কাশেমপূর নামক একটা জায়গা আছে। এটা একটা সমৃদ্ধ গ্রাম। এখানে সবাই অনেক ধনী। এই গ্রামে কোনো গরিব লোক নেই। এখানে ধনীদের বাড়িতে তাই কাজের লোকের খুব অভাব। কাজের লোক রাখতে হলে অন্য কোনো গ্রাম থেকে কাজের লোক নিয়ে আসতে হতো।
জমিতে চাষ থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলনের আগ পর্যন্ত যত কাজ আছে, তা এই গ্রামের কেউই করে না। তারা অন্য কোনো গ্রাম থেকে লোক ভাড়া করে নিয়ে আসে। তাদের দ্বারা তারা তাদের জমিতে ফসলের চাষ করে। তারা এতোই ধনী যে, রাস্তায় কোনো কিছু পড়ে গেলে তারা তা উঠায় না। কিন্তু, তারা ধনী হলেও খুবই কৃপণ।
তারা কাউকেই সাহায্য করতো না। তোমরা বলতে পারো, তাদের গ্রামে তো সবাই ধনী, তারা আবার কাকে সাহায্য করবে? আসলে তারা তো ধনীই, সেটা তো ১মেই বলেছি। নিজেদের ক্ষেত্রে এতো ভোগ – বিলাসিতা যে, খাবার খেয়ে অতিরিক্ত খাবার ফেলে দেয়। কিন্তু, তারা এতো কৃপণ যে নিজেদের খানা ফেলে দেয়, তবুও তারা তা অন্য কোনো অসহায় মানুষকে দেয় না। ভিক্ষুককে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। শুধু, তাই নয় কাউকে কেউ সাহায্য করতে গেলে, তারা তার প্রতিবাদ করে।
তারা তাই ঠিক কৃপণ নয়। তাদেরকে অন্য গ্রামের লোক গকৃ বলে ডাকে। এই নামটা আসলে অন্য গ্রামের লোকদের দেওয়া নাম নয়। এই নামটা একটা বড় অফিসারের দেওয়া নাম। এই নামের পিছনে একটা ইতিহাস আছে। চল জেনে নিই, সেই মজার ইতিহাসটি।
একবার ওই গ্রামে এক বড় অফিসার আসেন। তিনি গ্রামে এসেছেন, তা শুনে সকল ধনী লোক তাদের বাড়িতে তাকে নেমন্তন্ন করলেন। তিনি তাদের সবার বাড়িতে পর্যায়ক্রমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১মে তিনি কিছুটা কম ধনী লোকের বাড়িতে গেলেন।
তাকে সম্মান দেখানোর জন্য রান্না করা হলো দামী দামী সব খাবার। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, “এতো খাবার কে খাবে? আমি তো এতো খাবার খেতে পারব না। তাছাড়া আপনি আর আপনার কাজের লোক ছাড়া আর তো কেউই নেই, যে এতো খাবার শেষ করতে পারবে।”
এটা শুনে ধনী লোকটা বলল, “আমরা খেতে না পারলে ফেলে দিব। আমাদের তো আর অভাব নেই। আর আমরা কৃপণও নই।” অফিসার এবার হাসতে লাগে।
খাওয়া দাওয়া শেষ হওয়ার পর, বাকি খাবার বাইরে ফেলে দিতে গেলো ধনী লোকটি। এটা দেখে এক ভিক্ষুক বলল, তাকে যেন এই খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু ধনী লোকটি, তাকে তো দিলোই না, বরং; তার সামনেই সব খাবার ভাগাড়ে ফেলে দিলো।
এটা দেখে অফিসার লোকটি বলল, “আপনি ওই ভিকারিকে খাবারটা দিলেন না কেন?” প্রত্যুত্তরে ধনী লোকটি বলল, “আপনি জানেন না। এরা খুবই ধান্দাবাজ। আজকে এদের খাবারটা দিলে, পরে আবার খাবার চাইতে চলে আসবে। ফলে প্রতিদিন আমার বাসায় ভিকারিদের লাইন লেগে যাবে। আর আমার সম্পদ এদের দিতে দিতে শেষ হয়ে যাবে। তাই আমি এদের কোনো সাহায্যই করি না।”
অফিসার বলল, “তাহলে আপনি এই গরিবদের প্রতি কৃপণ, তাই না?” “আপনার যা ইচ্ছা বলতে পারেন। আমি এদের প্রতি কৃপণই বটে। কৃপণ না হলে আমার তো সব সম্পদই শেষ হয়ে যাবে,” ধনী লোকটা বলল।
এভাবে প্রত্যেক ধনীর বাড়িতে একই ঘটনা দেখতে পেলেন। ফলে তিনি রসিকতার সহিত এদেরকে গকৃ বলে সম্বোধন করেন। গরিবের “গ” আর কৃপণের “কৃ” নিয়ে তা তিনি বানান। এই ঘটনা আশেপাশের সব গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে।
তখন থেকেই এই ধনীদের নাম হয় “গকৃ”!