নিয়মিত লেবুর রস খাওয়ার মাধ্যমে শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমসহ বহু অসুখ চিরতরে দূর করতে পারেন আপনি নিজে নিজেই। এমনকি প্রতিদিন লেবু খাওয়ার মাধ্যমে আপনার ইমিউনিটিকে বুস্টআপ তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এতে করে কোনো রোগ-ব্যাধি আপনার ধারেকাছেও আসতে পারবে না। তাই লেবুর সাথে কখন কি কি মিশিয়ে খেলে আপনার কোন কোন রোগ দূর হবে, তা জেনে রাখা হবে সবদিক থেকেই উত্তম। যেমন, শ্বাসকষ্ট দূর করতে লেবুর সাথে কি কি মিশিয়ে খাবেন এবং কখন খাবেন, তা যেমন জেনে রাখা দরকার, তেমনি আপনি যদি আপনার গ্যাস, বদহজম ইত্যাদি দূর করতে চান; তখন লেবুর সাথে কি মিশিয়ে খাবেন এবং কখন খাবেন, সে বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে জেনে রাখা দরকার। সেই সাথে আরেকটি বিষয় আমাদের জেনে রাখা দরকার, কিভাবে লেবু খেয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আরও জেনে রাখা দরকার, কিভাবে লেবু খেলে শরীরের মেদ-চর্বি ঝরে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই।
শরীরের বাড়তি মেদ-চর্বি গলাতে লেবু খুবই ভালো কাজ করে। এজন্য আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত নিয়ম করে লেবু খেতে হবে। লেবু খাওয়ার আগে সকালবেলা বাসিমুখে বা খালিপেটে কুসুম-গরম পানি যথেষ্ট পরিমাণে পান করতে হবে। তা না হলে খালিপেটে সরাসরি লেবুর রস খেলে গ্যাস-এসিডিটি বুক জ্বালাপোড়া ও বদহজমের সমস্যা থাকলে তা আরও বেড়ে যাবে। এ কারণে আগে গরম পানি খেতে হবে। এর আধাঘন্টা পরে একটি লেবুর রস একগ্লাস হালকা কুসুম গরম পানির সাথে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ একটি লেবুর সম্পূর্ণ রস কুসুম গরম পানির সাথে মেশাতে হবে।
এর সাথে এক চা-চামচ পরিমাণ খাঁটি মধুও মিশিয়ে নিতে হবে। কুসুম-গরম পানির সাথে লেবু ও খাঁটি মধু— এই মিশ্রণ টানা সাত দিন খেলে ধীরে ধীরে আপনার মেদ-চর্বি অবশ্যই কমতে শুরু করবে। যাদের গ্যাস-এসিডিটিতে বুক জ্বালাপোড়া ও বদহজমের সমস্যা বেশি, তারা কিন্তু সকালবেলা এভাবে খালি পেটে লেবুর রস খাবেন না। এতে করে আপনার এজাতীয় সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। যদি এমন সমস্যা থাকে, তাহলে আপনি লেবু কোন সময়ে খেলে গ্যাস-এসিডিটি বুক জ্বালাপোড়া ও বদহজমের সমস্যা দূর করতে পারবেন, তা সঠিকভাবে জানতে হবে।
যদি আপনার প্রায়শই খাবার হজম না হয়ে থাকে, তাহলে আপনি লেবু খাবেন দুপুর বেলায় খাবারের আধাঘন্টা পরে। দুপুর বেলায় ভারী খাবার খেলে খেয়াল রাখতে হবে, যেন সেই খাবারে দুধ জাতীয় কোন খাবার না থাকে। দুধ জাতীয় যেকোনো খাবার বা ডেজার্ট খাবার পরে লেবু না খাওয়াই ভালো। এতে বদহজম বা পেটের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। যদি আপনি এই ধরনের ডেজার্ট বা দুধ জাতীয় খাবার না খান, তাহলে দুপুরে ভাত খাওয়ার পরে আধাঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।
আধাঘন্টা পরে একগ্লাস হালকা গরম পানি নিয়ে এরমধ্যে একটি সম্পূর্ণ লেবুর রস দিয়ে এর সাথে মধু মিশিয়ে নিতে হবে। সাথে সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। সৈন্ধব লবণ অর্থাৎ রক সল্ট যদি না থাকে, তাহলে এক চিমটি বিট লবণ মিশিয়ে নিতে হবে। কিন্তু যাদের হাই ব্লাডপ্রেশার আছে কিংবা হাই ক্লোরেস্টেরলের সমস্যা আছে, কিডনি ফাংশনের সমস্যা আছে; তাদের ক্ষেত্রে এক চিমটি বিট লবণ কিংবা রক সল্ট মেশানোই ভালো। কারণ, রক সল্ট এই ধরনের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয় না।
শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা, শুষ্ককাশি বা বুকে জমা কফ দূর করতে লেবু কিভাবে খেতে হবে?
