প্রাচীনকালে স্পাই বা গুপ্তচরেরা এক ধরনের অদৃশ্য কালি ব্যবহার করতো। প্রাচীনকালে যখন এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে গুপ্তচরেরা গোপন তথ্য নিয়ে যেতো তখন তারা সাদা কাগজের মধ্যে অদৃশ্য কালি দিয়ে গোপন তথ্য লিখে নিয়ে যেতো। পথিমধ্যে ধরা পড়লে কিংবা ভালো করে তল্লাশি করেও কেউ তাদের সাথে কিছু পেতো না।
এভাবে অদৃশ্য কালির মাধ্যমে সাদা কাগজে লিখে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে গুপ্তচরেরা গোপন তথ্য নিয়ে যেতো। বর্তমান কালে অনেক জাদুকর এই অদৃশ্য কালি দিয়ে নানা জাদু বা ম্যাজিক দেখান। তারা সবার সামনে সাদা কাগজ কিংবা সাদা রুমাল দেখিয়ে বলেন যে এই সাদা কাগজে বা সাদা রুমালে এখন লেখা দেখা যাবে। পরে সত্যি সত্যিই তাদের হাতের সাদা কাগজ কিংবা সাদা রুমালে লেখা দেখা যায়। সত্যিই কি আশ্চর্য!!
কিন্তু এখানে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এখানে রয়েছে আসলে বিজ্ঞানের দারুণ মজার কিছু কৌশল। শুধু নানান গল্পের মাধ্যমে জাদুকর বা ম্যাজিশিয়ানেরা বিজ্ঞানের মজার এই কৌশলটায় মানুষকে তাক লাগিয়ে দেয়। ম্যাজিশিয়ানেরা মানুষকে নানা গল্পে বিমোহিত করে প্রথমে মঞ্চ থেকে কাউকে ডেকে এনে সাদা রুমাল পরীক্ষা করে দেখিয়ে তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখান সেখানে লেখা ফুটে উঠেছে।
এই আশ্চর্য ম্যাজিকের পেছনে বিজ্ঞানের যেসব কৌশল কাজ করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লেবু কিংবা খাওয়ার সোডা। লেবু কিংবা খাওয়ার সোডার কৌশল দিয়েই তারা আশ্চর্য অদৃশ্য কালি তৈরির মাধ্যমে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে বোকা বানান। কিন্তু আমরা যদি লেবু কিংবা খাওয়ার সোডা দিয়ে আশ্চর্য অদৃশ্য কালি তৈরির কৌশলটি জানি, তাহলে আর ম্যাজিশিয়ানেরা আমাদের বোকা বানাতে পারবে না।
লেবু কিংবা খাওয়ার সোডা দিয়ে আশ্চর্য অদৃশ্য কালি তৈরির জন্য আমাদের লাগবে একটি লেবু কিংবা এক চামচ খাওয়ার সোডা। লেবু কিংবা খাওয়ার সোডা যে কোনো একটি দিয়েই কিন্তু এই আশ্চর্য অদৃশ্য কালি তৈরি করা যাবে। যে কোনো একটি হলেই হবে। যদি আমরা লেবু দিয়ে আশ্চর্য অদৃশ্য কালি তৈরি করতে চাই, তাহলে একটি লেবুই যথেষ্ট।
আবার যদি খাওয়ার সোডা দিয়ে আশ্চর্য অদৃশ্য কালি তৈরি করতে চাই, তাহলে এক চামচ খাওয়ার সোডাই যথেষ্ট। বিজ্ঞানের দারুণ মজার এই এক্সপেরিমেন্টটি করতে প্রথমে লেবু চিপে সবটুকু রস বের করে ছেঁকে একটা কাঁচের বাটিতে নিতে হবে। আবার খাওয়ার সোডা দিয়ে এক্সপেরিমেন্টটি করলে এক চামচ খাওয়ার সোডা একটা কাঁচের বাটিতে নিতে হবে। এরপর লেবুর রস কিংবা খাওয়ার সোডায় আধা চামচেরও কম সামান্য একটু পানি ভালো করে মেশাতে হবে। ব্যস, হয়ে গেলো দারুণ মজার আশ্চর্য অদৃশ্য কালি তৈরি!!!
লেবুর রস কিংবা খাওয়ার সোডার এই দ্রবণটিই হচ্ছে আশ্চর্য সেই অদৃশ্য কালি! এখন একটা কটন বাড কিংবা টুথপিক লেবুর রস কিংবা খাওয়ার সোডার এই দ্রবণটিতে চুবিয়ে কিংবা ভিজিয়ে নিয়ে একটা সাদা কাগজে কিছু লিখে শুকিয়ে নিলে দেখা যাবে যে, সেখানে কিছু লেখা নেই। আবার যদি বাল্বের হালকা তাপে কিংবা মোমবাতির উজ্জ্বল উষ্ণ আলোর তাপের কাছে ঐ কাগজটি ধরা হয়, তাহলে সেই কাগজটিতে লেখা ফুটে উঠবে। এই হলো আশ্চর্য অদৃশ্য কালির রহস্য!!
ম্যাজিশিয়ানরা এই আশ্চর্য অদৃশ্য কালির ম্যাজিক দেখানোর সময় সেই কাগজের কাছাকাছি মোমবাতি কিংবা তীব্র আলোর কোনো উৎস রাখেন। যার কারণে সাদা কাগজ কিংবা রুমালে লেবুর রস বা খাওয়ার সোডা দিয়ে লিখে রাখা লেখাটা মোমবাতি কিংবা তীব্র আলোর তাপে পরিস্কারভাবে ফুটে ওঠে। এই হলো আশ্চর্য অদৃশ্য কালির রহস্য!! এই হলো আশ্চর্য অদৃশ্য কালির ম্যাজিক!!! বিজ্ঞানের দারুণ মজার এক্সপেরিমেন্টের মজাটা আসলে এখানেই! যদি সত্যিকারের কৌশলটা আমাদের জানা থাকে।
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।