আজকে আমরা বাঙলাদেশ ও বাংলাদেশ এই দুটো লেখা সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানবো ।
লেখাটি পড়ার পর আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে কোনটা সঠিক ।
আমি ছোটবেলা থেকেই বাঙলা ভাষার বিভিন্ন বই পড়েছি, আমাদের পারিবারিক
গ্রন্থাগার থাকাতে এই সুবিধা পেয়েছি ।
আমি বাঙলাদেশের প্রায় সকল লেখকের বই-ই পড়েছি ।
এর মধ্যে একজন বিতর্কিত ও জনপ্রিয় লেখক হচ্ছেন ড. হুমায়ূন আজাদ ।
উনার একটা বই “লাল নীল দীপাবলি বা কতো নদী সরোবর” নামে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের একটা বই আছে যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় পড়েছিলাম ।
বাঙলা বিভাগে যারা লেখাপড়া করেন তারা এই বইটি চিনে থাকবেন হয়তো ।
বইটি পড়ে এতো মুগ্ধ হয়েছিলাম যে আমার প্রাক্তন প্রেমিকা রূপাকেও আমি এই বইটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম ।
বইটি পড়ে দেখবেন, সম্ভবত বাঙলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে এমন বই আর দ্বিতীয়টি নেই ।
যাহোক,
প্রসঙ্গে ফিরে আসি । উনার বইতেই প্রথম বাঙলাদেশ বানানটা দেখেছিলাম এবং বানানটা আমার খুব ভালো লাগে। পরবর্তীতে আমি বাঙলা সাহিত্যের প্রাচীন কিছু লেখকের পুস্তক ও স্বাধীনতার আগে পরের পত্রিকার খোঁজখবর দেখে আমার বাঙলাদেশ বানানটাকেই ভালো লাগে খুব এবং আমি বাংলাদেশ এর বদলে বাঙলাদেশ লেখা শুরু করি ।
এখন আমরা বাঙলাদেশের ‘ঙ’ এবং বাংলাদেশের ‘ং’ এর নিয়মনীতি নিয়ে আলোচনা করবো, চলুন শুরু করা যাক–
‘ঙ’ দিয়ে বাঙলাদেশ লিখলেই শুদ্ধ। ‘বাঙলা’ বানানই ঠিক আছে।
কিন্তু কেন!
কারণ,
বঙ্গ তৎসম শব্দ, এটা থেকে বঙ্গীয়, বাঙ্গাল, বাঙ্গালী, বাঙ্গলাদেশ এসব শব্দ এসেছে; আর ‘বাঙালি’ সেইখান থেকেই এসেছে মানে এটাও তৎসমজাত শব্দ ।
আর যারা বাঙলা দ্বিতীয় পত্রে খুব দক্ষ তারা জেনে থাকবেন যে, তৎসমজাত যেসব শব্দ সন্ধিযুক্ত নয় সেইসব শব্দে ‘ ং ‘ হবে না ।
আর ‘বাঙলা’ শব্দটির কোনো সন্ধি নাই,
তাই বাঙলা শব্দটি কোনোভাবেই ং দিয়ে হবে না।
সংবাদ=সম+বাদ,এটি কিন্তু তৎসম শব্দ কিন্তু এটার সন্ধি হয় বলেই এটাতে ং হবে।
তাহলে ব্যাকরণগত দিক থেকেও “বাঙলাদেশ” লেখা সঠিক, তাই তো? এখন আপনাদের প্রশ্ন আসতে পারে যে,
তাহলে বাংলাদেশ কেন লেখা হয় ?
আসলে এটি লেখা হয় কেন তা আমিও জানিনা ।
মজার কথা কি জানেন ?
বাঙলা একাডেমির নিয়ম অনুযায়ী “একাডেমী” শব্দটা ভুল কিন্তু তারা একাডেমি না লিখে একাডেমী-ই লিখে থাকে !
আসলে আমরা বাঙালিরা ভাষা সম্পর্কে সচেতন না ।
কেউ-ই না, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম একটা বাক্য ইংরেজি শব্দ ছাড়া
বলতেই পারেনা,ভাষার যত্ন কেউ নিতে আমরা সচেতন না ।
ফলস্বরূপ,
মানুষের এই অসচেতনতাই বাঙলা একাডেমির আলস্যের মূল কারণ ।
এছাড়া,একাডেমি শব্দটাই কিন্তু ইংরেজি,খেয়াল করেছেন কি?
আমরা গত কয়েক বছর আগে “ঈদ” শব্দটা নিয়ে বিতর্ক দেখেছিলাম ।
দেখেছিলাম যে বাঙলা একাডেমি “ঈদ” শব্দটাকে বাঙলা
প্রমিত বানানরীতি অনুযায়ী “ইদ” লিখতে বলেছিল ।
নিয়মটা হলো,
বাঙলা ভাষায় আগত বিদেশি কোনো শব্দে ‘ঈ’ বা ‘ ী’ কার হবেনা ।
সেই হিসেবে আমাদের কিন্তু ইদ লেখা উচিত ।
কিন্তু আমরা এখানো দেদারচে ঈদই লিখে চলেছি অত্যন্ত আনন্দের সাথে ।
সত্যি বলতে আমার মনে হয়,
বাঙলাদেশ কিংবা বাংলাদেশ যা-ই লিখি না কেন কোনটাই ভুল নয় ।
একটা জাতির অভ্যাস অবশ্যই ভাষাকে প্রভাবিত বা পরিবর্তন হতে বাধ্য করে সেই হিসেবে বাংলাদেশ লেখাটা ঠিক আছে ।
কিন্তু বাঙলাদেশ লিখলেই চট করে বলে দিবেন যে তা ভুল সেটা করতে যাবেন না সঠিকটা না জেনে ।
ব্যাকরণগত বা ভাষাগত যা-ই বলেন না কেন সবভাবেই বাঙলাদেশ লেখা সঠিক ।
আপনি যেভাবেই লেখেন না কেন দেশের প্রতি বা ভাষার প্রতি ভালোবাসাটা
যেনো অটুট থাকে
এই প্রত্যাশায় লেখা শেষ করছি ।
ধন্যবাদ সকলকে ।।