আসসালামু আলাইকুম,
বন্ধুরা, আজ একটি অন্যরকম বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। শিরোনাম দেখে হয়ত অনেকেই বুঝে গেছেন। যারা বুঝতে পারেন নি লিখাটি পড়লে আশা করি বিষয়টি তাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং সবার কাছে ভাল লাগবে।
সহীহ বুখারী শরীফের এক রেওয়ায়াতে এসেছে, “কোন এক সময় বনী ইসরাইল এর এক লোক ছিল। সে পেশায় ছিল ডাকাত আর খুন করা ছিল তার কাছে ডাল- ভাতের মত। সে তার জীবনে ৯৯ টি খুন করেছে। ৯৯ তম খুনের পর, তার মনে আল্লাহ ভীতির উদয় হলো। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল যে, সে তওবা করবে। যাবতীয় পাপ কর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা চাইবে।
ভাবনা অনুযায়ী সে তার এলাকার এক আলেম এর কাছে গিয়ে ঘটনার বিবরন দিয়ে বললঃ ‘আমি তওবা করতে চাই। আল্লাহ্ তায়ালা কি আমার তওবা কবুল করবেন?” সব শুনে আলেম সাহেব লোকটিকে নিরাশ করে দিয়ে বলল, “তোমার এত গুনাহ! আল্লাহ মাফ করবে না”। লোকটি তখন আলেমকে বলল, “ঠিক আছে আমার যেহেতু ক্ষমা নেই, তাহলে তোমাকে খুন করে আমার ১০০ খুন সম্পূর্ণ করি”। অতঃপর সে এই লোককেও খুন করে তার খুনের সেঞ্চুরি পুর্ণ করল।
এরপর তার মনে আরোও ভয় এসে ভীড় করলো। এবার সে অনেক খুঁজাখুঁজি করে এক বিজ্ঞ আলেম এর নিকট গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলল –
ঃ আমার তওবার কি কোন ব্যবস্থা আছে?
ঃ অবশ্যই আছে। কারন আল্লাহ্ তায়ালা চান তাঁর বান্দা তাঁর দিকে ফিরে আসুক। পর্বতসম গুনাহ নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হলেও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। কারন, বান্দার গুনাহ যত বড় হোক না কেন, আল্লাহর রহমতের পরিধি তারচেয়ে অনেক অনেক বিশাল। তোমার উচিত গুনাহ থেকে পরিপুর্ন তওবা করে এই গুনাহের পরিবেশ ছেড়ে ভাল পরিবেশে, অর্থাৎ নেককারদের পরিবেশ এ চলে যাওয়া। গুনাহের পরিবেশ না ছাড়লে গুনাহ থেকে বেচে থাকা কঠিনতর হয়ে যাবে।
পরিবেশ! হ্যাঁ পরিবেশ !! মানুষের মনের উপর এই পরিবেশ নামক প্রানহীন নিয়ামকের যথেষ্ট প্রভাব। ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় মানুষ এই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই পরিবেশ তাকে হয় ভাল কিছু দান করে নয় ভাল কিছু ছিনিয়ে নিয়ে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়।
ভাল পরিবেশ মানুষকে ভাল কিছু শিখায়। মূল কথা হলো, নেককারদের পরিবেশ অনেক ভাল কিছু শিখায়। অন্তত কিছু না শিখতে পারলেও নিজের অপুর্নতার জন্য অনুশোচনার অনুধাবন শিখায়। এটাই বা কম কিসে?
একজন সুগন্ধি বিক্রেতার কাছে গেলে যেমন না চাইতেই সুগন্ধ নাকে চলে আসে, কামার এর কাছে গেলে যেমন না চাইলেও আগুন এর স্ফুলিঙ্গ ছুটে আসে! স্ফুলিঙ্গ না আসলেও লোহার ঝনঝনানি শবদকে তো বেধে রাখা যায় না! ঠিক তেমনি আল্লাহ্ ওয়ালাদের পরিবেশ থেকে না চাইলেও আমল এর অনুশোচনা অন্তরে চলে আসে।
তবে সমস্যা এই যে, নেককার দের পরিবেশ কোথায় পাওয়া যাবে? যেখানেই যাই সব খানেই পাপাচার আর পাপীদের জয় জয়কার। হ্যা, আখেরি জামানায় এহেন পরিস্থিতি অসম্ভব কিছু না।
আপাত দৃষ্টিতে স্কুল, কলেজ, ইউনিভারসিটি কোথাও ভাল পরিবেশ বলতে কিছুই নাই। কিন্তু এদের মধ্যেও গুটি কতক ছেলে – মেয়ে নিজেদের কে যথেষ্ট হেফাযত করে চলছে। প্রতিনিয়ত এরা নিজ নিজ নফস এর সাথে জিহাদ করে চলছে।
একটু কষ্ট করে খুঁজলেই তাদের দেখা পাওয়া যায়। অনেককে দেখলে মনে হতে পারে, “আরে! আমি তো এদের থেকে অনেক ভাল আছি! এরা তো আমলে অনেক কমজোর”। হতে পারে আপনার ধারনাই সত্য, কিন্তু এরা সবাই তো মানুষ! আর কোন মানুষই স্বয়ংসম্পুর্ন নয়।
কিছু দ্বীনি ভাই বা বোনরা যে ইসলামি পরিবেশ কায়েম রাখছে বা রাখার চেষ্টা করছে, এদের সাথে যেই এসে যোগ দিবে সেই একটা ঈমানী পরিবেশ পেয়ে যাবে। হতে পারে আপনার দ্বারা এই ঈমানী পরিবেশটা আরো মজবুত হবে। ক্ষতি তো নেই!
যদিও বা আপাত দৃষ্টিতে ওইসব লোকের আমল কমজোর বা দুর্বল, কিন্তু এই পরিবেশে আল্লাহ্ তাদের দিল ও দেমাগ এর মধ্যে তওবার তৌফিক দেন। আর তওবা নসীবে জুটে গেলে আপনার মূল্য আরশে আজীমে অনেক বেড়ে যাবে!
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক আদম সন্তান ত্রুটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম লোক তারাই, যারা তওবা করে।” (তিরমিযী ২৪৯৯, ইবনে মাজাহ ৪২৫১)
মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সকলকে হেদায়াত ও উত্তম আমল নসীব করুন, আমীন।