প্রথমে একটি লেবু অর্ধেক করে মাঝ বরাবর কেটে নিতে হবে। তারপর লেবুর সেই অর্ধেক অংশটিকে হালকাভাবে গরম করতে হবে। সেক্ষেত্রে লেবু এমন একটি পাত্রে নিতে হবে, যাতে হালকাভাবে গরম করা যায়। হালকা আঁচে অর্ধেক লেবুটিকে গরম করতে করতে সেখানে তিনটি উপাদান মিশিয়ে দিতে হবে। প্রথমে তিন চারটি কালো গোলমরিচের গুঁড়ো তাৎক্ষণিকভাবে অর্ধেক লেবুটির উপরিভাগে মিশিয়ে দিতে হবে। এর সাথে আধা চা চামচ পিপুল গুঁড়োও মিশিয়ে দিতে হবে। পিপুল অনেক মুদি দোকানে কিংবা ভেষজ ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। আধা চা-চামচ পিপুল গুঁড়ো সেই অর্ধেক লেবুটির উপরিভাগে গোলমরিচের গুঁড়োর সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। হালকা আঁচে থাকা অবস্থাতেই পিপুল এবং গোলমরিচের গুঁড়োর সাথে আধা চা-চামচ সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে দিতে হবে। সাধারণ লবণ প্রেসার বাড়ায় এবং কিডনির কার্যক্ষমতার ক্ষতি করে, কিন্তু সৈন্ধব লবণ এসবের কোন ক্ষতি করে না কিংবা সমস্যা বাড়িয়ে দেয় না।
অর্ধেক লেবুর উপরিভাগে পিপুল গুঁড়ো, গোলমরিচের গুঁড়ো ও সৈন্ধব লবণ দুই/তিন মিনিট হালকা আঁচে গরম করার পরে তা নামিয়ে নিয়ে একটি কাঁচের পাত্রে সম্পূর্ণ লেবুর রসটা নিংড়ে বের করে নিতে হবে। লেবু যখন গরম করা হয়, তখন লেবুর রস অনায়াসে পরিপূর্ণভাবে বের হয়ে যায়। এই লেবুর রসের সাথে এক চামচ পরিমাণ খাঁটি মধু মিশিয়ে নিতে হবে। খুব ভালো করে এই মিশ্রণটি তৈরি করার পরে হাতের তালুতে নিয়ে ধীরে ধীরে চেটে খেতে হবে। চেটে চেটে খেলে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করবে। যখনই আপনার কাশি, গলাব্যথা বা হঠাৎ করে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হবে, এই মিশ্রণটি তৈরি করে তৎক্ষণাৎ খেয়ে নিতে হবে। হালকা গরম অবস্থায় খেলে এটি অনেক ভালো কাজ করে এবং এই মিশ্রণ খাওয়ার পর এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। হালকা কুসুম গরম পানি পান করার পর ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা ইত্যাদি সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। ফুসফুস পরিষ্কার হবে।
ফুসফুসে আগে যদি কোন ইনফেকশন থেকে থাকে, সেই ইনফেকশন দূর করতে এই লেবু-মধু মিশ্রণের কোন জুড়ি নেই। যদি কারো দীর্ঘদিনের সর্দিকাশির সমস্যা থাকে, তাহলে এই মিশ্রণ দিনে দুইবার করে খেতে হবে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যাগুলো পুরোপুরি দূর হয়ে যাবে। দিনের অন্য কোনো সময়ে সেক্ষেত্রে আর লেবুপানি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। আরেকটি বিষয় খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে— যদি আপনি ওজন কমানোর জন্য লেবুপানি খান, কিংবা আপনি যদি বদহজম, গ্যাস-অম্বল ইত্যাদি কমানোর জন্য লেবুপানি