Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

বোন আমার ডুবে গেল প্রীয় পুকুরে

সম্পর্কে সে আমার মামাতো বোন। গ্রামে থাকেন মামারা। অনেক জমি আছে মামার। লেখা- পড়া খুব বেশি একটা জানেনা। জমি চাষ করে খুব ভালোই চলে। গ্রামে পরিচিত ছিল খুব বড়লোক বলে, খুব ভালো চাষী, অনেক জমি, অনেক লোককে কাজে রাখেন তিনি বারোমাস। তাই লোকজন খুব মানে মামাকে।

মামার দুই মেয়ে ছিল। এবার একটা ছেলের খুব শখ। কারন এত জমি জাইগা দেখবে কে? মেয়ে তো বিয়ের পর শশুর বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু এবারো হল মেয়ে আবার। খবর শুনে কেও খুশি হতে পারল না। মামী খুব কান্না-কাটি করলেন কারন মামা খুশি নন। মামাকে মামী একটা ছেলে দিতে পারলেননা এবারো।

মামাতো বোনের আমার জন্ম হয়েছিল বাড়িতেই। বাড়ির সাথে অনেক বড় পুকুর যার জল কখনো শুকাইনা।
জন্মের পর বড় বোন তাকে কোলে নিয়ে দেখেনি। আত্তীয় স্বজন কেও দেখতে আসেনি তাকে। তার কাছের লোকেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু মা তো আর তার সন্তানকে ফেলতে পারেননা।

আস্তে আস্তে বড় হল। বয়স তার ১০ বছর। কি যেন অদ্ভুত ব্যাপার যারা তাকে ভালোবাসত না তারা আস্তে আস্তে তার সাথে এমনভাবে মায়ায় জড়িয়ে গেল যা অন্য বোনেদের থেকে অনেক বেশি। সবার অনেক অনেক প্রীয় হয়ে উঠল সে। গ্রামের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের লোক সবাইকেই সে চেনে, এমন কোন লোক নেই যে তাকে আদর করে না।

সে সবাইকেই যেন তার মন্ত্র বলে বশীভুত করেছিল। সাদা ধবধবে তার গায়ের রং, অপুর্ব তার চেহারার মাধুর্য। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল সে ছেলেদের মত করে সবসময় মামার কাছে থাকত। বাড়ির সব কাজে তার নজর ছিল। সবাই যেন তার উপর নির্ভর হয়ে উঠেছিল। তার মন ছিল অনেক বড় আর সহজ সরল। মানুষের মন জয় করতে যা যা দরকার তার মাঝে সব গুনই ছিল বোনের আমার।

সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হল তার সাঁতার দক্ষতা। খুব ছোট বয়স থেকে তার পানির সাথে সক্ষ্যতা ছিল প্রবল। পানি যেন তাকে দেখে ভয় পেত। গ্রামের মানুষ বলে, সে যে বয়সে সাঁতার শিখেছিল তা সবার কল্পনার বাইরে। সাধারনত কেও শিখতে পারেনা। দিনের ভীতর ৩-৪ বার গোসল করত, মাছ ধরত।

মামার পুকুরের সুক্ষ্যাতি ছিল দুর- দুরান্তের গ্রামে। এতবড় আর গভীর পুকুর আশপাশের কোন গ্রামে ছিলনা। সে পুকুরের পানি শুকাতোনা কোনদিন। সে পুকুরে বড় মানুশ মাঝ পর্যন্ত যেতে পারত না। কিন্তু বোন আমার অনেকদুর যেত। সবাই নিষধ করত, কিন্তু তার নেশা ছিল পানি…।।

সেই পানিই বোনের জীবনে কাল হল। হটাৎ একদিন ফোন এল, ওপাশ থেকে কে যেন বলল বোন আমার পানিতে ডুবে মারা গেছে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। যেন বুঝতে পারছিলাম না কিছুই, ভুল শুনলাম নাকি? রং নাম্বারে কেও ভুলে ফোন করল নাকি? চেক করলাম কিন্তু না ঘটনা সত্যি। মানুষ যে কোন সময় মরতে পারে কিন্তু তাই বলে আমার বোন পানিতে ডুবে?

হ্যাঁ তাই ঠিক হল। কেও মানতে পারছিল না যে বোন আমার পানিতে ডুবে গেল? কি হয়েছিল? কিভাবে হল? যে পুকুরে পাড় সুর্যের আলো ফোটার আগ থেকে গভীর রাত পর্যত্ন আশপাশের কয়েক গ্রামে যাওয়ার পথ, মাঠে যাওয়ার একমাত্র পথ, সারাদিন যেখানে মানুষের কোলাহল সেখানে কি করে কেও দেখলনা বোনের ডুবে যাওয়া। পানি কি তাকে হার মানাতে পারে? কেও কি মেরে দিল? হাজারো প্রশ্ন মানুষের মনে। কিন্তু উত্তর কেও খুজে পেলনা।

পানির মধ্যে থেকে তোলা হল তাকে। মুর্ছা গেল মামী। পুকুরে আসার আগে মামী পছন্দের পিঠা বানিয়েছিল কিন্তু সেটা না খেয়ে বলেছিল আগে গোসলটা সেরে আসি। আর তার আসা হলনা। কি বলে সান্তনা দেবে তার মা-বাবাকে। এভাবেই জীবনকে হার মানাল তার সবচেয়ে প্রীয় পুকুর।

আর এভাবেই নিভে গেল ১০ বছরের বালিকার জীবন প্রদীপ।

Related Posts

7 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No