প্রতি নিজে যে এক্সপেক্টেশনগুলো করেন।
যেন আগামী মাস থেকে আমি প্রতিদিন সকাল 6 টায় ঘুম থেকে উঠবো, বা আগামী দুই মাসের মধ্যে আমার ওজন 10 কেজি বাড়াবো, আজকে থেকে আমি প্রতিদিন দিনে দুইবার গোসল করব এগুলো Inner World Expectation এর মধ্যে পড়ে।এগুলো ইচ্ছা করলে নিজে নিজে কন্ট্রোল করতে পারেন।আবার আমরা অনেকেই নিজের মন নিজের শরীর থেকেই কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি।কারণ যদি আমাদের সেই কন্ট্রোল থাকতো, আজকে আপনি শপথ করলেন আজ থেকে প্রতিদিন 4 ঘন্টা করে বই পড়বেনকিন্তু সত্যি করে কি প্রতিদিন 4ঘন্টা বই পড়েন?অবশ্যই না।
সেটা আমরা পারিনা। নিজের মন নিজের শরীরকে নিজের ইচ্ছামত চালাতে পারি না। সেখানে আবার ইচ্ছা করে, অন্যের মন অন্যের শরীরকে নিজের ইচ্ছা মত করে চালানো।আমার মত সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে Outer World Expectation যেমন হাসি আনন্দ কে ধ্বংস করে।Inner World Expectation ও ঠিক একই রকম দুঃখগুলো আরো বাড়িয়ে তোলে।আমরা মনে মনে ভাবি কাল থেকে রোজ ৫টায় ঘুম থেকে উঠে নিয়মিত ব্যায়াম করতে যাবো ঠিক তার পরের দিন সকাল 10 টায় ঘুম থেকে উঠে নিজেকে নিজে গাল দিতে থাকি।
এবার তাহলে যে প্রশ্ন তো আছে, তাহলে কি নিজেই নিজের উপর কোনো এক্সপেক্টেশন রাখবো না? কিন্তু তাহলে আমরা লাইফে উন্নতি করব কিভাবে?যদি জীবনে কোন আশা আকাঙ্ক্ষা না থাকে!
তাহলে বলি এটা খুব বড় একটি ভুল ধারণা, জীবনে যত বড় আশা থাকে, তত বেশি উন্নত করা যায়।আসলেই আশার সাথে উন্নত কিসের সম্পর্ক? জীবনে আশা থাকলে কি সবাই উন্নতি করতে পারে?পৃথিবীতে এমন মানুষ আছেন যারা জীবনে কোনদিন আশায় করেননি আজকের তারা যে জায়গায় আছেন সেই জায়গায় কোনদিন পৌঁছাতে পারবে। কিন্তু তারা সেখানে পৌঁছে গেছেন।
বিশ্ব সেরা ধনী মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এর কথা চিন্তা করেন তিনি কি জীবনে কখনো আশা করেছেন যে তিনি বিশ্বের সেরা ধনী হবেন কিন্তু তিনি ঠিকি হয়ে গেছেন।অনেকে আবার দিনরাত একটি স্বপ্ন নিয়ে বসে থাকেন যে আমি সেরা গায়ক হবো, অথবা সেরা শিল্পী হবো কিন্তু সবাইকি সেরা গায়ক হতে পারে নাকি সবাই সেরা শিল্পী হতে পারে?
এই এক্সপেক্টেশন প্রত্যাশা, চাওয়া পাওয়া এগুলোর সাথে সাফল্যের কোন সম্পর্ক নেই। আমার মতে আরো শত্রুতা আছে বলা চলে।তো জীবনে সুখী হতে হলে প্রথমত,Outer World Expectationগুলো রাখার কোনো মানে হয়না, সেগুলো কোনভাবে লাভজনক না বরং সবসময় ক্ষতিকর।Inner World Expectation গুলো রাখা লাভজনক হতে পারে,যদি নিজের মন এবং নিজের শরীর নিজেই সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নয়তোবা সেগুলো ক্ষতিকর।এবার এটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করছে,এর পরও আপনি এক্সপেক্টেশন গুলো বা প্রত্যাশা , চাওয়া-পাওয়া,আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো আপনার জীবনে রাখতে চান কি চান না?
এখনও জীবনে যদি কনো এক্সপেক্টেশন চাওয়া পাওয়া যোগ করেন আমি এটা পেতে চাই,ওটা পেতে চাই, তাহলে একটি কথা মনে রাখবেন,আপনার জীবনের সুখ এবং দুঃখ গুলো দাঁড়ি পাল্লায় মাপতে চলেছেন। সো বি কেয়ারফুল। অল দ্যা বেস্ট। ভালো থাকুন সবসময়।