আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার এক ভয়ানক এক্সিডেন্ট হয়৷ এক্সিডেন্টটা কি, কিভাবে, কখন হয় তা আমি জানি না৷ মা বাবার কাছ থেকে অনেকবার জানতে চেয়েছিলাম কিন্তু তারা বলেননি৷ শুধু বললেন সেই এক্সিডেন্ট এর কারণেই আমি আজ পঙ্গু৷ জানেন? যখনই আমি খোড়াতে খোড়াতে রাস্তায় হাটি তখন মানুষ আমার দিকে খুব বিশ্রীভাবে তাকায়! এমনভাবে তাকায় যেন আমার এই পঙ্গুত্ত্বের জন্য আমি নিজেই দায়ী৷ পরিবার এর আত্মীয় স্বজন তো আমার বোঝাতুল্য ভাবে৷ তো যাক গে সেসব কথা থাক৷ আমি বরং আমার মতো একজন পঙ্গুর প্রেমে পড়ার গল্পই আপনাদের শুনাই৷
প্রায় বছর খানেক আগের কথা!
তখন আমি কলেজে পড়তাম৷ হ্যাঁ তখনও আমি পঙ্গুই ছিলাম৷ অনেক কষ্ট করে, বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে ভর্তি হয়ে গেলাম কলেজে৷ কয়েকদিন এর মধ্যেই আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু৷ সবাই বলতে লাগলো বামুন হয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন৷ মাঝে মাঝে ওদের কথা শুনে কান্না পেত৷ কলেজের সব ছেলে মেয়েই সামনাসামনি বা পিছনে আমাকে নিয়ে প্রচুর হাসাহাসি করতো৷ একদিন একটা মেয়ে এসে দাড়ালো আমার সামনে৷ এসে বললো, ‘ আপনি এইরকম ভেঙ্গিয়ে চেঙ্গিয়ে হাটেন কেন? ‘ আমি একটু হেসে বললাম, ‘ তার আগে আপনি বলুন, আপনি এমন মুখ ভেঙিয়ে কথা বলেন কেন?’
মেয়েটা আমার কথা শুনে ক্রোধে-অপমানে লাল হয়ে চলে গেলো৷ পরদিন কলেজে লাইব্রেরিতে তার সাথে দেখা৷ ভাবলাম আমাকে হয়তো গালাগাল দিবে৷ কিন্তু তা না করে মেয়েটা আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার কাছ থেকে ক্ষমা চাইলো৷ এবং বলল, ‘ আমি দুঃখিত৷ আপনার অসহায়ত্ব নিয়ে ঠাট্টা করা উচিৎ হয় নি৷ আমি আসলে এমন মেয়ে নই৷ আমার বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এমন করলাম৷ ‘ আমি বললাম, ‘ যার সর্বাঙ্গে ব্যাথা তাকে আর নতুন করে কি ব্যাথা দেওয়া যায়?
এই ধরনের কথা শুনে আমি অভ্যস্ত৷ কিছু মনে করিনি আমি আপনার সেদিনের কথায়৷ ‘ মেয়েটি তখন মৃদু হেসে বলল, ‘ চলুন তাহলে আমরা একটু ঘুরে আসি। ‘ আমি বললাম, ‘ চলুন, যাওয়া যাক৷ ‘ কিন্তু হায়! আমি কি বোকা ছিলাম তখন।! মানুষের মনের আসল রূপ বুঝার ক্ষমতা যে আমার ছিল না৷ মেয়েটা যে আমার জন্য একটা ফাদ পেতেছিল, তা কি আর আমি জানতুম? মেয়েটার সাথে হাটতে হাটতে আমি একটা গর্তে পড়ে গেলুম৷ তাকে বললাম, ‘
আমি যে গর্তে পড়ে গিয়েছি৷ আমাকে উঠান৷ ‘ মেয়েটা এবার মুখ ভেংচিয়ে বলল, ‘ তুই নিজে নিজে উঠ ব্যাটা৷ আমাকে সেদিন অপমান করেছিলি না? এবার বুঝ মজা৷ ‘ তারপর অট্টহাসি হেসে চলে গেল৷ কয়েক মুহুর্ত পর বই হাতে একটা মেয়েকে দেখতে পেলাম গর্তের দিকে উকি মেরে বলছে, ‘ এত বড় গর্ত কে রে করল বাবা!’ তারপর আমার দিকে চোখ যেতেই বলল, ‘এই যে মহাশয়! আপনি কে গো? এমন করে গর্তের ভিতরে চুপ করে বসে আছেন কেন? ‘
আমি বললাম, ‘এখানে পড়ে গিয়েছি৷ উঠতে পারছি না। ‘ মেয়েটা সাথে সাথে তার একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘ উঠে পড়ুন। ‘ আমি মেয়েটার মুখের দিকে ভালো করে তাকালাম৷ তারপর তাকালাম মেয়েটার চোখের দিকে এবং ঠিক সেই মুহুর্তে আমি তার প্রেমে পড়ে গেলাম৷ কেমন যেন দিশেহারা হয়ে গেলাম৷ মনে হল যেন আমি অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করছি তার জন্য। কেবল তারই জন্য!