আপনি ফেসবুক কিংবা নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের ভ্রমণের ছবি দেখে হয়তো প্রায়শই বলে উঠেন, ভ্রমণে যাবেন। কিন্তু নানা বাধার কারণে আর ভ্রমণ করা হয়ে উঠে না। কারণগুলো ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কেউ অর্থনৈতিক কারণে কিংবা কেউ সময় সল্পতার কারণে নিয়মিত ভ্রমণ করতে পারছেন না। কিন্তু ভ্রমণ মানে এই না যে আপনাকে এক দেশ থেকে অন্য আরেক দেশে যেতে হবে, ব্যাপক টাকা পয়সা খরচ করতে হবে, অনেক অনেক সময় নষ্ট করতে হবে! ভ্রমণ তো এটাও হতে পারে যে, আপনি আপনার পরিবার কিংবা কাছের বন্ধুবান্ধদের সাথে নিয়ে আপনার বাড়ির কাছাকাছি কোন দর্শনীয় স্থান কিংবা অন্য কোথাও একটি দিনের জন্য ঘুরতে গেলেন। আমরা যদি এভাবে চিন্তা করি তাহলে কিন্তু আমরা খুব সহজেই ভ্রমণ করতে পারি প্রতি সপ্তাহে কিংবা নিয়মিত। কিন্তু আমাদের এত জটিল চিন্তাভাবনার কারণে আমরা নিয়মিত ভ্রমণ করতে পারছি না। যার কারণে আমাদের জীবন অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। ঠিকমতো খাবার না খেলে যেমন আমাদের দৈহিক বিকাশ হবে না তেমনই নিয়মিত ভ্রমণ না করলে আমাদের মনের বিকাশ ঘটবে না। আর আমরা সকলেই চাই সুস্থ দেহের সাথে সুন্দর একটি মন। আর তাই আমি বলব সুন্দর, সুখকর একটি জীবন পাওয়ার জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই।
ভ্রমণে বাড়ে জ্ঞান, প্রশান্তি আসে মনে। আপনি ঠিক কতটুকু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখেন, তা পরিমাপ করতে পারেন ভ্রমণের করে। সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশে, নতুন লোকজনের সাথে নতুন অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ হতে পারেন। আর নিজেকে একজন অভিজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিতে পারাটা খুবই গর্বের বিষয়। আজকাল তো অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকরিও মেলে না, বুঝতেই পারছেন অভিজ্ঞতার কত দাম! তাই আমাদের কে সকল বিষয়ের পাশাপাশি ভ্রমণ সম্পর্কিত যাবতীয় কিছুতে অভিজ্ঞ থাকতে হবে।ধরুন আপনি আফ্রিকা মহাদেশের কোন একটি দেশে ভ্রমণে গিয়েছেন কিন্তু আপনি সেই দেশের ভাষায় পারদর্শী নন। সেক্ষেত্রে আপনি কিভাবে আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিংবা খাবারের অর্ডার করবেন সেটিও একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। আর সব ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ মোবালেকা করার মানসিকতা গড়ে তোলাটা অনেক বেশি জরুরি।
আপনি দৈনন্দিন জীবনে হয়তো একাধিক বার ভেবেছেন আপনি হতাশায় নিমজ্জিত। সেই হতাশা নিয়েই হয়তো কাটিয়ে দিয়েছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়। নানান কারণে আপনি হতাশ হতে পারেন, হতে পারে সেটা পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগত। তবে যাই হোক না কেন, আপনার সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে ভ্রমণ! হতাশার সেই সময়টিতে আপনি যদি ভ্রমণে যান অবশ্যই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসেবে সর্বোত্তম পছন্দ হতে পারে আপনার বন্ধুবান্ধব।
