তাপস দার সম্পর্কে পরিচয় করে দেয়ার মতন কিছু নেই। বরাবর তার পরিচিতি তিনি একজন ভালো মনের মানুষ,ভালো মানের অভিনেতা। তিনি চেনা-জানা,অচেনা-অজানা সবার কাছেই প্রশংসিত ছিল তার প্রাণ খোলা মেলামেশা। তিনি ছোট, বড় সবার সাথেই মিশতে ভালোবাসতেন। কলকাতায় বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অত্যন্ত জনপ্রিয় তারকা তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রাজনীতিতে দুবারের বিধায়ক ,দুইবারের সংসদ তিনি। এখনো পর্যন্ত কোন বাঙালি অভিনেতা রাজনীতির জীবনে এত সাফল্য অর্জন করতে পারেননি,পেরেছিলেন একমাত্র তাপস দা। তার রাজনীতির জীবন পুরোটাই মানুষের মাঝে দেশের জন্য কাজ করেছিলেন তিনি।
এত কিছুর পরেও কিন্তু শেষ বছর গুলো তাপস পালের জন্য একেবারেই ভালো কাটলো না। তাকে নিয়ে একের পর এক মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগে বারবার তিনি খলনায়ক হয়ে উঠছিলেন। শারীরিক কারণে হোক কিংবা মানসিক কারণে হোক শেষ দিক তাই প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে ছিলেন তাপস পাল। কিন্তু তবুও তিনি তাপস পাল। মঙ্গলবার তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পর পুরো কলকাতা জুড়ে ঘুম ভাঙতেই শোকের ছায়া নেমে পড়ল গ্রাম বাংলার সর্বস্তরের মহলের।
২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা থেকে তাকে মনোনীত করেন তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দেশের রেলমন্ত্রী সব ছেড়ে দিয়ে, বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তৃণমূল কংগ্রেস দলের যোগ দেন। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পর তাপস পালের নায়ক জীবন তখন কিছুটা থমকে যায়। কিন্তু তাতেও জনপ্রিয়তা নেভেনি, ২০০১ এর সেই তাপস পাল আরও ভোটের মাধ্যমে মানুষ তাকে জয়যুক্ত করে নিয়েছে। তিনি সেটা আবারও প্রমাণ করে দেখিয়ে দিলেন।
তারপর দীর্ঘ পাঁচ বছর মেয়াদ সংসদ থাকাকালীন পর ২০০৬ সালে আলিপুর থেকে আবার বিজয়ী হয়। সেই সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল বেশ কিছু আসন হারিয়ে ফেলেছেন। ২৩৫ টি আসন নিয়ে আবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ক্ষমতায় ফিরে ছিলেন। কিন্তু তাপসের বিরুদ্ধে অভিনেতা তথা বাম প্রাপ্তি বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় তার কাছ থেকে কোনদিন বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারেনি।
স্বাভাবিকভাবে তাপস পালের মৃত্যু আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং বেদনাদায়ক। তাপস দা হয়তো আরো আমাদের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর অভিনয়,ছবি উপহার দিতে পারতেন কিন্তু সেটা হয়ে উঠল না। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি তাপস দা কে কাজ দেননি তা কিন্তু নয়, তবে তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি কাজ করতে পারেননি। তাপস দা নিজেও তিনি সে কথা বলতেন।
তবে তিনি আমাদের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর মুভি উপর দিয়ে গেছে বিশেষ করে গুরুদক্ষিণা। তার গুরুদক্ষিণা ছবিটি কলকাতা,বাংলাদেশ,পাকিস্তান,নেপাল পুরো ভারতজুড়েই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।