- প্রিয় পাঠক-পাঠিকা ভাই ও বোনেরা আসসালামু আলাইকুম আশা করি ভাল আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি।পবিত্র ঈদ উল-আযহা উপলক্ষে সবাই কে আন্তরিক অভিন্দন ও ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক
মহান সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন আমাদের অর্থাৎ মানুষ জাতি কে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরন করেছেন।একজনকে অন্যজনের ওপর নির্ভরশীল করেছেন কারন কেউই ই স্বয়ংসম্পুর্ণ নয়।প্রয়োজনের তাগিদে একটা মানুষ অন্য আরেকটা মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য কিংবা দরকারে হাত পাতে।নিজের আবেগ,ভালবাসা,অনুভূতি প্রকাশ যেমন করতে পারে তেমনি একজন আরেকজনের সাথে সেটা ভাগাভাগি করতে পারে।আর এইসব মৌলিক গুনাবলির কারনে ই মানুষ কে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
শুধুমাত্র আকার-আকৃতি আর অবয়ব থাকলেই তাকে মানুষ বলা যায় না।মানুষ হওয়ার জন্য সবথেকে বড় জিনিস যেটা দরকার তার নাম মনুষ্যত্ব।মানুষ হতে হলে সর্বপ্রথম এই গুনটা ই থাকা দরকার একটা মানুষের ভিতর।মানুষের ভিতর যখন ভাল-মন্দ,উচিত-অনুচিত,জিনিসগুলোর বাছ বিচার না থাকে তখন সে আর মানুষ হিসেবে সমাজে গন্য হয়না।তাই একটা বাংলা প্রবাদ আজ খুব মনে পরে যে”প্রান থাকলে প্রাণী হয় কিন্ত মন না থাকলে মানুষ হয় না”।কথাটার অর্থ তখন না বুঝলেও আজ হারে হারে বুঝতে পারছি।আসলে সমাজে আমরা হাজার ও মানুষ দেখতে পাই তারা কি আসলেই সবাই মানুষ।না তারা সবাই মানুষ না তারা মানুষ নামক একটা প্রানী মাত্র।আর আজকে ঠিক তেমনি একটা প্রানীর বাস্তব গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম আর বিচার করার ক্ষমতা টা আপনাদের কে দিলাম।আপনারা ই বিচার করবেন সে কি আসলেই মানুষ?১৯৯৯ সাল। নিলয়(ছদ্মনাম) গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে শহরে।কারন মা-বাবা শত চেষ্টা করেও নিলয় কে বাগে আনতে পারেনি।নীলয়-নীরব এরা দুজন জময ভাই।কিন্ত তাদের এক জায়গায় আনলে কেউ ই বলেবে না যে এরা দুজন যমজ ভাই।কারন একজন লম্বা,চেহারা কালো।আরেকজন একটু খাটো চেহারা ও গায়ের রং সুন্দর।যাইহোক দুইভাই এর মধ্যে নীলয় ছোট।ছোটবেলা থেকে নীলয় খুবই ডানপিটে ও দুষ্টুমিতে সেরা ছিল।নীরব অবশ্য শান্ত প্রকৃতির।নীরবের গল্প টা অন্য কখনো বলব।মা-বাবা দুজনেই তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল তাদের মানুষ করার।ছোটবেলায় বাবা যখন তাদের মাদ্রাসায় দিয়ে আসতেন বাবা আসার আগে নীলয় বাড়ী চলে আসত।বাড়ির পাশে নদীতে দিনের অধিকাংশ সময় জুড়ে ঝাপাঝাপি করাই ছিল নীলয়ের প্রধান কাজ।এভাবে বার বার দিয়ে আসলেও সে বারবার বাবার আগে পৌঁছে যেত বাড়িতে বাবা অবশ্য তেমন রাগী ছিল না।কিন্ত মা ছিল ভীষণ রাগী।মা তাদের যেমন ভালবাসত নীলয় তাকে ভয়ও পেত।মায়ের হাতের কাছে বসে সে কখনোই দুষ্টুমি করত না।কারন মা যে যমদূত তার কাছে।গ্রামের অন্য ছেলেদের সাথে মিশে শেষ অবধি তার অবস্থা এমন হল যে,তার দুষ্টুমি টা কে এখন সবাই অপরাধ হিসেবে গন্য করা শুরু করল।শেষে কোন উপায়ান্তর না দেখে নীলয়ের দুলাভাই তাকে নিয়ে এল শহরে।শহরে এনে তাকে একটা কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে দিল।তার দুলাভাই ছিল অই কোম্পানির মিস্ত্রী।নীলয় প্রথমে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকলেও দুলাভাই মিস্ত্রি থাকার সুবাদে তাকে বেশিদিন শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়নি অল্পদিনেই সে ও কাজ শিখে গেল।এরপর তাকে অন্য একটা কোম্পানিতে নিয়োগ দিয়ে দেয়া হল।ততদিনে নীলয়ের অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়ে গিয়েছ।এদিকে গ্রামে থাকা মা নীলয়কে দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে।যতই দুরে ঠেলে দিক না কেন মায়ের মন সন্তানের জন্য ছটফট করতে ই থাকে।সেও তার ব্যতিক্রম নয়।নীলয় ও দুরে গিয়ে মা কে সব সময় মনে রাখে। মাকে নিয়ে গাওয়া শিল্পীর গান শুনে নীলয়।এরপর বাড়িতে আসে অনেক দিন পর বেড়াতে।বাড়িতে কিছুদিন থেকে আবার তার কর্মস্থলে ফিরে যায় সে।কিন্ত তার পুরোনো অভ্যাস টা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।আবার শুরু হয় বাজে কর্মকান্ড।নেশা করা,জুয়া খেলা ও বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে সে।ফলশ্রুতিতে তার নামে নালিশ সহ বিভিন্ন মহলের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হতে থাকে।যার ভোগান্তি পোহাতে হয় তার দুলাভাই কে।কারণ অভিভাবক তো সেখানে আর কেউ নেই।বাহিরের প্রত্যেক টা মানুষের অভিযোগের তোপের মুখে নীলয়ের দুলাভাই ঘরে ফিরে রাগ ঝাড়ত তার বোনের ওপর।এভাবে অনেকদিন চলল কিন্তু কোনভাবেই পথে আনা গেল না নীলয়কে।শেষ অব্ধি সবাই সিদ্ধান্ত নিল তাকে বিয়ে দেবে।কারণ বিয়ে দিলে নাকি মানুষ ভাল হয়ে যায়।আদৌ আমি কখনো দেখেনি যে খারাপ থাকে বিয়ে করলে সে ফেরেশতা হয়ে যায়।অবশ্য সবার ক্ষেত্রে কথাগুলো ঠিক নয়।আমি আমার দৃষ্টিকোন থেকে বলছি।যাইহোক,যেই কথা সেই কাজ।দেশে নিয়ে এসে বিয়ে দিয়ে দেয়া হল।বিয়ের পর স্ত্রী নিয়ে নীলয় চলে এল তার কর্মস্থলে। বিয়ের আগে বোনের বাসায় থাকত।বিয়ের পরও সেখানে থাকত স্ত্রীকে নিয়ে।নীলয়ের দুটো ভাগনে ছিল।যারা তাকে ছাড়া কিছু চিনত না।নীলয় ও বিয়ের আগ পর্যন্ত তাদের ছাড়া কিছুই বুঝত না।দুলাভাই যদি কখনো ভাগ্নেদের বকা দিত,রাগ করত,তাহলে সে তার সাথে ঝগড়া পর্যন্ত করতে দ্বিধা করত না।ভাগ্নেদের কে এতটাই ভালবাসত যে তাদের মুখে কোন জিনিস লাগবে শুনার আগেই হাজির করত।ভাগ্নেরাও আবদার করতে হলে অই মামার কাছে ই করত।অবশ্য কখনো আবদার করার প্রয়োজন ই পরে নাই অমন মামার কাছে।তার আগে আলাদিনের দৈত্যের মত হাজির করে দিত সব।বিয়ের পর ভাল মামা যে এত ভাল হয়ে যাবে সেটা কেউ ই ধারনা করতে পারে নি।বিয়ের ৬ মাসের মাথায় একদিন স্ত্রীকে সামান্য দুটো কথা বলার অপরাধে বোনের বাসা ছেড়ে চলে যায় নীলয়।ভাগ্নেদের আবদার আর বোনের চোখের জল কিছুর ই মুল্য দিল না সেদিন নীলয়।এত ভাল হবে ভাবতে পারেনি বোন ভাগ্নেরা।এরপর অনেক দিন অনেকবার মামাকে খুজেছে ভাগ্নেরা।কত দিন যে কেদে কেদে ঘুমিয়েছে তার হিসাব নাই।কিন্ত মামা খুব ভাল মানুষ হয়ে যে গিয়েছে তা তারা জানত না।মা বলেছিল মামা হয়ত কোন একদিন ভাল হবে।কিন্ত আদৌ কি ভাল হবে কিনা সেটা মায়ের ই জানা ছিল না।বিয়ের পর নতুন তান্ডব শুরু করে নীলয়।কোন একফাকে বাড়িতে এসে বাবার ব্যবসার টাকা ড্রয়ার ভেঙে নিয়ে পালিয়ে যায়।ওদিকে চাকরি করে যা বেতন পায় তা যায় শশুর বাড়ি।আর টাকা পয়সা সব চুরি করবে বাড়ি থেকে।শেষ অব্ধি টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়।এরপর গাড়ি চালানো শিখে।ভাগ্যের ঘুর্নায়মান চাকার ঘূর্নির সুবাদে সে হয়ে যায় নামকরা গাড়ি চালক।আয় করতে থাকে বহুত টাকা।অনেক আগে থেকেই ভূলে যায় পিতা-মাতা বলতে কেউ আছে।ভুলে যায় নিজের আত্মীয়-স্বজনদের খোজ নিতে হয়।স্ত্রী কে নিয়ে চলতে থাকে সুখের ভেলায়।
