বর্তমানে আমরা প্রায় সকলেই স্মার্টফোন ব্যবহার করি। কারও ফোন হয়তোবা ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড। আমাদের স্মার্টফোনের খুটিনাটি অনেক বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ থাকলেও ব্যাটারি নিয়ে কৌতুহল একটু বেশি বলা চলে। আমরা ব্যাটারি সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু তথ্য জানি, যেমনঃ চার্জে থাকা অবস্থায় ফোন ব্যাবহার করলে ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে, ফোনের ব্যাকপার্ট লাগিয়ে চার্জ করলে ফোন গড়ম হতে পারে অথবা অরিজিনাল চার্জার ব্যাবহার করা ইত্যাদি।
এছাড়াও অনেক বিষয় রয়ে গেছে যা হয়তো আমরা জানিনা। তেমনি একটি বিষয় হচ্ছে ফোনের ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম নিয়ে। এ সসম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত অবহিত করা যাক।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক কথাঃ
ইমার্জেন্সি কোনো মুহুর্তে আমরা যেমন টাকা-পয়সা অল্প-অল্প করে খরচ করি তেমনি ব্যাটারির ক্ষেত্রেও একই। বর্তমানে বিভিন্ন স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নতুন-নতুন সব ফিচারস নিয়ে হাজির হচ্ছে। সেসব ফোনে থাকছে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা৷ কিন্তু ফোনের ব্যাটারির ক্ষেত্রে হয়তো সাইজ বড় দিচ্ছে বা ক্যাপাসিটি বাড়াচ্ছে কিন্তু অন্য সুবিধাগুলোর তুলনায় ব্যাটারির আহামরি উন্নতি হয়নি।
আমাদের ব্যাবহার করা স্মার্টফোনটিতে যদি ব্যাটারির ধারণক্ষমতা কম থাকে তাহলে খুবই হিসাব করে চার্জ খরচ করতে হয়। সাথে থাকে দুশ্চিন্তা ব্যাটারি ঠিক আছে তো, আগের থেকে পাওয়ার কমে গেলো না তো ইত্যাদি। আর এতসব চিন্তাভাবনার পরেই আসে স্মার্টফোনে ফাস্টচার্জিং সুবিধা ব্যাবহার করলেও ব্যাটারির ক্ষতি করে ফেলছে না তো?
ফোনে ফাস্ট চার্জার ব্যাবহার করলে ব্যাটারি কি ব্লাস্ট করে বা ব্যাটারির উপর ক্ষতিকর প্রভাব এছাড়া ব্যাটারির নির্দিষ্ট মেয়াদকাল ফুরিয়ে যাবার আগেই ব্যাটারির জীবনকাল শেষ হয়ে যাবে না তো ইত্যাদি বিষয়গুলো ফাস্ট চার্জিং এর কথা ভাবলে মনে ঘুরপাক খায়। চঅলুন পর্যায়ক্রমে সবকিছু জেনে আসি।
ফোনে সাধারণভাবে চার্জ দেওয়া সম্পর্কে জানেন তো?
ফাস্ট চার্জিং নিয়ে জানার আগে সাধারণভাবে চার্জ দেওয়ার নিয়ম জানা জরুরি। নঅতুন ফোন করলে আমরা অনেকে বিড়ম্বনায় পড়ে যাই যে, ফোনটি কি ফুল চার্জ দিয়ে নেবো, যেটুকু চার্জ আছে শেষ করবো, নাকি চার্জ থাকলেও সারারাত চার্জে দিয়ে রাখবো। আসলে ব্যাপারটি এমন নয়।
ফোনটি আপনার হাতে আসার আগেই ফোন কোম্পানি ফুল চার্জ করে এবং ব্যাটারি চার্জহীন করে পরিক্ষা করে। তারপর আপনাকে দেয়৷ অর্থাৎ ফোন কিনে যদি দেখেন চার্জ ফোনে বিদ্যমান তাহলে বুঝবেন কোম্পানি অবশ্যই আপনার কাজটি আগেই সেরে রেখেছে। তারপরও যদি শান্তি না পান তাহলে ইচ্ছা করলেও সারাদিন বা সারারাত দিয়ে রাখতে পারেন।
অতিরিক্ত চার্জ দিলে কি ব্যাটারির ক্ষতি হয়?