খান; তাহলেও কিন্তু এই মিশ্রণ দিনে দুইবারের বেশি খাওয়া যাবে না। কারণ, লেবুর রসের মিশ্রণ অহেতুক বেশি বেশি খেলে বুকজ্বলা, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদির সমস্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে বুঝে-শুনে পরিমাণ মতো খেতে হবে। একজন মানুষের জন্য সারাদিনে একটির বেশি লেবু খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
সারাদিনে একটি লেবুই একজন মানুষের জন্য যথেষ্ট। সেটা কাগজি লেবু, পাতি লেবু কিংবা এলাচি লেবুই হোক। লেবুর অত্যধিক পরিমাণে ভিটামিন-সি কিন্তু শরীরের জন্য মোটেও ভালো না, বরং অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঠান্ডা কাশিজনিত সমস্যায় রাতে বিছানায় শোয়ার পরে যাদের খুশখুশে কাশি, সর্দিতে নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া; মাথা-ব্যথা করা এই ধরনের সমস্যাগুলো হয় এবং কাশির জন্য ভালো করে যারা রাতে ঘুমাতে পারেন না, তারা ঘুমানোর আগে আগে এই মিশ্রণটি তৈরি করে খেয়ে নেবেন। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, লেবু খেলে রাতে কিন্তু দুধ জাতীয় কোন খাবার খাওয়া যাবেনা। দুধ বা দুধ জাতীয় কোন খাবার না খেলেই শুধু লেবু-মধুর এই মিশ্রণটি খাওয়া যাবে। তবে এই মিশ্রণটিতে যেহেতু লেবুর রস, গোলমরিচ, লবণ ও পিপুল রয়েছে, তাই এটির আধিক্য গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও বদহজমের সমস্যা অতি সহজেই দূর করে। রাতে দুধ না খেয়ে এই মিশ্রণটি খাওয়ার ফলে পেটের যাবতীয় সমস্যা অতি সহজেই দূরীভূত হয়ে যাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে সেই সমস্যাও দূর হয়ে যাবে। এই মিশ্রণটি শ্বাসকষ্ট, অ্যাসিডিটি ও বদহজমের সকল সমস্যা খুব অল্প সময়েই পুরোপুরি দূর করতে সক্ষম। এই মিশ্রণটি শরীরের ইমিউনিটি ব্যাপকভাবে বুস্ট করতে সক্ষম, যদি লাগাতার নিয়ম করে কয়েকমাস খাওয়া যায়। শুধু রাতে না খেয়ে দিনের অন্য সময়েও নিয়ম করে এই মিশ্রণটি খেলে আরও বহুবিধ উপকার পাওয়া সম্ভব। শুধুমাত্র খাওয়ার নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে খেতে হবে। এই মিশ্রণটি খাওয়ার পরে আধাঘন্টার মধ্যে অন্য কোনো কিছু কোনভাবেই খাওয়া উচিত হবে না। এই মিশ্রণটি খেলে ইমিউনিটি এতোবেশি বুস্ট হবে যে, আপনার শরীরে কোনো রোগ টিকতে পারবে না। তাই সত্যিকারভাবে উপকার পেতে হলে বুঝে-শুনে লেবু খেতে হবে। কিভাবে কখন কি অবস্থায় লেবু খেতে হবে তা অবশ্যই জানতে হবে। কোন রোগের জন্য কিভাবে লেবু খেতে হবে তাও ভালোভাবে জানতে হবে। এভাবে লেবুর রস খাওয়ার মাধ্যমেই শ্বাসকষ্ট, গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমসহ বহু অসুখ চিরতরে দূর করার এই অত্যাশ্চর্য উপায়ের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ-স্বাভাবিক ও নিরোগ রাখা সম্ভব।