আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। এই পোস্টে পদ্মা সেতুর বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হলাম । তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
পদ্মা সেতুর বর্তমান অবস্থা
ঢাকা ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেলসেতু। চলতি বছরের ২৫ জুন তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেলা পৌনে বারোটার দিকে সেতুটি উদ্বোধন করেন। সেতুটির পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল আরো দুই যুগ আগে। এরপর এবছরের ২৫ জুন তারিখে, বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এই সেতুটির উদ্বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি জেলা, রাজধানী ঢাকা ও দেশের বাকি অংশের সাথে যুক্ত হয়েছে।
এতে করে মানুষের ফেরিতে পারাপারের ভোগান্তি কমেছে। সেই সাথে খুলে গেছে সম্ভাবনার নতুন নতুন দ্বার। নৌপথে পাড়ি দিতে যেখানে আগে ঘন্টার পর ঘন্টা লেগে যেত, এখন সেতুর মাধ্যমে সড়কপথে পাড়ি দিতে মাত্র সাত মিনিট লাগে। সেতুটি মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে নির্দিষ্ট পথের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটিয়েছে।
সেতু উদ্বোধনের দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু ২৬ জুন ভোর ৬টা থেকে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয় যানবাহন চলাচলের জন্য। ১ম দিনে সেতুর উপর দিয়ে ৫১ হাজার ৩১৬ টি যানবাহন চলাচল করে। সেতু খুলে দেয়ার ১ম ৪১ দিনের দৈনিক হিসেব থেকে জানা যায়, সেতুর উপর দিয়ে ৪১ দিনের প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে এবং মোট হিসাব থেকে জানা যায়, এই ১ম ৪১ দিনে মাওয়া ও জাজিরা দুই প্রান্তের টোল প্লাজা দিয়ে মোট ৮ লাখ যানবাহন চলাচল করেছে। মোট টোল আদায় হয়েছে ১০০ কোটিরও বেশি। সেতু চালুর প্রথম দুই মাসে অর্থাৎ ৬০ তম দিন পর্যন্ত মোট টোল আদায় হয়েছে ১৩৮ কোটি ৮৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা। এই সময়ে মোট ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩৫ টি যানবাহন সেতুটি অতিক্রম করেছে।
গত ১ সেপ্টেম্বর, সেতু উদ্বোধনের ৬৮ তম দিনে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা পদ্মা সেতু রক্ষার দায়িত্ব হস্তান্তর করেন আনসার বাহিনীর হাতে। ১ সেপ্টেম্বর থেকে সেতু নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন আনসার বাহিনীর সদস্যরা। ৩১ আগস্ট, বুধবার, সেতু কতৃপক্ষের সাথে সেনাবাহিনীর চুক্তি শেষ হওয়ায় এই দায়িত্ব হস্তান্তরিত হয়।
২০১২ সাল থেকে পদ্মা সেতু নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত ছিলেন প্রায় ৩ হাজার সেনাবাহিনীর সদস্য। সেতুর নির্মাণাধীন কাজ শুরু হওয়ার পর বিভিন্নভাবে ফোর্স গঠন করে সেতুকে ঘিরে রাখে। নির্মাণ কাজ চলাকালীন ও কাজ শেষে উদ্বোধনের পর সব মিলিয়ে টানা ১০ বছর ধরে সেতুটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন সেনাবাহীনার সদস্যরা।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী জানান যে, সেতুর নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং টোল আদায়ের জন্য বিদেশি ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তারাই সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তাই এখন বিদেশি কোম্পানীর অধীনে আনসার বাহিনী সেতুর নিরাপত্তার কাজে থাকবে।
তিনি আরো জানানা, সেতুর দুই প্রান্তে সেনানিবাস করা হয়ছে। নামকরণ করা হয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস। বর্তমানে দায়িত্ব হস্তান্তরের পর সেনাবাহীনির সদস্যরা এই সেনানিবাসে অবস্থান করবেন। তবে প্রয়োজন মোতাবেক সরকার আবার সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেতুতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ভাঙ্গা জনফশনে রেললাইন স্থাপনের কাজ চলছে। গত ২০ আগস্ট, শনিবার, দুপুর ১২ টায় রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন এই কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন কালে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে তার বক্তব্যে বলেন, ২০২৩ সাল থেকে পদ্মা সেতুর উপর ভাঙ্গায় রেল চলবে। এই প্রকল্পটির আওতায়, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হবে।
সেতুতে রেল সংযোগের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। পরিকল্পনা ছিল যে, সেতুতে যানবাহন চলাচলের সাথে সাথেই রেল চলাচলও শুরু হবে। কিন্তু রেললাইন বসানো সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পিছিয়ে থাকায় প্রকল্পটি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতে পারেনি। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২৪ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত।
২৬ জুন থেকে আজ ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন তথ্যসূত্রের তথ্য হতে জানা যায়, বাঙালির স্বপ্নের সারথী পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণের ২১ জেলা ও রাজধানী ঢাকার সরাসরি সংযোগে অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে, অগ্রসর হচ্ছে উন্নয়নের পথে। সেতুর উপর দিয়ে দিনরাত স্বাচ্ছ্যন্দে যানবাহন চলাচল করছে। চারদিকে বইছে দিন বদলের হাওয়া।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।