আমি মনে করি নিজেকে পরীক্ষা করার একটি উত্তম প্লাটফর্ম হলো ভ্রমণ ৷ ভ্রমণে গেলে আপনার নিজের সরঞ্জামাদি নিজেকেই যত্ন করে গুছিয়ে রাখতে হবে। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে আপনার নিজের কাজটা আপনার নিজেকেই করতে হয়। ভ্রমণ মানুষকে আরামের অঞ্চল থেকে বাহিরে নিয়ে যায় এবং নিজেকে খুব যাচাই করতে শেখায়৷ আপনি হয়তো এমন কিছুও শিখতে পারেন ভ্রমণের মাধ্যমে, যা আপনি স্কুল কলেজে দিনের পর দিন ক্লাস করেও শিখতে পারেন নি। তাই আমি মনে করি স্কুল কিংবা কলেজের ক্লাসের তুলনায় ভ্রমণের শিক্ষা অধিকতর দামি। এজন্য ভ্রমণকে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।
ভ্রমণ আপনাকে মায়া কাটাতে সাহায্য করে। আপনি যখন বন্ধুবান্ধবের সাথে ভ্রমণে যান তখন আপনাকে বাবা-মা,পরিবার ছেড়ে কিছুদিনের জন্য বাহিরে থাকতে হয়। এতে করে পরিবারের প্রতি যে অতিরিক্ত টান কাজ করে তা একটু কমে স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে, যা আমাদের ব্যবহারিক জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ? দেখুন আপনার যদি হঠাৎ দূরে কোথাও চাকরি হয় বা ধরুন পড়াশোনার জন্য আপনাকে অনেক দূরে পরিবার ছেড়ে থাকতে হবে। আপনার অভ্যাস না থাকলে তা খুবই কষ্টকর হবে আপনার জন্য। তাই নিয়মিত ভ্রমণ করে অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যাতে করে এসব কষ্ট থেকে রেহাই পেয়ে সুন্দর জীবন পরিচালনা করতে পারেন।
বাড়ি থেকে দূরে কোথাও কিছুদিনের জন্য যাওয়া আপনাকে আপনার জীবন প্রতিবিম্বিত করার সুযোগ করে দিবে। দারুণ সুযোগ পাবেন নিজেকে যাচাই করার। তবে আর যাই হোক দিনশেষে যখন আপনি বাড়ি ফিরে আসবেন তখন হয়তো বলবেন ‘বাড়ির মত শান্তির জায়গা পৃথিবীতে আর কোথাও নেই’
বর্তমান সরকার ভ্রমণ নিয়ে খুবই আগ্রহী। তারা ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে, কিভাবে ভ্রমণের ব্যাপারে আগ্রহী করে তোলা যায়, কিভাবে দেশের ভ্রমণব্যবস্থা আরো দৃঢ় করা যায়, কিভাবে বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায় এসব নিয়ে। তাই কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই বলা চলে যে ভ্রমণ আমাদের অর্থনীতিকে আরো অনেক প্রসারিত করতে পারে।
বর্তমান প্রজন্ম ভ্রমণের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। তারা নিয়মিত ভ্রমণ করছে এবং মানুষকে আগ্রহী করছে ভ্রমণে। বর্তামানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ বা পেজ এর মাধ্যমে কিছু তরুণ – তরুণীরা ভ্রমণ বিষয়ে নানান তথ্য দিয়ে যাচ্ছে অনবরত। এসব তথ্যের মাধ্যমে সকলেই উপকৃত হচ্ছে আর অনেক মানুষ সেখান থেকে আগ্রহী হয়ে প্রথমবারের জন্য ভ্রমণেও যাচ্ছে। বাংলাদেশের আনাচেকানাচে ভ্রমণ উপযোগী এমন সব সুন্দর সুন্দর জায়গা রয়েছে যার সন্ধান হয়তো এখনও আমরা পেতাম না যদি না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসকল গ্রুপ কিংবা পেজের মাধ্যমে জায়গা গুলোর পরিচিতি ছড়িয়ে পরতো। আমরা প্রতিনিয়তই এমন সব জায়গার সন্ধান পাচ্ছি যা সত্যিই অসাধারণ এবং অনন্য। তাই নিঃসন্দেহে বলা চলে যে মানুষকে ভ্রমণে আগ্রহী করতে আমাদের বর্তমান প্রজন্মের ভূমিকা অতুলনীয়।
সবশেষে বলব, আমাদের সকলকেই নিয়মিত ভ্রমণ করতে হবে নিজেকে অভিজ্ঞ করার জন্য, নিজেকে যাচাই করার জন্য, নিজেকে তৈরী করার জন্য, নিজের সুস্থতার জন্য, নিজের প্রশান্তির জন্য, দেশের অর্থনীতির জন্য এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য।
ভ্রমণ করুন বিশ্ব জানুন।