প্রথম অবস্থায় পৃথিবী একটা বিগলিত ধাতুর প্রচণ্ড জ্বলন্ত অগ্নিপিও ছিল। কালক্রমে ক্রমশ তাপ বিকিরণ করে শীতল হতে হতে
বহির্দেশ জমাট বেঁধে শক্ত শিলায় পরিণত হয় এবং পৃথিবীর আবর্তন গতির দরুন অপেক্ষাকৃত ভারী ধাতৰ সামগ্রী
(নিকেল-লৌহ সংকর ইত্যাদি) পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডলে গলিত অবস্থায় সজ্জিত হয় এবং ধাতুমলে বহির্ভূত সৃষ্টি করে। এ
জমাটবদ্ধ বহিষ্ঠই প্রাথমিক শিলা বা প্রাথমিক পাথর।
আদিকালের মানুষের আত্মরক্ষার হাতিয়ার ছিল পাথর। কালক্রমে এ পাথর নির্মাণের প্রধান উপকরণে পরিণত হয়। পাথর
খুবই শক্ত, মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী সামগ্রী। সড়ক, সেতু, টাওয়ার, ইমারত ইত্যাদি নির্মাণকার্যে পাথর ব্যবহার করা যায়। নির্মাণ
কাজের সার্বিক দিক বিবেচনা করে পাথর নির্বাচন করলে আবহাওয়া ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া পাথরের তেমন
ক্ষতিসাধন করতে পারে না। নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত সামগ্ৰীসমূহের মধ্যে পাথরের ন্যায় স্থায়িত্বশীল সামগ্রী অন্য আর একটিও
নেই বিধায় পাথরকে নির্মাণ সামগ্রীর রাজা বলা হয়।
👉পাথরের সংজ্ঞা
(Define Stones)
পাথর মূলত প্রাকৃতিক উপায়ে গঠিত জটিল রাসায়নিক যৌগ বিশেষ। অনেক খনিজ পদার্থের জটিল রাসায়নিক যৌগই পাথর।
এর উৎপত্তির ক্ষেত্রে খনিজসমূহের রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়ে থাকে। বহুবিধ খনিজ সামগ্রী দীর্ঘমেয়াদি
প্রাকৃতিক তাপ, চাপ ইত্যাদির প্রভাবে জটিল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জমাটবদ্ধ হয় এবং পাথরের উৎপত্তি ঘটায়। খনিজসমূহের
ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের উপর পাথরের গঠন, বুনট, রং, ভঙ্গুরতা, শক্ততা, চুম্বকতা, আপেক্ষিক গুরুত্ব, ওজন ইত্যাদি
নির্ভর করে।
যে সকল পাথর প্রকৃতি প্রদত্ত শিলা হতে সংগৃহীত, শক্ত, দৃঢ়, সমসত্ব, অগ্নিরােধী, ক্ষয়রােধী, টেকসই, ওজনে ভারী, কাজের
উপযােগী আকার-আকৃতি, তাপ ও চাপ সহন ক্ষমতাসম্পন্ন ইত্যাদি গুণাবলি সম্পন্ন পাথরকে নির্মাণ পাথর বলে। অর্থাৎ নির্মাণ
কাজে ব্যবহৃত পাথরকেই নির্মাণ পাথর বলে ।
👉পাথরের উপাদান
(Composition of Stones)
প্রায় দু’শত খনিজ উপাদানে গঠিত পাথরের মধ্যে যে সমস্ত উপাদানের মােটামুটি একটা প্রকৌশলগত ব্যবহারিক গুরুত্ব রয়েছে
নিম্নে তা বর্ণনা করা হলাে ।
(১) কোয়ার্টজ (Quartz) : এটি এক প্রকার শক্ত খনিজ দ্রব্য বিশেষ। যেমন- সানাদর সিলিকা। কোয়ার্টজ হয়ে সিলিকন-
ডাই-অক্সাইড বা বিশুদ্ধ বালি। এটি বেলে পাথর, গ্রানাইট বা নিস (gmeiss) পাথরে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটি
অভঙ্গুর স্বচ্ছ কেলাস গঠনসমৃদ্ধ। কোয়ার্টজের আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.5 থেকে 2.7। রঙিন কোয়ার্টজ কণার মধ্যে বিভিন্ন
ধরনের ধাতব অক্সাইড বর্তমান থ্যকে।
(২) ফেলসপার (Feldsper) : এটি এক প্রকার কেলাসিত খনিজ শিলাবিশেষ। সকল প্রকার আগ্নেয় পাথরে এটি পাওয়া
যায়। এর আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.5 থেকে 2.8।
(৩) মাইকা (Mica) : মাইকা অর্থ অভ্র। এটি এক প্রকার খনিজ ধাতুবিশেষ। এটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এলুমিনিয়াম সিলিকেট।
এর আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.4 থেকে 3.2। যেহেতু মাইকা পচনশীল সেহেতু পাথরে এর অতিরিক্ত উপস্থিতি পাথরকে দুর্বল
করে দেয়।