সারাদিন বা সারারাত চার্জে দিয়ে রাখলে মনে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে অতিরিক্ত চার্জ দিলে ব্যাটারির আবার ক্ষতি হবে না তো? উত্তর হচ্ছে ‘না’। অনেক আগের ফোনগুলোতো চার্জ হবার পরেও চার্জার লাগানো থাকলে স্ক্রিনে লেখা ভেসে উঠতো, ব্যাটারির চার্জ পউরো হয়েছে চার্জার খুলুন। কিন্তু বর্তমানের স্মার্টফোনের চার্জার এবং ব্যাটারিতে এমন উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয় যে, চার্জ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আর ব্যাটারি ওভার চার্জ হয়না অর্থাৎ সয়ংক্রিয়ভাবে চার্জার থেকে ব্যাটারির বৈদ্যুতিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
আবার আরও একটি প্রশ্ন জাগতে পারে। সেটি হচ্ছে ব্যাটারি কি সম্পুর্ন খালি করে চার্জ করা উচিত? এক্ষেত্রে উত্তর হচ্ছে ‘না’। কারন ব্যাটারি শেষ করে পুনরায় পুনরুদ্ধার করতে কেমিক্যাল রিএকশন দিতে পারে৷ বরং ব্যাটারি ৩০% এর নিচে আসলেই চার্জ করুন।
ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম সম্পর্কে জানুন
কিছু বছর আগের কথা যখন ফোন পুরো চার্জ দেওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো৷ সারাদিন ফোন ব্যাবহার করলেও আমাদের ফোন চার্জে দেওয়ার সময়টুকু আর হয়না। ফলে ফোন চার্জে দিয়েই ফোন চালানো শুরু করি। এমন সমস্যা থেকে মুক্তি দিতেই ফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে।
ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি আসায় আমাদের অপেক্ষার পালা যেমন শেষ হয়েছে তেমনি সময় বেচে গিয়েছে৷ এই সুবিধাটি কেবল তারাই পাবেন যাদের ফোনটি ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে। আর যাদের সাপোর্ট করেনা তারা উক্ত চার্জার ব্যাবহার করলেও সাধারণভাবেই চার্জ হবে৷
ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তির ব্যাবহার ফোনের ব্যাটারির ক্ষতি করে কিনা
পুরো ব্যাপারটি জানলে পরিষ্কার হয়ে যাবে৷ ফাস্ট চার্জারের ক্ষেত্রে দেখে থাকবেন, চার্জ দেওয়ার শুরুর দিকে খুব দ্রুত চার্জ হয়ে যাচ্ছে। যেমনঃ ৭০%-৮০% পর্যন্ত খুব দ্রুত অথচ এরপর থেকে চার্জের গতি কমে যায়। উদাহরণ দেয়া যাক, ধরু আপনি খুব ক্ষুধার্ত অবস্থায় ভাত খেতে বসেছেন। খাবার শুরুর দিকে যতো তাড়াতাড়ি খাবেন, শেষের দিকে খাওয়ার গতি কিন্তু কমে যায়। অথবা, একটি শুকনো স্পঞ্জকে পানিতে পূর্ণ করার সময় দেখবেন প্রথমদিকে দ্রুত পানি শোষণ করছে কিন্তু শেষেরদিকে সেই হারে শোষণ হচ্ছেনা৷ ব্যাটারির ক্ষেত্রেও তেমন।
অর্থাৎ প্রথমদিকে ব্যাটারি খালি থাকায় গ্রহণ ক্ষমতা বেশি বিধায় দ্রুত চার্জ হয়৷ কিন্তু শেষেরদিকে ধারণক্ষমতা কমে যায় তাই দেরি হয়৷ এক্ষেত্রে ব্যাটারিতে সমস্যা হতেও পারে। কিন্তু এই প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি করা, যাতে করে প্রযুক্তিবিদগণ পুরো ব্যাপারটার মধ্যে সমন্বয় করে দেন। ফলে ফোনের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার এমনভাবে কাজ করে যাতে সময় কম লাগে কিন্তু ব্যাটারির ক্ষতি না হয়।
ফাস্ট চার্জার দিয়ে অতিরিক্ত চার্জের পর কি ব্যাটারি বিস্ফোরিত হতে পারে?
আমরা অনেকেই ভুল ধারণা পোষণ করে থাকি যে, ফাস্ট চার্জার দিয়ে অতিরিক্ত চার্জ হলে ব্যাটারি বিস্ফোরণ হয়। ধারণাটি আসলে ভুল। এরকম কিছু নয়৷ আবার মনে করা হয় যে সারাদিন বা সারারাত চার্জে দিয়ে রাখলে বিস্ফোরিত হতে পারে। এটি সঠিক নয়। ব্যাটারিতে ফাস্ট চার্জার লাগিয়ে রাখলেও বিস্ফোরণ হয় না।
তবে গবেষকদের মতে, ব্যাটারি তৈরিতে বা ডিজাইন করতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে অথবা ত্রুটিপূর্ণ চার্জার দিয়ে ফোন চার্জ করার সময় ব্যাটারি বিস্ফোরিত হয়ে যেতে পারে। এক্ষত্রে ভালো মানের ফোনে উক্ত দুটি সমস্যা না থাকলে ব্যাটারি বিস্ফোরিত হবেনা।
ফাস্ট চার্জার দিয়ে ব্যাটারি বিস্ফোরিত হবার কথা ভাবলে আপনাকে আরও ভাবতে হবে যে, ফোন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো অবশ্যই এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করে। পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে। নিরাপদ ও টেকসই হলেই কেবল তা বাজারে নিয়ে আসে। যদি না সেখানে কোনো ত্রুটি না হয়।
ফাস্ট চার্জিং সিস্টেম কি একেবারেই ফোনের ক্ষতি করেনা?
যদি প্রযুক্তি বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকে যায় তাহলে যেকোনো দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে সাধারণত ফাস্ট চার্জার ব্যাটারি বা ফোনের ক্ষতি করেনা। তবে, ফাস্ট চার্জার ব্যাবহার করার ফলে ফোন গরম হয়ে যায়। ইলেকট্রনিকস যেকোনো ডিভাইসের জন্যই ‘গরম’ একটি সমস্যা। ফোন গরম হলে ফোনের অন্যান্য যন্ত্রাংশও গরম হয়ে ক্ষতির মধ্যে পড়ে যায়। এটাই ফোনের ক্ষতি। অন্য কোনো কারণে ফোন গরম হলেও ফোনের ক্ষতি হয়। তবে ফোন যদি গরম হওয়ার হাত থেকে বাচাতে পারেন তাহলে তা আপনার পক্ষেই ভালো। আশা করছি লেখাটি থেকে উপকৃত হয়েছেন।