১৯৬৮ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ ছাত্র জোসেলাইন বেল চমকপ্রদ এক আবিষ্কার করলেন। বেল ছিলেন জ্যোতিপদার্থবিদ্যার ছাত্র। কেমব্রিজের মানমন্দির খুব বিখ্যাত। সেখানে রয়েছে বিশাল রেডিও টেলিস্কোপ। দূর মহাকাশের অজানা তথ্যের আবিষ্কারের আর গবেষণায় ব্যস্ত বিজ্ঞানীরা। কেমব্রিজের মানমন্দিরের রয়েছে ৩ টি টেলিস্কোপ। এর একটির সাহায্যে প্রথম রেডিও পালসার আবিষ্কার করেছিলেন জোসেলাইন। দূর মহাকাশ থেকে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের বেতার সঙ্কেতের উৎস তিনি আবিষ্কার করলেন। যেসব বস্তু থেকে বেতার সঙ্কেত আসছিল তারা আয়তনে ক্ষুদ্র। তাদের অবস্থান ছিল সৌরমণ্ডল থেকে অনেক অনেক দূর। জোসেলাইন পরিমাপ করে দেখলেন নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর সেখান থেকে ঝলকে ঝলকে বেতার সঙ্কেত আসছে। এই সঙ্কেত যেন পাঠানাে হচ্ছে পৃথিবীকে লক্ষ্য করে। প্রথম সঙ্কেতের পরবর্তী সঙ্কেতগুলাে আসছে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে। এই উৎসগুলাের তখন নাম রাখা হলাে পালসার। প্রথমটির বেতার সঙ্কেত আসছিল প্রতি ০.২৫ সেকেন্ড অন্তর। এই নাটকীয় আবিষ্কারের দরুন বিজ্ঞানীরা কৌতূহলী হয়ে উঠলেন।। তারা ঘােষণা করলেন দূর মহাকাশে সম্পূর্ণ নিয়ে বেতার সঙ্কেত জ্ঞাপক উৎসের সন্ধান পেয়েছেন নতুন। সংবাদপত্রে এক ধরনের এ বেশ আকর্ষণীয় প্রবন্ধ বেরুল। অনেকে ধারণা করতে লাগল এগুলাে আসলে কোনাে রহস্যময়। দূর নক্ষত্র জগতের বিচিত্র কোনাে উড়ন্ত সভ্যতার প্রাণিরা হয়তাে এভাবে বেতার সঙ্কেত পাঠিয়ে ঐ সঙ্কেতের পৃথিবীর মাঝে মানুষের কোনাে সাথে বক্তব্য যােগাযােগ আছে। করতে অনেকদিন চাইছে। থেকেই হয়তাে। কোনাে কোনাে বিজ্ঞানী এ রকমের ধারণার কথা প্রকাশ করে আসছিলেন ইতালির মার্কনি যখন বেতার আবিষ্কার করেন তখন কিছু রহস্যময় ঘটনা ঘটেছিল। মার্কনি অনুভব করেছিলেন বিশেষ কিছু বেতার সঙ্কেত। বিজ্ঞানী হ্যানস ও বার্নাড যখন পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় মাের্স কোড পাঠাতেন তখন গ্রাহক যন্ত্রে এ সঙ্কেতগুলাের অতিরিক্ত কিছু সঙ্কেত ধরা পড়ত। এতে মূল বেতার বার্তা থেকে এই অতিরিক্ত বার্তার সময়ের তারতম্য থাকত সেকেন্ড থেকে মিনিট পর্যন্ত বার্তাটি আসত একটু দেরি করে। চলত প্রায় ২৪ ঘন্টার মতাে। এতে মনে হতাে যেন মূলবার্তার প্রতিধ্বনি হচ্ছে ঐ অতিরিক্ত বার্তায়। যেন দূর থেকে কেউ যােগাযােগ করতে চাইছে। এই রহস্যময় বার্তা নিয়ে প্রচুর জল্পনা কল্পনা হতে লাগল। ১৯৭৩ সালে ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী লুবান বললেন, বার্তাটি ছিল মহাশূন্য থেকে কারও কোনাে বেতার যন্ত্র থেকে আসা যারা আমাদের সাথে যােগ স্থাপন করতে চায়। এই রহস্যময় বার্তা নিয়ে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর মতামত এল। সােভিয়েত প্রকৌশলী গিলিয়েভের ধারণা, ঐ বার্তাটি ছিল অসম্পূর্ণ। ওটাতে গ্রহান্তরের অতিথিরা বা তাদের রােবট উপগ্রহ ওদের নক্ষত্রমন্ডলের অবস্থান জানিয়েছে নক্ষত্রমণ্ডলের ঔজ্জ্বল্যতার হিসেব অনুযায়ী। এভাবে মহাকাশ থেকে আসা বার্তা নিয়ে নানা কল্পনা চলতে লাগল। কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা কয়েক বছর গবেষণার পর আবিষ্কার করলেন যে বিশেষ এক ধরনের নক্ষত্র রেখে বিকীর্ণ। হচ্ছে ঐ বেতার সঙ্কেত। নক্ষত্রগুলাে হলাে নিউট্রন নক্ষত্র। জোসেলাইনের আবিষ্কার নতুন এক ধারণার জন্ম দিল। তিনি – দেখলেন, দূরাকাশ থেকে আগত ঐসব বেতার সঙ্কেত সৌরঝড়ের মাঝ দিয়ে আসছে। সূর্য থেকে সৌরজগতে প্রতিনিয়ত ছড়াচ্ছে। আয়নিত গ্যাস। যাকে বলে সৌরঝড়। ঐ ঝড়ের মাঝ দিয়ে আসার সময় সঙ্কেতগুলাে একবার হয় জোরালাে। আবার নিস্তেজ। জোসেলাইন আবিষ্কার করলেন সৌরঝড়ের প্রভাবে এই তারতম্য ঘটছে। না দুরাকাশের উৎসগুলাে থেকে ঠিক ঐভাবেই সঙ্কেত পাঠানাে হচ্ছে। ঐ পালসারের নাম দেয়া হলাে কেমব্রিজ পালসার জানা গেছে পৃথিবীর থেকে ঐ পালসারটির দূরত্ব ১০ থেকে ১০০ আলােক বছর।
বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান মানব সভ্যতার এক বিশিষ্ট অবদান।মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান যে কত ব্যাপক তা প্রতিদিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা...