আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিয্য। কিন্তু কখনো তা স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপরিচয় তুলে ধরতে পারেনি। আলেকজান্ডারের সাথে আসা ইতিহাসবিদ, চীনের পর্যটক হুয়েন সুঙ -( Huyen Sung ) কিংবা মরোক্কোর ইবনে বতুতার বিবরণীতে গঙ্গা-পাড়ে বঙ্গের নাম বার বার উঠে এলেও বৃহৎ ভারত বর্ষের কোন এক অঙ্গবাজ্য বা প্রদেশ হিসেবেই তার পরিচয় মেলে। ১৯০৫-১৯১১ পর্বে পূর্ব-বাংলার অধিবাসীদের আঞ্চলিক শাসনের খানিকটা স্বাদ পাবার পর হঠাৎ করেই তা শেষ হয়ে গেলে নানাভাবে ব্রিটিশ শাসকরা এ অঞ্চলের ডায়নাসরদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই প্রচেষ্টার অন্যতম এক উদ্যোগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পূর্ব-বাংলার উপক্ষিত সংখ্যাগুরু মানুষের মন থেকে বঞ্চনার অভিযোগকে স্তিমিত করার জন্যই হয়তো আবার বাংলাকে ভাগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৪৮ সাল, শুরু ভাষা রক্ষার আন্দোলন। অমানবিক, অগনতান্রিক, নিীপরনবাদী পাকওসৃতানি রাষ্ট্র পূর্ব-বাংলাকে বন্দি বাজার হয়েই ক্ষান্ত হল না, তার অধিবাসীদের মূখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নিতে চাইলো। বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা না করার সিদ্ধান্তে বাঙালির মনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ প্রকাশের উদ্দেশ্যে তার দেশ ব্যাপী প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। আটচল্লিশে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন ব্যপক রুপ নিতে শুরু করলো। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের ওপর শুরু হল গুলি। রফিক, জব্বার, সালাম, বরকের মত ঝরে পরলো অনেক তরুন প্রাণ। তরুন ছাত্রনেতা তখন জেলে বন্দি, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা,দিবসে বন্দি হয়েছিলেন আন্দোলনের অগ্রসৈনিক তরুন রাজনীতিজ্ঞ শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিপেয়ে তিনি আরও বেগবান করলেন ছাত্রদের রাষ্ট্র ভাষার আন্দোলন। ফের গেলেন জেলে। জেলেও বসে ছিলেন না। যোগাযোগ রেখেছিলেন আন্দোলনের বড় ছাত্রনেতা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে। ধীরে ধীরে তিনিই হয়ে উঠলেন বাঙালির আশা ভরসার প্রতিক। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর বাঙাকিকে আর তাই পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিটি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন শেখ মুজিব। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি তিনি প্রথমে প্রাদেশিক পরিষদে, পরে জাতীয় আইন পরিষদে পূর্ব-বাংলার অবহেলিত জনগণের পক্ষে ব্যাপক আওয়াজ তোলেন। কেন্দীয় পাকিস্তান সরকার পূর্ব-বাংলার প্রতি যে-অন্যায্য আচরণ করছিল তিনি তা প্রাণ্জল ভাষায় পরিষদে তুলে ধরেন। তখনই তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, এভাবে চললে পূর্ব-বাংলা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাঠামোর ভিতর থাকতে পারবে না। তাই বৈষম্যমূলক আচরনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সুযোগ পেলেই তিনি জোরালো বক্তব্য তুলে ধরতেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝিতে তিনি বাঙালির মুক্তিসনদ ৬-দফা উপস্থাপন করে হয়ে গেলেন তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিক। সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে তিনিই প্রথম কার্যকর ভাবে চ্যালেণ্জ করে বার বার জেলে যায়। এক পর্যায়ে সাহসি এই নেতাকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ‘ আগরতলা ষরযন্ত্র মামলা’র প্রধান আসামী করা হলো। তিনিই বীর যিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। শেখ মুজিবকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করনো গেলে তিনি নিশ্চিত ফাঁসিতে ঝুলতেন। কিন্তু মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে অদম্য সাহসের সঙ্গে তিনি লড়েছেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে। ততদিনে তিনি সারা পূর্ব-বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। কার্যত জেলের তালা ভেঙ্গই ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুথানের চূরান্তপর্বে শেখ মুজিবকে মুক্ত করে এনেছিলেন সংগ্রামী ছাত্র জনতা। তাদের অকৃতিম ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি হয়ে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। পতন হল স্বেচ্ছাচারী আইয়ুবের। ইয়াহিয় খান নয়া শামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহন করলেন। নির্বাচন দিলেন। নির্বাচনী প্রচারনার মাধ্যমে ৬-দফার ছায়াতলে সমবেত করলেন বঙ্গবন্ধু। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী হয়েও তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের জান্তা এলিটদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারলেন না। ফলে পূর্ব বাংলার বঞ্চিত মানুষদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ করে শুরু করলেন অসহযোগ আন্দোলন। একাত্তরের মার্চ জুরে এই আন্দোলনে কার্যত স্বাধীন বাংলাদেশের শাসারভার তিনি হাতে নিলেন। ব্যাংক, বীমা, পুলিশসহ সকল কর্মকর্তা তারই নির্দেশ সে -সময় চলেছেন। কিছুদিন আলোচনার ভান করে ইয়াহিয়া -ভুট্টো মিলে ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করলেন। সারা দুনিয়ায় ‘বাংলাদেশ’ আর ‘শেখ মুজিব’ শব্দ দু’টি সমার্থকভাবে উচ্চারতিত হতে লাগলো। শুরু হলো দুঃখী মানুষের গৌরবান্বিত মুক্তিযদ্ধ। বঙ্গবন্ধু বন্দী হলেন। তখনই অন্নদাশঙ্কর রায় লিখলেন ‘যতদিন রবে রবে পদ্মা, যমুনা, গৌরী, মেঘনা বহমান/ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। পশ্চিম পাকিস্তানে এক জেলের অভ্যন্তরে সামরিক আদালডে তার বিচার হলো। তাঁকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়া হল। এবারও তিনি মাথা নোয়ালেন না। সাহসের সঙ্গে মৃত্যুকে মোকাবিলা করলেন। বিশ্ব-নেতৃবৃন্দের চাপ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমর-সাফল্যের কারণে তিনি মৃতুর মুখ থেকে ফের বীরের মতো মাথা উঁচু করে ব্রিটেন ও ভারত হয়ে স্বদেশ ফিরে এলেন। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ-প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই রচিত হলো ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে’ তর যাত্রার প্রথম পর্বের শেঘ অঙ্ক। এরপর তিনি বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিলেন। সারা পৃথিবী থেকে তিনি পেলেন শুভেচ্ছা, সমর্থন। কিন্তু বাংলাদেশকে যারা চায়নি তারা নানা ষড়ন্ত্রের জাল বিছাতে থাকেন তার সকল শ্রম ও চেষ্টা ধ্বংস করার জন্য। তাছাড়া অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সমাজে বেশ খানিকটা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা দানা বেঁধেছিল। এই আপাতবিভ্রান্তির চোরাগলি দিয়ে ঢুকে পড়ে ষড়যন্ত্রকারীর দল। সামরিক বাহিনির ক্ষুদ্র একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা রাতের অন্ধকারে বাঙালির একমাত্র ভরসাস্থল প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার দুই কন্যা বিদেশে থাকায় বেঁচে গেলেন। এভাবে শারীরিক ভাবে নিঃশেষ হয়ে গেলেও বাঙালির জাতীয় বীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বাঙালির মন থেকে তাকে মুছে ফেলার হাজার চেষ্টা বিফলে গেছে। আজও তিনি আরও বড় হয়ে বাঙালির হৃদয়ে আসন করে করে নিয়েছেন। ইতিহাস ফের আমাদের সেরকম রাষ্ট্র গড়ার জন্য সুযোগ দিয়েছে। আমরা যেন এ সুযোগ হেলায় না হারাই। আমাদের সুকর্মের মাধ্যমেই তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন। তাঁর কাজেই আমাদের অস্তিত্বের ঋণ। আর সে-কারণেই নিরন্তর মনে হয়, বঙ্গবন্ধু তিনিই বাংলাদেশ।
Related Posts
The great drummer Nicko McBrain from legendary British heavy metal band Iron Maiden has said he will no longer be…
In the world of mixed martial arts (MMA), few names have risen as quickly and impressively as Tom Aspinall. Hailing…
As the cryptocurrency market continues to evolve, the push for Exchange-Traded Funds (ETFs) centered on digital assets is gaining momentum.…
Robert James Ritchie, better known by his stage name Kid Rock, has had one of the most eclectic and fascinating…
Islam Ramazanovich Makhachev, the reigning UFC Lightweight Champion, has emerged as one of the most dominant forces in mixed martial…
4 Comments
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
❤️
Ok
Nice
gd