জীবনসঙ্গিনীর খোঁজে নিজের দীর্ঘকালের আবাসস্থল ত্যাগ করে অন্য বনে চলে যাওয়া হাতিটা; আজ সে বন শত্রুমুক্ত করতে চায়। মানুষের কথা আসে পরে, প্রথমে আসে বনের বাসিন্দাদের কথা। তারাই সে বনের প্রধান শত্রু। তাদের কারণেই বনবাসীরা নিজেদের বাসস্থান হারাচ্ছ, নিজেদের পরিবার হারাচ্ছে।
(এ গল্পের প্রথম পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব – ১ )
(এ গল্পের দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব – ২ )
একদিন হাতিটা দূরের একটা পাহাড়ে দলবেঁধে কিছু একটা আসছে, এমনটা দেখতে পায়। এক কৌতূহলোদ্দীপক মন নিয়ে সে সেদিক পানে এগিয়ে যায়। আশ্চর্য! এটা একটা হাতির পাল!
সে খুব খুশি হয়ে যায়। দ্রূত এগিয়ে গিয়ে অন্য হাতিদের সাথে খোশআলাপ শুরু করে দেয়। অন্যরাও খুশি হয় একটা অনাথ হাতিকে দলভুক্ত করতে পেরে।
দলের মধ্য থেকে একটা মেয়ে হাতিকে পছন্দও হয়ে যায় হাতিটার। নিজ থেকে গিয়ে কথা বলে মেয়ে হাতিটার সঙ্গে। কিছুদিন তাদের আলাপ-সালাপ চলে। অতঃপর প্রেমে পড়ে যায় একে অপরের।
মানুষের মতোই তাদের মাঝেও বিয়ে হয়। সংসার হয়। তারাও দলবেঁধে বেড়াতে যায়। বাচ্চাকাচ্চা হয়। সবকিছু ঠিকভাবে থাকার কারণে অনেক সুখে দিন কাটতে থাকে তাদের।
একদিন ওই বকটা আবারও এলো হাতির সাথে দেখা করতে। অনেকদিন পর সেই বকটাকে দেখতে পেয়ে খুশি হয় হাতিটা। পরিচয় করিয়ে দেয় তার নতুন গড়ে ওঠা পরিবারের সাথে। খোশগল্প চলতে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর আবারও বিদায় নিয়ে বকটা চলে যায়।
এভাবে আবারও একবার বকটা দেখতে আসে হাতিদেরকে। তাদের সাথে কথা বলে, গল্প করে, হাতির বাচ্চাগুলের সাথে খেলা করে। ধীরে ধীরে আত্মীয় হয়ে যায় হাতির দলের সাথে।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো..
একদিন আবারও ওই বকটা আসে হাতিদের সামনে। তাদেরকে নিমন্ত্রণ দেয়, বকের বাসায় যাওয়ার। আজ নাকি বকেদের সমাজে কয়েকটা বকের বিয়ে। সে কথা শুনে হাতিরা সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। বকেরা নিজেরাই খেতে পায়না ঠিকমতে.. হাতিদের নিমন্ত্রণ করে কি আর খাওয়াবে! একটা হাতির বাচ্চার খোরাকও তো জোগাড় করার জো নেই তাদের মধ্যে…
বক পাখিটা তাদের কথায় পাত্তা দেয়না। দলনেতাকে বলে, তাদের পাশে একটা বিল আছে। সে বিলে পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর বকেরা সেখানে ধান চাষ করেছে। এ বছর অনেক ধান ফলেছে। হাতিরা খোরাক নিয়ে যাতে চিন্তা না করে…
ধানের কথা শুনে হাতিরা বেজায় খুশি! তারা রাজি হয়ে যায়। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেয় যে আজ বিকেলে তারা প্রস্তুত থাকবে; আর বক এসে তাদের নিয়ে যাবে নিমন্ত্রণ খাওয়াতে।
যথাসময়ে সবাই প্রস্তুত হয়ে যায়। আর বকটাও চলে আসে একটু পর। তারপর রওনা হয় সবাই বকের বাড়িতে; যাদের ঘরে আজ বিয়ে।
যেতে যেতে প্রায় একক্রোশ দূরে চলে আসে। বনে নতুন আসা হাতিটা বলে ওঠে,
– বক ভাই, আর কতদূর?
– এইতো ভাই চলে এলাম…
– বেজায় দূরে তোমার বাসা বক ভাই। অতদূর থেকে কিভাবে আসো আমাদের দেখতে?
– মনের টান থাকলে দূরত্ব কোন ব্যাপার না ভাই.. চাইলে বন্ধুত্ব বজায় রাখা যায়..
– সত্যিই, তুমি এতো ভালোবাসো আমাদের!
হঠাৎ! আকাশ থেকে তীরের মতো কিছু বিঁধতে শুরু করলো হাতিদের মাঝে। বকটা ইতোমধ্যেই যেন কোথায় চলে গেলো..
বন্য হাতিরা হতভম্ব হয়ে যায়! কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা কি হতে চলেছে! তারা সবাই এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে। পায়ের চাপে আহত পড়ে কয়েকটা বাচ্চা হাতি। অন্যদের সময় নেই তাদের তোলার। তারা ছুটতে থাকে যেখান থেকে এসেছে সেখানে…
দুর্ভাগ্যবশতঃ কেউই নিজেদের পূর্বের জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। অল্প কিছুদূর যেতেই সবাই অজ্ঞান হয়ে যায়….
(বাকিটুকু পরবর্তী পর্বে..)