গাড়ি চালাতে গেলে যত দূর্ঘটনা ঘটে তার বেশির ভাগই হয় রাস্তার ক্রসিংয়ে, কিংবা অন্যান্য নানা বাধার কারনে।
কোন রাস্তায়, কিভাবে, কোন গাড়ি চালাতে হবে, তা না জানা থাকলে এরূপ হতে বাধ্য। সব সময় মনকে সচেতন ও একাগ্র রাখতে হবে। কোন সময় নিম্নলিখিত অবস্থায় গাড়ি চালাতে নেই-
- দীর্ঘ পরিশ্রমে শরীর খুব ক্লান্ত থাকলে গাড়ি চালাতে নেই।
- মানসিক চাঞ্চল্য বা শোক, দুঃখ অথবা দুশ্চিন্তা থাকলে গাড়ি চালাতে নেই।
- মদ বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য খেয়ে গাড়ি চালানো উচিত নয়।
- গাড়ির কিছু কিছু প্রধান পার্টস খারাপ থাকলে সেই গাড়ি চালাতে নেই।
- কারও উপরে খুবই বিরক্ত বা ক্রুদ্ধ হয়ে, সেই মানসিক অবস্থায় গাড়ি চালানো উচিত না।
- ধুমপান করতে করতে গাড়ি চালাতে নেই। অনেক সময় চোখে ধোঁয়া যেয়ে সামনের জিনিস আবছা হয়ে যায়, তাতে দূর্ঘটনা ঘটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
- যদি হাতে বা পায়ে ক্রাম্প বা আড়ষ্টতা ভাব আসে, তখনই গাড়ি থামিয়ে কিছুটা বিশ্রাম না করে গাড়ি চালানো উচিত নয়।
- চালকের পায়ের জুতো যেন বেশ টাইট থাকে। জুতোয় বেশি কাদা বা ময়লা থাকা উচিত নয়। তাতে ব্রেক প্যাডেল থেকে পা পিছলে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
- কখনো খুব তাড়াতাড়ি করে বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো উচিত নয়।
- খুব বেশি ক্ষুধা বা তৃষ্ণা নিয়ে গাড়ি চালানো উচিত নয়। তাতে মন বিরক্ত থাকে, অন্যমনষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। হঠাৎ মাথার মধ্যে চক্কর দিতে পারে। সেক্ষেত্রে দূর্ঘটনা ঘটা অনিবার্য়।
পথ ও ট্রাফিক বিষয়ে জ্ঞান
ভালোভাবে ড্রাইভিং করতে হলে পথ ও কোন পথে কি ধরনের ট্রাফিক চলাচল করে তা জানা কর্তব্য। এই বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তাহলেও ভাল চালককে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কিছু কিছু আইন-কানুন মেনে চলা কর্তব্য। এখানে তা বলা হচ্ছে।
- সব সময় অন্য গাড়ির চালককে খুব বেশি বিশ্বাস করা উচিত নয়।
- অন্য ড্রাইভারের দেওয়া সিগন্যাল সবসময় পুরোপুরি বিশ্বাস করা উচিত নয়। অনেক সময় ড্রাইভার ভুল সিগন্যালও দিয়ে থাকে, সেটাও মনে রাখতে হবে।
- সবসময় ওভারটেক করতে হলে রাস্তার ফাঁকা জায়গায় তা করা উচিত। যে পথে ঝামেলা থাকা স্বাভাবিক, সে পথে ওভারটেক করতে যাওয়া বিপজ্জনক।
- অন্য ড্রাইভারেরা যে সবসময় ট্রাফিক সিগন্যাল মেন চলবে বা চলছে তা ভাবা উচিত নয়। তাই সবসময় আগে থেকেই সাবধান থাকা কর্তব্য। বে-আইনি চালককে অযথা দোষ দিয়েও কোন লাভ নেই। কারণ দূর্ঘটনা যা ঘটার সেটা ইতিমধ্যেই ঘটে যাবে।