(৪) এমফিলে (Amphibole) : এটি সােডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও অ্যালুমিনিয়ামের জটিল
সিলিকেট। এটি হর্নব্লেন্ড (Hornblende) নামেও পরিচিত। এর গঠন দানাদার এবং খুব বড়। এর কাঠিন্য নম্বর 55
এবং আপেক্ষিক গুরুত্ব 3.2। এর রং কালাে হতে সবুজ হয়ে থাকে।
(৫) হর্ণব্লেন্ড (Hornblende) : এটি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের সিলিকেট বিশেষ। আপেক্ষিক গুরুত্ত্ব 27 থেকে
3.2। হর্নফ্লেভের রং গাঢ় সবুজ অথবা কালাে। ইহা কেলাশিত, শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী তবে ভঙ্গুর। ইহা অধিকাংশ
আত্মের পাথরের অপরিহার্য উপাদান।
(৬) পাইক্সন (Pyroxene) : এটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, অ্যালুমিনিয়ামের জটিল সিলিকেট। এটি অস্থায়ী
নামেও পরিচিত। এর বুনট খুবই শক্ত। এটি হর্নল্লেভের মতাে, তবে অপেক্ষাকৃত ভারী । এর কাঠিন্য 5 – 5
আপেক্ষিক গুত্ব 23.3.6।
(৭) অগাইট (Augita) : এটি হর্নব্লন্ডের মতােই। আপেক্ষিক গুরুত্ব 3.3 থেকে 3.6 অগাইট কেলাস গঠনসমৃদ্ধ
কোন (Deccan) এবং ট্রাপ পাথরের বহিরাবরণে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়।
(৮) অলিলি (Olivine) : এটি ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন ও সিলিকার দ্বারা গঠিত। প্রায় সকল ব্যালাস পাথরেই ।
উপস্থিতি লক্ষনীয়। এটি কাচের মতাে মসৃণ, রং হলুদাভ সবুজ এবং খুব শক্ত। এর কাঠিন্য নম্বর 6.5 এবং আপেক্ষিক
S35।
(১) কালসাইট (Calcite) : এটি ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3)। চুনাপাথর ও মার্বেল পাথরে এর আধিক্য পরিলক্ষিত
হয়। এর গঠন দানাদার, তবে খুব শক্ত নয়। এর রং সাদা, তবে ধূসর রঙেরও হতে পারে। এর কাঠিন্য নম্বর 3 এবং
পক্ষিক উজ27।
(১০) গারনেট (Garnet] : এটি লাইম অ্যালুমিনা বা ম্যাগনেসিয়া অ্যালুমিনার জটিল সিলিকেট বিশেষ। এতে কিয়ৎ পরিমান
ম্যাসানিজ ও আয়রন থাকতে পারে। এটি সাধারণত সবুজ রঙের, বুনট দানাদার। এর কাঠিন্য নম্বর 7 এবং আপেক্ষিক
(১১) ম্যাগনেসাইট (Magnesite) : এটি ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট। এটি মিহি দানার দৃঢ় বুনটে তৈরি এবং রং সাদা ব
।
(১২) ক্যালসিয়াম কার্বনেট (Calcium carbonate) : এটি চক, চুনাপাথর এবং চুর্ণক পাথরের প্রধান উপাদান। এটি
এবং কলি পথরে বন্ধন সায়ী হিসেবে পাওয়া যায়। এর আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.7 থেকে 2.9।
(১৩) অসকেট (Asbestos) : এটি আঁশালাে খনিজ পদার্থ। এটি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের সিলিকেট, অs
অক্সাইড ও অ্যালুমিনার সমন্বয়ে তৈরি। এর রং ধূসর বাদামি ও ফিকে কালাে। আঁশে আঁশে খুলে খুলে যাওয়ার হে
ওবলি এতে বিদ্যমান। তাই এটি শক্ত নয়।
(১৪) ভােলামাইট (Dolomite) : এটি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট দ্বারা গঠিত। এটি ক্যালসাইট অপেক্ষা
ডেলােমাইটিক চুনাপাথর ও ডােলােমাইটিক মার্বোল এর উপস্থিতি দেখা যায়। এর গঠন স্কটিক দানাযুক্ত এবং রং
হতে ধূ এত আপেক্ষিক গুরুত্ব 2.86।
(১৫)আয়রন অক্সাইড (Iron Oxide) : আয়রন অক্সাইডের তিনটি ভিন্নরূপ হলাে :
( হেমাটাইট : এর রং বাদামি কালাে-হলুদ, বুনট দানাদার বা আঁশালাে
[il| লিমেনাইট : এর রং বাদামি কালাে-হলুদ, বুনট দানাদার বা আঁশালাে।
(ii) ম্যাগনেটাইট । এর রং কালাে এবং বুনট দানাদার ।
📢 Promoted post: বাংলায় আর্টিকেল লেখালেখি করে ইনকাম করতে চান?
Okay
ফালতু কথা বার্তা।
ধন্যবাদ
Thank you
❤️