চীনসহ প্রায় ১৩টি দেশে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৩শ’ মানুষ। এ পর্যন্ত ৪১ জন মারা গেছেন। ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশ ও এই ভাইরাস হতে আশংকামুক্ত নয়। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোন প্রতিষেধক টিকা বা এন্টিভাইরাল ওষুধ নেই, তাই এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে প্রতিরোধ ই শ্রেয়। আর প্রতিরোধ করার জন্যই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
করোনা ভাইরাস কী
করোনা ভাইরাস সাধারণ স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পক্ষিকুলের রোগ ঘটায়। এটা গরু এবং শূকরের ডায়রিয়া, পাখি ( মুরগির) শ্বাসনালীর প্রদাহ ঘটায়। মানুষের শ্বাসনালী তে আক্রমণ করে এটা ফ্লু র মতো উপসর্গ ঘটায় (যেমন কাশি, হাঁচি, গা ম্যাজম্যাজ ইত্যাদি)
এই ভাইরাস টি ২০১৯-এনসিওভি নামেও পরিচিতি যার অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে,ভাইরাসটি দেহকোষের ভেতরে ‘মিউটেশন ঘটায়’ অর্থাৎ পূর্ব গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। ফলে ধারণা করা হয় এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। কেননা রূপান্তর এর জন্য ই কোন প্রতিষেধক টিকা তৈরি করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি
বলা হয়ে থাকে, মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের উৎপত্তি। তবে ঠিক কীভাবে এর সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায় নি। ধারণা করা হয়, কোন প্রাণী থেকে এর উৎপত্তি হয়েছিল। প্রাণী থেকেই প্রথমে ভাইরাসটি কোনও মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং তারপর আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সুস্থ দেহে ছড়িয়েছে। এর আগে সার্স ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকার ইতিহাস রয়েছে। এবং তারপরে মার্স ভাইরাস ছড়িয়েছিল উট থেকে।
করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে উহান শহরে সামুদ্রিক একটি খাবারের কথা বলা হচ্ছে। শহরটির একটি বাজারে গিয়েছিল এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো। কিছু সামুদ্রিক প্রাণী যেমন বেলুগা জাতীয় তিমি করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে। তবে উহানের ওই বাজারে মুরগি, বাদুড়, খরগোশ এবং সাপ বিক্রি হতো।
কীভাবে ছড়ায়
এই ভাইরাস মানুষের শ্বাসনালী তে আক্রমণ করে হাঁচি, কাশি, কফ/ থুথুর মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির নিশ্বাসের মাধ্যমে ও ছড়াতে পারে। তবে এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে।
এক দশক আগে সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি মানুষ। আর একটি ভাইরাসজনিত রোগ ছিল মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স। ২০১২ সালে এতে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের।
করোনা ভাইরাসের লক্ষ্মণ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ হলো,
শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। শুরু হয় জ্বর দিয়ে এবং পরবর্তীতে শুকনো কাশি দেখা যায় । এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং তখনই কোনও কোনও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।
করোনা ভাইরাস এর ভয়াবহতা
ভাইরাস টি মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে ফুসফুসের বিভিন্ন সংক্রমণ ঘটাতে পারে। যেমন নিউমোনিয়া, সিভিয়ার একিউট রেস্পিরাটরি সিনড্রোম ইত্যাদি। বিভিন্ন ভাইটাল অরগান ফেইলিউর বা অঙ্গবিকলাঙ্গ এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
এর আগে ২০০৩ সালে, সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরনের করোনা ভাইরাস। এতে আক্রান্ত হয়েছিল ৮ হাজারের বেশি মানুষ। আর একটি ভাইরাসজনিত রোগ ছিল মিডল ইস্টার্ন রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স। ২০১২ সালে এতে মৃত্যু হয় ৮৫৮ জনের।
প্রতিকার এবং প্রতিরোধ
এই ভাইরাস এর কোনও টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এমনকি এমন কোনও এন্টিভাইরাল মেডিসিনও নেই, যা রোগ নিরাময় করবে। আপাতত প্রতিরোধ ই এর থেকে রেহায় পাওয়ার একমাত্র উপায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে মানুষকে নিয়মিত হাত ভালোভাবে ধোয়া নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে। হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা এবং ঠান্ডা ও ফ্লু আক্রান্ত মানুষ থেকে দূরে থাকারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।
আপাতত প্রতিকার হিসেবে এ ভাইরাস বহনকারীদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে বলছেন বিজ্ঞানীরা। ডাক্তাররা বারবার হাত ধোয়া, বাড়ির বাইরে থেকে এসে হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা ও ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা, ভীড়যুক্ত পরিবেশ এড়িয়ে চলতে বলেছেন।
অসুস্থ ব্যক্তিদের মুখোশ পড়া, ঘরে থাকা, এবং সুস্থ ব্যক্তিদের সংক্রামক এলাকা থেকে নিরাপদে থাকাই এ রোগের প্রতিকার হিসেবে বিবেচ্য।