কথায় আছে ,টেনশন ছাড়া মানুষ নেই। যে মানুষ তার টেনশন থাকবেই। পরিষ্কারভাবে বললে বলা যায় টেনশন ছাড়া মানুষ নেই। আমরা প্রত্যাহিক জীবনে প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে টেনশন করে থাকি। এই টেনশন আমাদের জীবনকে এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতায় নিয়ে যায়। আমরা সবাই চাই এই টেনশন থেকে মুক্তি লাভ করতে। আর এই টেনশন থেকে মুক্তি লাভ করতে আমরা কত কিছুই না করে বসি।
আমরা টেনশন থেকে বাঁচতে অনেক ধরনের পদ্ধতি এপ্লাই করি। আজকাল অনেকেই তো দেখা যায় টেনশনের কারণে ওষুধ খেতে। অতিরিক্ত টেনশন মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এখন সবচেয়ে ভয়াবহ একটি সমস্যা হল টেনশন। তবে একথা সত্যি যে মানুষ তার টেনশন করাটাই স্বাভাবিক। কারণ এটা আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।কিন্তু যখন এই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি তা আমাদের অসুস্থ করে তুলতে চায় তখন আমরা এর থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি। টেনশন থেকে বাঁচার কয়েকটি জাদুকরী কৌশল আছে। আপনি ইচ্ছা করলেই এই টেনশনকে অনেক দূরে রাখতে পারবেন।
টেনশন মানেই টেনশন।আসল কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক আমরা কিভাবে টেনশন থেকে মুক্তি লাভ করতে পারি।এটাকে আপনারা ভাবতে পারেন টেনশন থেকে মুক্তির সুপার মেথড। বর্তমানে অনেকগুলো পদ্ধতিতে টেনশন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার উপায় আছে। আমি আপনাদেরকে কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করছি, যদি কোনো না কোনো উপকার এর থেকে আপনারা পান তাহলে আজকের এই লেখাটি সার্থক হবে। টেনশন থেকে বাঁচতে আমরা সবাই চাই। কিন্তু টেনশন থেকে কিভাবে বাঁচব তার সহজ কিছু কৌশল আমরা জেনে শুনে ভুল করি। আসুন দেখা যাক সেই কৌশল গুলো কি ?কি?।
পজিটিভ চিন্তা করুন: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে আমরা সবকিছু নিয়ে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করি।আর এই নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করার কারণে আমাদের মাথার ভিতরে অদ্ভুত কিছু চিন্তা ধারা চলে আসে। আমরা সেগুলো নিয়ে নানান রকম অংক করতে থাকি। এক পর্যায়ে সেখান থেকে জন্ম নেয় কিছু অপ্রয়োজনীয়’ টেনশন। তাহলে দেখা যাচ্ছে নেগেটিভ চিন্তার কারণে টেনশন টা আমাদের মাঝে অটোমেটিকলি চলে আসে।
তাই সব কিছুকে পজিটিভ ভাবে মেনে নিন। কারণ আপনার সাথে যা কিছু ঘটছে সব কিছুই স্বাভাবিক। প্রকৃতির এক অনবদ্য নিয়ম হচ্ছে আপনার ভাগ্য। আপনি শত চেষ্টা করলেও তা কখনোই পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই অহেতুক কোন কিছু নিয়ে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করবেন না। এক গবেষণায় দেখা গেছে টেনশনের 70 শতাংশ আসে ব্লু নেগেটিভ চিন্তা থেকে। তাই আমাদের সাথে যাই কিছু ঘটুক না কেন সবকিছু কি স্বাভাবিক ভাবে, এবং সহজ দৃষ্টিতে পজিটিভ ভাবে মেনে নিন। দেখবেন আপনার টেনশন অনেকাংশে কমে গেছে।
সত্যি কথা বলুন:আপনি যদি সব সময় সত্যকে সাথে নিয়ে চলেন তাহলে দেখবেন আপনি অনেক জিনিস থেকে নিরাপদে আছেন। সত্যিই সে তো সত্যি। সত্যি কি অস্বীকার করার মতো ক্ষমতা পৃথিবীতে কোন মানুষের নেই। সত্য সবসময় সত্যিটাই বয়ে নিয়ে আসে। আপনি যখন দেখবেন কোন ঘটনার রিয়ালিটি এবং সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে আপনি মনে মনে ভেবে নিন এটাই বিধাতার মর্জি। সুতরাং সত্যি কে ভালবাসুন। এবং সবসময় সত্যের পক্ষে থাকুন।দেখবেন আপনার সেই সব ঘটনার রিয়াকশন গুলো আপনার কাছে খুব সহজভাবে মেনে নিতে কষ্ট হবে না। আপনি থাকবেন টেনশন মুক্ত।
