আসসালামু আলাইকুম। আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আমি একজন নতুন লেখিকা। আমার লেখায় বিভিন্ন ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। যদি আমার লেখায় কোন ভুল ত্রুটি খুঁজে পান তাহলে আমার ভুল ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিয়ে আমার পাশে থাকবেন। এতে আমি আমার ভুল ত্রুটি গুলো সংশোধন করে আপনাদেরকে আরো অনেক ভালো ভালো গল্প, কবিতা উপহার দিতে পারব ইনশাল্লাহ। তাই দয়া করে আমার ভুল ত্রুটি গুলো ধরিয়ে দিয়ে আমার পাশে থাকবেন।
প্রথম পর্ব থেকে……… পরে নিচে নেমে আসলাম। শ্রেনী কক্ষে এসে দেখি অনেক ছাত্র ছাত্রী। কিন্তূ এদের কাউকেই আমি চিনি না। কেউ একজন এসে বলল, বিজ্ঞান বিভাগের শেনী ১০৩ এ। তাই ১০৩ এ যেতে লাগলাম। দেখি ১০৩ এর দরজার সামনে আমার এক বিদ্যালয়ের বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে খুশি হয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। ওইও এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। ওর সাথে শ্রেনী কক্ষে গেলাম। আজ শুধু শিক্ষকদের সাথে পরিচিত হলাম। অনেক ছাত্র ছাত্রী। আমি একটু লাজুক স্বভাবের। তাই সবার সাথে কথা বলতে পারলাম না। কলেজ মুটামুটি ভালোই লাগল। পরের দিন আর কলেজে গেলাম না।
চতুর্থ দিন কলেজে গেলাম। সেদিন আমার বিদ্যালয়ের বন্ধু টা আসে নাই। একাই একটা বেঞ্চে বসে আছি। একজন এসে আমার সাথে বসল। ওর সাথে পরিচিত হলাম। ওর নাম অনন্ত। ওকে এর আগে কখনো দেখি নাই। আজ প্রথম দেখলাম। ওই আমাকে জিজ্ঞেসা করল, প্রথম দিন আমি কলেজে এসেছিলাম কি না? আমি আমার প্রথম দিনের পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলাম। ওতো পুরোই অবাক। তখন থেকে ওর সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল। ওর সাথে পরিচিত হয়ে জানতে পারলাম। ও আমার আত্মীয় এবং আমার একে অপরের ভাই হই। কিন্তূ আমার জানতাম না। অনন্ত খুব বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছিল। তাই খুব সহজেই সবার সাথে মিশতে পারত। আমি শুধু ওর সাথে থাকতাম। আর ওই সব কাজ করত। আমরা দুজন সবকিছু ভাগাভাগি করতাম। বই খাতা থেকে শুরু করে খাবার পর্যন্ত।
আমরা বই ভাগ করে নিতাম। আর দুজনে একসাথে বসতাম। এমনকি পড়াও ভাগ করে পড়তাম। শ্রেনী শিক্ষক বাড়ির যে পড়া দিত তার অর্ধেক অনন্ত আর বাকি অর্ধেক আমি পড়তাম। পড়া দেওয়ার সময় দুজনে একসাথে পড়া দিতাম। এতে শিক্ষক বুঝতেই পারত না যে আমরা সম্পুর্ন পড়া পড়ি নাই। আমরা দুজন একটু দুষ্টু ও ছিলাম। শ্রেনী শিক্ষক সহ সহপাঠীদের সাথে ও দুষ্টুমি করতাম। বেঞ্চের নিচ দিয়ে অন্যের চুলে চুইনগাম লাগিয়ে দিতাম। যদিও এটা বিদ্যালয় জীবনের সেরা দুষ্টুমি ছিল। কলেজ জীবনেও আমার এটা করতাম। তবে শিক্ষকদের সামনে খুবই ভদ্র থাকতাম। এজন্য অনেকেই আমাদের দুজনকে ভদ্র শয়তান ছদ্ম নামে ডাকত। অনন্ত সহ একসাথে প্রাইভেট ও পড়তাম। ওর সাথে ওর আত্মীয়দের বাড়িতেও বেড়াতে গিয়েছিলাম বেশ কয়েকবার। ওকে বন্ধু হিসেবে পেয়ে খুব ভালোই যাচ্ছিল দিনগুলি।
