বাংলাদেশে যত দিন যাচ্ছে, নারী নির্যাতন ততই বাড়তে থাকছে। আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন, সেই সাথে বাংলাদেশে বাস করেন তাহলে আপনাকে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, তা হলো আপনি বাহিরে, অনেক সময় ঘরেও কখনোই নিরাপদ নন।
আমরা দেখতে পাই ধর্ষন ও অন্যান্য নির্যাতন ক্রমেই বেড়ে চলেছে। আপনি আপনার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার রাস্তা থেকে শুরু করে কক্সবাজার ট্যুর, কিংবা নিজের ঘরে শত্রুতার শিকার হয়ে বা নাম না জানা আরও হাজারো উপায়ে নির্যাতিত হতে পারেন। আমার আজকের লেখা মূলত এই বিষয়েই। প্রথমত আমাদের জানতে হবে নারী নির্যাতন কেন হয়? আর কেনই বাড়ছে?
এর উত্তরে বলা যেতে পারে নৈতিকতার অবক্ষয়। সেটা হতে পারে ক্ষমতার জোরে, হতে পারে লালসার জন্য বা হতে পারে পর্নোগ্রাফির প্রভাবে। মানুষ হিসেবে একজনের সাথে আরেকজনের বিরোধ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু এই বিরোধের জের ধরে অপরপক্ষের নারীদের উপর নির্যাতন করে নিজের রাগ মেটানো এখন খুব স্বাভাবিক।
আর সাথে রাস্তায় বৃদ্ধি পাওয়া বখাটের উৎপাত। সব মিলে নারীর জন্ন প্রতিটা জায়গায় যেন নরকে পরিনত হয়েছে। সৃষ্টিগত ভাবে নারীদের প্রতি পুরুষদের আকর্ষন খুব স্বাবভাবিক। কিন্তু সেই আকর্ষন মেটানোর জন্য একটা সুন্দর পথ আছে।
কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী! যার নীতি নেই, সে সব কিছুই করতে পারে।
যাইহোক মূল কথায় আসি। আমি বা আপনি কিন্তু চাইলেই এত সহজে এই নারী নির্যাতন বন্ধ করতে পারব না।আমরা হয়ত আজ একজনের ধর্ষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে মিছিল ডাকলাম।কিন্তু কালই খবরের পাতায় দেখা যাবে আরেক ধর্ষনের সংবাদ। কাজেই দেখা যাচ্ছে এই যে একটা নষ্ট সমজ তৈরি হয়ে গেছে, এটাকে কিন্তু সহজেই নির্মুল করা যাচ্ছে না।
তাহলে কি করতে হবে?
এর উত্তর হচ্ছে- নির্মুলই করতে হবে। কিন্তু সব কিছুই সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমরা যদি বোঝার সুবিধার্তে ধরেও নিই আজ থেকে আমরা নির্মুল কর্মকাণ্ড শুরু করলাম। তারপরেও এই জিনিস নর্মুল হতে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
এখন এই পাঁচ বছর আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকেই নিজের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আপনি যদি ভাবেন দোষ তো বখাটেরদের, আমি কেন এত মেনে চলব, তাহলে কিন্তু ভুল করবেন। হ্য এটা সত্য যে আপনার দোষ নেই, কিন্তু আপনাকে এখন বাধ্য হয়েই কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবেই। কারণ হায়েনারা হা করেই আছে। এদের লালসার স্বীকার হওয়ার চেয়ে নিজে থেকে একটু সতর্ক থাকলে তো আপনারই লাভ। এক্ষেত্রে সতর্ক কিভাবে থাকা যায় তা আমি পয়েন্ট আকারে উল্লেখ করছি। অনেকের দ্বিমত থাকতে পারেন, তবে আমার কাছে এগুলো কার্যকরী মনে হয়।
• কখনো একাকী প্রয়োজনেও অপরিচিত জায়গায় যাবেন না। বাবা, মা, ভাই অথবা বান্ধবিদের সাথে নিয়ে যাবেন।