তরল জাতীয় খাবার খাবেন: বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য মূলক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তরল খাবার গ্রহণ করেন তাদের মানসিক গ্রোথ অনেক ভালো। মনে রাখবেন এমন একটি জিনিস যা মানুষকে শীতল করে দেয়। তৈলাক্ত এবং মসলাযুক্ত খাবার মানুষের শরীরে নানা রকম ফাইবারে তৈরি করে। যেগুলো আপনার রক্তের সাথে মিশে গিয়ে, আপনার আচার এবং আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই চেষ্টা করবেন সবসময় তরলজাতীয় খাবার খেতে। এতেই আপনি একদিকে যেমন ফ্রি থাকবেন, তেমনি থাকবেন টেনশন মুক্ত।
সততা ধরে রাখুন: আপনি খেয়াল করে দেখবেন, যারা অসৎ পথে চলাচল করে, এবং অসৎ ভাবে ইনকাম করে, তাদের সমস্যার কোন শেষ নেই।আবার একটু খেয়াল করে দেখবেন যারা সৎ পথে থাকে, এবং সততার সাথে জীবন ধারন করে তাদের টেনশনের হারটা তুলনামূলকভাবে কম। অনেক রিচার্জ করে দেখা গেছে যারা প্রচুর পরিমাণ, ইনকাম করে এবং তা যদি হয় অসৎ পথে তাহলে দেখবেন তাদের টেনশনের কোন শেষ নেই।উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একজন দিনমজুরের রাত্রিবেলা ঘুমানোর জন্য কোন প্রটেকশন এর প্রয়োজন হয় না। সে নির্দ্বিধায় এবং মনের সুখে ঘুমোতে পারে। আবার একজন বড়লোকের দেখবেন, তাকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্য অনেকগুলো লোক রাখা হয়। তবু তার শান্তি মতো ঘুম হয় না। কারণ তার সব সময় টেনশন নামক বস্তুটি পাশে থাকে। আরে টেনশন টি তার নিজেরই সৃষ্টি করা। সুতরাং সব সময় সৎপথে এবং সততার শহীদ জীবন যাপন করার চেষ্টা করবেন।
বেশি রাত্রি করে ঘুমাবেন না: ঘুম এমোনি একটি বস্তু যা আমাদের মানব জীবনে 1 অসাধারণ সিস্টেম। ঘুমের তুলনা কোন কিছুতেই হয় না। পাকিতিক ভাবেই মানুষ ঘুমাবে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম ও প্রকৃতির এক চরম বাস্তবতা। এখন ভেবে দেখুন ঘুম কতটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানবজীবনে। আমরা সাধারণভাবে রাত্রিবেলা ঘুমোতে যাই। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে দিনের বেলার চাইতে রাত্রে ঘুমানোর ট্রাই উত্তম। কারণ এতে আমাদের পরের দিনের কাজের জন্য এনার্জি সেভিং থাকে। সুতরাং যারা পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান তাদের কার্যক্ষমতা একজন অনিয়মিত যারা কম ঘুমান তাদের চাইতে বেশি। সুতরাং ঘুম কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা নিয়ে বর্ণনা করতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আমি ছোটখাটো ভাবে বলে দিলাম আপনারা রাত্রিবেলা প্রয়োজনমাফিক ঘুমিয়ে নিবেন। আপনি যত ঘুমাবেন ততো আপনার টেনশন কমতে থাকবে।
ধূমপান ছেড়ে দিন: নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা সাধারন মানুষ অধূমপায়ী/আর যারা ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন তাদের মধ্যে অনেক রকমের পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে যায়। ধূমপান ক্ষতিকর এটা আমরা সবাই জানি।তবে আপনি জানেন কি এই ধূমপানের কারণেই আপনার টেনশন কাজ আপনাকে ছাড়ছে না। আমরা অনেকেই ভুলবশত মনে করে থাকি যে টেনসনে পড়লে আমরা স্মোকিং, এখন একটি কমন ব্যাপার।