হঠাৎ একদিন অনন্ত এসে আমাকে বলল। রূহান তোকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি রে… আমি আর এই কলেজে পড়ব না। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি শুধু চুপ হয়ে বসে পড়লাম। ও কোনো সমস্যার জন্য কলেজ ছেড়ে চলে যাচ্ছে না। ও যে চলে যাবে সেটা অনেক আগেই আমাকে বলেছিল। ওর বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার তেমন কোন ইচ্ছা ছিল না। ওর ইচ্ছা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। তাই সরকারি পলিটেকনিকেল কলেজে আবেদন করেছিল। ওখানে ওকে কম্পিউটার বিষয়ে না দিয়ে অন্য বিষয়ে দিছে। তাই ও আমাদের কলেজে ভর্তি হয়েছিল। এখন ওখানে ওকে কম্পিউটার বিষয় দিয়েছে। এখানে ভর্তি বাতিল করে ঐ কলেজে যেতে হবে।
ওর পরিবারের ও ইচ্ছা ওই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হোক। তাছাড়া যার যে বিষয়ে পড়তে ভালো লাগে বা যে বিষয়ে পড়ার আগ্রহ থাকে সেই বিষয়ে পড়তে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। তাই ওকে আর জোর করি নাই। অনন্ত বুঝতে পেরেছিল যে ওকে ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগবে না। তবু আমাকে মিথ্যা স্বান্তনা দিয়েছিল। কলেজের অধ্যক্ষ সহ অন্যান্য শিক্ষকরাও চাই নাই যে অনন্ত অন্য কলেজে ভর্তি হোক। মেধাবী ছাত্র বলে কথা। কে বা চাইবে একজন ভালো ছাত্রকে হারাতে। অনন্ত শেষ বারের মত আমার সাথে দেখা করতে কলেজে আসল। হয়ত এর পর কোন একদিন দেখা হবে ওর সাথে। তবে আগের মতো আর মজা হবে না। ওর সাথে আর আমার সারাদিন কাটা হবে না। সেদিন চলে যাওয়ার সময় অনন্ত বার বার পিছন ফিরে তাকাচ্ছিল। তখন আমার খুব কান্না পাচ্ছিল। কিন্তূ কাঁদতে পারছিলাম না। ও ওর নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওকে তো আর বাধা দেওয়া যায় না…..
ওকে ছাড়া আমার কলেজে একটুও ভালো লাগে না। অনন্ত আমার থেকে দূরে চলে গেছে ঠিকি কিন্তূ ক্যাম্পাসে রেখে গেছে ওর আর আমার বন্ধুত্বের স্মৃতি। এখন ও শ্রেনী কক্ষের দরজার সামনে গেলে মনে হয় অনন্ত আমায় ডাকছে আর বলতেছে, রূহান তারাতাড়ি আয়। আজ আমরা এইখানে বসব। আরে ভাই তাড়াতাড়ি আয় নাহলে অন্য কেউ এসে বসে পড়বে। এটা ওর প্রতিদিনের কথা ছিল। মন ভালো না থাকায় বেশ কয়েকদিন কলেজে গেলাম না। কিছু ভালো লাগছিল না। খুব একা লাগছিল। হঠাৎ সবকিছু কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে গেছে।
পরের পর্ব আগামীকাল দিব ইনশাআল্লাহ। সম্পুর্ন গল্প টা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। আপনারা নিজের এবং আপনার পরিবারের খেয়াল রাখবেন।
তবে একটা অনুরোধ। দয়া করে কাউকেই হেয়ো চোখে দেখবেন না।