তার বাবা এর ভিতর পরপর দুইবার ব্রেইন স্ট্রোক করে।অনেক বলে কয়ে আনা হয় তাকে।বাবা বারবার নীলয়কে দেখার আবদার করে কিন্ত নিলয় আসতে চায় না।পরে অনেক জোড়াজুড়ি করলে আসতে বাধ্য হয়।কিন্ত স্ত্রীর জন্য একপলক দেখে ই চলে যায়।তার স্ত্রী তার বাবা মাকে দেখতে পারে না।সেও বাধ্যগত তার স্ত্রীর কাছে।বাবা-মা কোন কিছুর দরকার নাই তার।যদি তার স্ত্রীকে সামান্য কটু কথা বলা হয় সে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।কিন্ত তার সামনে তার বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়,যা খুশি তাই বলা হয় করা হয়।সে সব কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী কিন্ত কোন বাদ প্রতিবাদ নেই তার।মা-বাবা,ভাই-বোন,কিছুই দরকার নাই তার।স্ত্রীর বেলায় ১৬ আনা চাই।
এই ঘটনা দেখে অনেকেই বলে তার স্ত্রী নাকি তাকে ফিকির তদবির করেছে।সে যা কিছুই করুক তাকে নাকি কিছু বলবে না।তাকে বশে নিয়ে নিয়েছে।এখন আমার প্রশ্ন ভাই ফিকির ফকির আমি বিশ্বাশ করি না।আর করলে ই বা কি।আমার আপনার ভিতর কি বিবেক বলতে কিছু নেই?
আজকে আমি আপনি কেন বিবেক টাকে শিকেয় তুলে রেখে দিয়ে মনগড়া কাহিনী বলে চলছি?ছুটছি মরিচীকার পেছনে।আপনি ও খোজ নিয়ে দেখেন যে মেয়েটি আপনার মনুষ্যত্ব আর বিবেক কে নষ্ট করে আপনাকে পিতা-মাতার মত মহা মূল্যবান সম্পদ ভোগ দখল করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে নিজে আপনার সব কিছু একা ভোগ করার জন্য।সেও বাবার বাড়ি তে গিয়ে তার ভাই টাকে বুঝায় যে ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত’।
সে ও যৌবনে মা-বাবাকে আপনার চোখের বালি বানিয়ে বৃদ্ধ বয়সে এসে ছেলে বৌয়ের কাছে শাশুড়ির অধিকার ফলানোর আন্দোলন করবে।কেন ছেলে বাবা মায়ের খোজ নিবে না?কেন ছেলের বৌ শশুর-শাশুড়ি কে ভাত দিবে না?আলাদা ফ্লাটে থাকবে?কি দোষ করেছি আমরা।কেন তারা মা-বাবাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দিবে?বৃদ্ধ হয়ে গেলে অযত্নে অবহেলায় ধুকে ধুকে মরতে হবে?
এসবের যদি উত্তর খুজতে যান আমি বলব।পিছনে ঘুরে দেখে আসুন আপনি কি এমন কোন আচরন করেছিলেন যার কারনে আপনার বাবা মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন।
আমি বলব আল্লাহ কাউকে ক্ষমা করেন না।আর আপনি যদি নাস্তিক ও হন আপনি আর কিছু বিশ্বাশ করেন বা নাই করেন পিতা মাতার অভিশাপ যে আপনি বিশ্বাস করেন তা মুখে না বললেও আপনার অলক্ষ্যে তা আপনার মনে সাড়া দিয়ে যাবে।
তাই আসুন নিজের বিবেক কে জাগ্রত করি।যেকোন কাজ কিংবা কথা করা কিংবা বলার আগে নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করি এর ভিতর দিয়ে কি আমার মনুষ্যত্ব টা প্রকাশ পাবে? নাকি লোকে আমার অগোচরে বা আমি মরে গেলে আমাকে পশুর ন্যায় তুচ্ছ করে ছুড়ে ফেলে দিবে মন থেকে?
তাই কবির ভাষায় বলছি“এমন জীবন তুমি করিও গঠন,মরিলে হাসিবে তুমি কাদিবে ভূবন”।
তাই আসুন বিবেক কে জাগ্রত করি, মনুষ্যত্ব অর্জন করি।আজ এ পর্যন্ত। আল্লাহ হাফেজ।