কিন্তু আসল ঘটনা হলো আমরা পুরো জিনিসটাই উল্টো করছি। আপনি ভেবে দেখুন ধূমপান যখন আপনি করছেন, তখন কি সত্যি সত্যিই আপনার টেনশন কমে যাচ্ছে।খেয়াল করে দেখবেন সেটিতো কমছেই না বরং একের পর এক আপনি ধূমপান করে যাচ্ছেন আর আপনার মাথাটা সব সময় টেনশনে টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছে।ধূমপানের কারণে টেনশন কমে এ ধরনের প্রবাদে বিশ্বাসী না হয়ে এখনো সময় আছে ধূমপান ছেড়ে দিন। আপনি ধূমপান ছেড়ে দিলে আপনার মানসিক অবস্থার 90% উন্নয়ন সাধন সম্ভব। সুতরাং আজি ধূমপান ছেড়ে দিন। টেনশন মুক্ত সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করুন।
চাহিদা সীমাবদ্ধ রাখুন:আমাদের সবচেয়ে বড় যে ভুলটি হলো সেটি আমাদের চাহিদার কোনো শেষ আমরা রাখতে চাই না/একটি চাহিদা পূরণ হতে না হতেই আমরা নতুন কোনো চাহিদা সৃষ্টি করে ফেলি।আর সেই চাহিদা পূরণ না হওয়ার কারণে আমরা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত থাকি। আমরা নিজেকে অসুখী অসুখী ভাবতে থাকি। এবং নানান রকম টেনশন আমাদের মাঝে অটোমেটিক তখন চলে আসে। আর এই কারনে আমরা সব সময় টেনসনে ভুগে থাকি। আমরা আমাদের চাহিদাকে সীমাবদ্ধ রাখবো। মানুষ হিসেবে আমরা জন্ম নিয়েছি।পৃথিবীতে আমাদের কিছু চাওয়ার পূর্ণতা থাকবে আবার কিছু চাওয়ার অপূর্ণতা থাকবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। আপনার সব চাওয়া আপনি পূর্ণ করতে পারবেন না। সেটা কখনোই সম্ভব নয়। পৃথিবীতে কোন মানুষই স্বয়ংসম্পূর্ণ না। আমরা সবাই জানার পরও আমরা সবাই টেনসনে ভুগে। সুতরাং আপনি আপনার চাহিদার সীমাবদ্ধতা করে নিন।দেখবেন টেনশন নামক জিনিসটি থেকে আপনি খুব সহজেই মুক্তি লাভ করে ফেলেছেন।আর তা না হলে আপনি আপনার অপূর্ণ ইচ্ছাগুলোর জন্য সারাজীবন টেনশন করতে থাকবেন।আর কোনদিন আপনি এর থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন না।
ধর্ম কর্মে মনোযোগ দিন: দেখুন আমরা পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছি। আর মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার কারণে আমাদের একটি নির্দিষ্ট ধর্ম এবং জাতির মানুষ হিসেবে আমরা পরিচিতি লাভ করি। আমরা যে যে ধর্মের লোক হয়না কেন। ধর্ম-কর্ম করতে আমাদের কার না ভালো লাগে।নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ধর্মচর্চা করে তারা অন্যদের থেকে একটু আলাদা।অতিরিক্ত বিশ্বাসের কারণে তাদের বডিতে ভিতরে এক ধরনের নতুন কিছু সৃষ্টি হয়। যা তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। মনকে সবসময় চাঙ্গা রাখে। তারা ভাবতে থাকে তারা সৃষ্টিকর্তার খুব কাছাকাছি।আরে সৃষ্টিকর্তার উপর অগাধ বিশ্বাস থাকার কারণে তারা ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সুখী থাকে। সুতরাং আপনার টেনশন থেকে মুক্তি লাভের সবচাইতে ভালো একটি পন্থা হতে পারে আপনার ধর্ম চর্চা। সে আপনি যে ধর্মেরই লোক হন না কেন।আজ থেকেই আপনি ধর্ম চর্চা শুরু করুন দেখবেন আপনার জীবনের প্রায় 99% সমস্যা আপনি নিজেই সমাধান করে ফেলতে পারবেন।
বন্ধুরা টেনশন থেকে মুক্তি লাভের উপায় আছে আমি শুধুমাত্র কয়েকটি উপায় বললাম অন্য কোনদিন সময় হলে বাকি গুলো লিখে ফেলব ইনশাল্লাহ।
লেখাটির যদি ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্টস করে জানাবেন।কারন আপনাদের একটি মন্তব্য আমাদেরকে নতুন একটি লেখা নিয়ে আসতে উৎসাহিত করে।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আশা করি আপনি টেনশন মুক্ত থাকতে পারবেন।