যাওয়ার আগে যথা সম্ভব সেই এলাকার থানা কোথায়, আপনার গন্তব্য থেকে কতদূর, সেখানে পরিবেশ কেমন ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় জেনে যাবেন। গুগলের সাহায্য নেবেন এক্ষেত্রে।
•একদম ফাকা বাসে একা উঠবেন না। এবং বাস সম্পুর্ন খালি হওয়ার আগেই নেমে পড়ুন। যথাসম্ভব মহিলাদের পাশে বসুন।
• রাতের বেলা নিজের অতি পরিচিত এলাকাতেও একাকী যাওয়া পরিহার করুন। একান্ত প্রয়োজন হলে কাউকে সাথে নিয়ে যান।
•নিজের ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ান। ভিডিও দেখে হলেও অন্তত কারাতে শিখতে পারেন ঘরে। এতে কিছুটা সাহস বাড়বে। অনেকেই আছে বিপদের সামনে অতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়েন। এমন হওয়া যাবে না। নিজেকে শক্ত রাখুন। কৌশলী হয়ে উঠুন। চাইলে এ ব্যাপারে নেটে আরও ঘাটাঘাটি করতে পারেন।
•রাস্তা ঘাটে, লোকাল বাসে মেয়েদের শরীরে হাত দেয়া যেন বাজে লোকদের রুটিনে পরিণত হয়েছে।
এ থেকে বাঁচতে যথাসম্ভব ভিড়ের রাস্তা পরিহার করুন। সম্ভব হলে রিক্সা নিন। কিছু টাকা বাচানোর চেয়ে নিজেকে বাচানো জরুরী।
যদি একান্তই হাঁটতেই হয় তো বড় ব্যাগ সাথে নিয়ে হাঁটুন। এটা আপনাকে অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেবে।
বাসে বা ফুটপাতে, আপনি যদি একটা বড় ব্যাগ সাইডে রাখেন তাহলে আপনার সেই সাইডটা পুরোটাই সেইফ হলো। এভাবে নিজেকে বাঁচানো সহজ হবে।
একান্ত ভীড়ের মধ্যে দুই হাতার স্কুল ব্যাগ সামনের দিকে বুকে ঝুলিয়ে হাঁটুন। পুরোপুরি নিরাপদ থাকবেন।
বাসে দাঁড়িয়ে থাকলে পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় অনেকে ইচ্ছে করেই ছুয়ে যেতে চায়! আপনি সতর্ক থাকুন।
আপনি কারো আগমন লক্ষ্য করলে ব্যাগটা নিজের সেই দিকে দিয়ে দিন যেই দিক দিয়ে সে যাবে।
ব্যক্তিকে দেখে আউলিয়া দরবেশ মনে হলেও এভাবে থাকুন।
কাউকে বিশ্বাস করার দরকার নেই।
• আগে থেকে একটা সতর্ক বার্তা দিয়ে দিন যে মেয়ে মানুষ আছে বাসে! যেন একটু সাবধনে থাকেন ভাইয়েরা। তাহলে দেখবেন অনেকেই সতর্ক হচ্ছে।
•লোকাল রাস্তা, বাস, ট্রেনে কেউ আপনার দামী পোশাক দেখবে না। সুতরাং এসব জায়গায় যথাসম্ভব শালীন পোশাক, ঢোলাঢালা পোশাক পরে চলুন।
•চোখ কান খোলা রাখুন। বিশেষ করে লোকাল যানবাহনে ঘুমাবেন না একা জার্নির ক্ষেত্রে।
•অবশ্যই গুগল ম্যাপে লোকেশন অন করে চলুন।যদি অন্য কোনো সমস্যা না থাকে। সাথে ৯৯৯ এ ফোন দেয়ার প্রস্তুতি রাখুন। লজ্জা পাবেন না। ভয় পাবেন না। পুলিশ আপনার সহযোগিতার জন্যই আছে।
সমস্যা যতটুকুই হোক আর যতটুকুই হওয়ার আশংকা করেন না কেন, অবশ্যই ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে পুলিশকে আপনার সমস্যাটা জানিয়ে রাখুন।
উপরোক্ত পয়েন্ট ছাড়াও আরও শত শত পয়েন্ট আছে যা হয়ত ফলো করলে কিছুটা হলেও আপনি সেইফ থাকবেন। তাই এসকল।পয়েন্ট গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আর নিজের কল্পনাতেই একটা সেইফ জোন তৈরি করে নিন। তারপর রাস্তায় বের হয়ে পড়ুন!