আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকের পোস্টে আমরা চুক্তি নিয়ে কথা বলব। কিভাবে চুক্তি করে, বাংলা চুক্তি করা হয় কেন, কিভাবে চুক্ত করা হয় এসকল কিছু নিয়েই কথা বলা হবে।
চুক্তি ও চুক্তিপত্র কি?
আরো বিস্তারিত কথা বলার আগে আমাদের প্রথমে বুঝতে হবে আসলে চুক্তি জিনিসটা কি। চুক্তি কি এই রিলেটেড/ সম্পর্কিত আইনও রয়েছে। ১৮৭২ সালে পাশ হওয়া চুক্তি আইন মতে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে অর্থ বা বস্তু বিনিময়ে আদান প্রদান করার জন্য লিখিতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকে চুক্তি বলে।
অর্থাৎ আপনাকে একটি চুক্তি করলে হলে অবশ্যই সুস্থ মস্তিষ্কের ও একজন সাবালক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি হবে। একটি চুক্তিতে মূলত একজন আরেকজন ব্যক্তিকে নানা প্রস্তাব প্রদান করে ও অপরপক্ষ প্রস্তাবে রাজি হয়।
আর একটি চুক্তিপত্র হলো এমন কাগজ, পত্র বা দলিল যাতে অংশীদারিরা বা চুক্তিকারীরা তাদের ব্যবসায়ের গঠন, উদ্দেশ্য, পরিচালনা পদ্ধতি অন্য অংশীদারদের অধিকার ও দায়দায়িত্ব প্রভৃতি লিপিবদ্ধ থাকে।
বাংলা চুক্তি করা হয় কেন ?
এর কারণ একদম স্বাভাবিক। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলা আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা। এছাড়া আমাদের দাপ্তরিক ভাষাও। অফিস আলাদত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বাংলাদেশের সকল স্থানে এই বাংলা ভাষায়ই লেখা হয় ও ব্যবহার করা হয়। তার জন্য কোনো চুক্তি করা হলেও তা বাংলা ভাষায় করা হয়। এছাড়া বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষাও। তাই আমাদের দেশের প্রায় সব ব্যক্তিই বাংলা ভাষা পড়তে ও লিখতে জানেন। অর্থাৎ বাংলা আমাদের আকছে বোধগম্যও। ফলশ্রুতিতে বাংলায় চুক্তিটি করলেই দুই পক্ষই খুব সজজে চুক্তিতে কি লেখা বুঝতে পারবে।
কোন কাগজে চুক্তিপত্র লেখা হয়?
চুক্তিপত্র লিখতে হবে আদালত থেকে প্রাপ্ত স্ট্যাম্প পেপারে। কেন কোনো অফিসিয়াল চুক্তিপত্রে আদালত থেকে পাওয়া স্ট্যাম্প ব্যবহার করতে হবে? এর কিছু কারণ আছে। স্ট্যাম্প ব্যবহার করলে এটি আরও নিরাপদও। যখন কেউ স্ট্যাম্প কিনে সেসময় ক্রেতার ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া লাগে যার ফলে স্ট্যাম্পের অপব্যবহার করাও অনেক কঠিন আর করলে আইনের শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। আর তার পাশাপাশি এ দ্বারা সরকারের রাজস্ব বা টাক্সও আসে। এই স্ট্যাম্পের মূল অনেকাংশই অংশীদারদের চুক্তির ধরণ, তার মূল্য এসবের উপর নির্ভর করবে। যত বেশি টাকার চুক্তি স্ট্যাম্পের মূল্য তত বেশি হতে পারে। [জমি বন্ধক নামা লেখার নিয়ম এখান থেকে ডাউনলোড করুন]
কখন চুক্তিপত্র লেখে?
যেকোনো ধরণের চুক্তি বা কন্ট্রাক্ট করার সময় এই চুক্তিপত্র লেখা হয়। যেকোনো ধরণের চুক্তি যেমন কাউকে টাকা ধার দিচ্ছেন, কারো কাছে বাসা বা দোকান ভাড়া দিচ্ছেন, কারো কাছে আপনার ব্যবসার ভাগ বিক্রি করছেন, কারো কাছে আপনার জমি বিক্রি করছেন, কারো কাছে আপনার বাড়ি বিক্রি করছেন ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র লেখা হয় ও লেখা উচিত।
চুক্তিপত্র কতটুকু কার্যকর?