- যে পথে অন্য গাড়ি দেখা যাচ্ছে না- কিন্তু অন্য গাড়ি আসতে পারে- তা আগে থেকে চিন্তা করেই সাবধান হওয়া উচিত। গাড়ি আসতে পারে মনে মনে এই কথাটা চিন্তা করে সতর্কভাবে গাড়ি চালনা করা অবশ্য কর্তব্য।
- যদি একজন ড্রাইভার অন্য গাড়ি দেখে তার অর্থ এই নয় যে অন্য গাড়ির ড্রাইভারও এই গাড়িটি দেখেছে। অন্য গাড়ির ড্রাইভার আপনার গাড়ি না ও দেখে থাকতে পারে। তাই এই বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি এবং হর্ণ দেওয়া উচিত।
- কখনও অনভিজ্ঞ বা আইন না-জানা ড্রাইভারকে গালাগালি করে কোন লাভ নেই। নিজে সাবধান হওয়াই হলো সর্বোৎকৃষ্ঠ পন্থা।
পথচারীদের প্রতি পরামর্শ
সড়কপথে দূর্ঘটনার জন্য যে সবসময় গাড়ির চালক একাই দায়ি থাকে তা কিন্তু নয়। অনেক দূর্ঘটনার কারণ কিন্তু পথচারীরাও। তাই নিরাপদ সড়ক পেতে হলে পথচারীদেরও কতকগুলি আইন মেনে চলতে হয়। পথচারীদেরও অনেক কর্তব্য রয়েছে। যেমনঃ
- ফুটপাথ ছাড়া চলাচল করবেন না।
- যে পথ শুধু সাইকেল চালাবার জন্যে নির্দিষ্ট- তা দিয়ে হাঁটবেন না। সেটা সাইকেলকেই ছেড়ে দিতে হবে।
- যেখানে ফুটপাথ নেই, সেই জায়গায় কেবল ডানদিক দিয়ে হাঁটতে হবে- তাহলে উল্টোদিকের গাড়ি সহজেই দেখা যাবে।
- ভিড়ের মধ্যে দুই বা ততোধিক লোক একত্রে পাশাপাশি হেঁটে রাস্তা আটকাবেন না। তাতে যানবাহনের গতিরোধ করা হয় ও আহত হবার আশংকা থাকে।
- রাস্তার বাঁকে এমন কোনও জায়গায় দাঁড়াবেন না, যেখানে চালক পথিককে দেখতে না পায়। যদি গল্পগুজব করতে হয় তা সবসময় রাস্তা থেকে উঠে ফুটপাথে দাঁড়িয়েই করা উচিত।
- চলন্ত অবস্থায় বাস বা গাড়ি থেকে নীচে নামবেন না। তাতে পিছলে যাবার আশংকা থাকে এবং তার ফলে নানা দুর্ঘটনা ঘটা সম্ভব।
- ট্রাফিক সিগন্যাল শুধু গাড়ির জন্য নয়। সেটা পথচারীদের জন্যও প্রযোজ্য। সেই অনুযায়ী নজর রেখে পথ পারাপার করতে হবে।
- বিভিন্ন জায়গায় পথচারীদের হাঁটার জায়গা নির্দিষ্ট থাকে। কোথাও বা ওভারব্রিজ বা সাবওয়ে থাকে- সব সময় সেই পথে হাঁটতে হবে- অন্য পথে নয়।
- রাস্তা ঠিক আছে কিনা- না জেনে কোনও গাড়ির পিছন থেকে চট্ করে রাস্তা পার হবেন না। উল্টো দিক থেকে গাড়ি এসে দূর্ঘটনা অনিবার্য় হয়ে উঠতে পারে|
- পিচ্ছিল পথ খুবই বিপদজনক। বৃষ্টির দিকে অথবা রাস্তায় কাদা থাকলে খুব সাবধানে এবং ধীরে ধীরে চলা উচিত।
- সৌজন্য আর দয়ার পরিচয় দিন। শিশু, বৃদ্ধ, অন্ধ প্রভৃতি লোকদের পথ পার হতে সাহায্য করুন।
শিশুদের সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। শিশুরা পথ চলতে জানে না। তাদের একা ছেড়ে দেবেন না। পথে চলার নিয়ম ছোটবেলা থেকেই তাদের শেখাতে চেষ্টা করুন।
ড্রাইভিং এর বিভিন্ন আইন-কানুন (প্রথম পর্ব)
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর (দ্বিতীয় পর্ব)