চুক্তিপত্র তৈরি করা বা ব্যবহার করা হলো কোনো ডিল, চুক্তি বা কন্ট্রাক্ট করার সবচেয়ে ভালো ও নিরাপদ উপায়। মৌখিক কথার উপর ভিত্তি করে কোনো চুক্তি করলে তার মধ্যে দায়বদ্ধতা থাকে। বরং অংশীদাররা যে যা ইচ্ছা করতে পারবে। অন্যদিকে লিখিত চুক্তিপত্রে উভয় পক্ষ অঙ্গীকারবদ্ধ। এছাড়াও কেউ যদি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করার পর তা অস্বীকার করে সেক্ষেত্রে অপর পক্ষ চাইলেই সেই পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দিতে পারবে। আর মামলায় সেই চুক্তিপত্রটিকে প্রমাণ হিসেবেও দিতে পারে বা দেখাতে পারে। [টাকা লোন দেওয়ার চুক্তিপত্র এখান থেকে দেখুন]
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি খুব সহজে সম্ভব হবে যে চুক্তিপত্র কতটুকু কার্যকর।
মনে করি,
জনাব রহিম ও জনাব করিম একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জনাব রহিম করিম সাহেবের কাছে এক লক্ষ টাকা ধার চেয়েছেন এবং বলল যে তিনি টাকাটা ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করে দিবেন। ছয় মাস হয়ে গেল কিন্তু এখন রহিম সাহেব টাকা দিতে চাচ্ছেন না এবং গড়িমসি করছেন। আজকে না কালকে, কালকে না আগামী মাসে। এরকম অবস্থা করছেন। এক বছর পার হয়ে গেল কিছু এখনও রহিম সাহেব করিম সাহেবকে টাকা দিতে চাচ্ছেন না এবং তাকে এড়িয়ে চলছেন। পরবর্তীতে জনাব করিম রহিমের কাছে গিয়ে টাকা চাইলে, তিনি যে টাকা ধার নিয়েছেন তা অস্বীকার করেন ফলশ্রুতিতে করিম সাহেব রহিম সাহেবের নামে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তার খেয়াল হয় যে তিনি যে তাকে ধার দিয়েছেন তার কোনো প্রমাণ নেই। যার ফলে আদালতে এটি প্রমাণ করতে অনেক কষ্ট হবে। এমনকি রহিম সাহেবের পক্ষেও রায় আসতে পারে।
এরকম অবস্থা বা দৃশ্যপট বর্তমানে দেশে অহরহ। একজন আরেকজনকে ‘বন্ধু বা আপনজন’ মনে করে ঋণ দেয় কিন্তু পরে তারা ওই ঋণ পরিশোধ করে না। এখন যদি ঘটনাটা এরকম না হয়ে কিছুটা ভিন্ন হতো। যদি করিম সাহেব রহিম সাহেবকে চুক্তিপত্রে চুক্তিটি করতে বলত তাহলে এরকম একটা সমস্যার সৃষ্টি হতো না। যদি উওভয় পক্ষ স্ট্যাম্প দিয়ে একটি চুক্তিপত্র তৈরি করে তাতে সব চুক্তি ও প্রস্তাবনা দিত তাহলে এটি হতো না। যদি ওখানে রহিম সাহেব রাজি হতো যে তিনি ছয় মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করবে তাহলে তার যাই হোক অবশ্যই ছয় মাসে টাকা পরিশোধ করতে হতো অন্যথায় করিম সাহেব তার নামে চাইলেই আদালতে মামলাও করতে পারত যেহেতু তার কাছে টাকা ঋণ দেওয়ার প্রমাণ রয়েছে সেহেতু তার মামলায় জয় লাভের সুযোগই বেশি ছিল।
এখানে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করার বা অবিশ্বাস করার কিছু নেই। চুক্তিপত্র অনেক নিরাপদ এবং এর মফহ্যে দিয়ে দুই পক্ষের মধ্যেই একটি ভয় ও উদ্বেগ কাজ করে। তাই কোনো চুক্তি বা ডিল করার সময় অবশ্যই চুক্তিপত্র তৈরি করে কর উচিত।
পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।