আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা। সবাই কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই বেশ ভালোই আছেন।
তবে একটু চিন্তা হয় তাদের জন্য, যাঁরা এরেখনোফোবিয়ায় আক্রান্ত। আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত। আপনিও কি এরেখনোফোবিয়ার ভিকটিম?
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক……..
ভয় মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার নির্দিষ্টতা আছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্টতা অতিক্রম করে, একে ভয়রোগ/ ভীতিরোগ/ ফোবিয়া বলে।
আজ আমরা এরেখনোফোবিয়া বা মাকড়শা দেখলেই গা শিউরে ওঠে এমন একটি মানসিক ভীতি নিয়ে আলোচনা করবো। এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ জানতে হলে পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এরেখনোফোবিয়া: এরেখনোফোবিয়া অর্থ মাকড়শা দেখলেই গা শিউরে ওঠে, মানুষের মনে অবস্থান করে নেওয়া এমন একটি ভীতিকর অবস্থা। সাধারণত যেসব মানুষ বায়োলজীর শিক্ষার্থী, তাদের জন্য এই ভয় মারাত্মক। কেননা বিবিন্ন ধরণের এক্সপেরিমেন্ট ও প্র্যাকটিকেলে তাঁদেরকে ইঁদুর, ব্যাঙ, তেলাপোকা ও মাকড়সা নিয়ে গবেষণা করতে হয়। অনেক ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হলে তাঁদেরকে অবশ্যই প্রাণীটি কাটাকাটি করতে হয়। বুঝতে হয় অনেক কিছু। তখন তাদের মধ্য থেকে কারো যদি এরেখনোফেবিয়া থেকে থাকে, তাহলে ত শেষ!
তাছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে আমরাও কম না। এরেখনোফোবিয়ার শিকার আমাদের বেশিরভাগই। আর যাদের এই ভয় নেই, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। কারণ, তারা সহজেই পাহাড়-পর্বত ও জঙ্গলাকীর্ণ স্থান গুলোতে ভ্রমণ করতে পারবেন।
আমি আমার একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। ছোটবেলা থেকেই আমি এই ফোবিয়ায় প্রচন্ড আকারে আক্রান্ত আছি।
একদিন আমার এক খালার বাসায় কোরবানী গরুর মাংস নিয়ে আমাকে বেড়াতে যেতে হয়। খালার বাড়ি ছিলো আমার বাড়ি থেকে প্রায় ২০ মাইল দূর। সেখানে যেতে যেতে রাত হয়ে যায় বিধায় খালার বাসাতেই আমাকে অবস্থান করতে হয়।
খালার ছিলো তিন মেয়ে। ফলে আমাকে একা একটা রুম দেওয়া হলো রাতে ঘুমানোর জন্য। এদিকে আমি জানি যে আমার অটোফোবিয়া। ফলে খালাতো বোনদের সাথে জোর করে গল্প করতে থাকি আমি। অনেক রাত হয়ে যায়। তাদেরকেও তাদের বিছানায় চলে যেতে হয়।
খালার বাড়ি শহরে ছিলো। সেই শহুরে পরিবেশেও যে বড় বড় মাকড়সারা বাসা বেঁধে থাকে, তা আমার বোধ হয় কমই জানা ছিলো।
রাত সাড়ে ৩ টার দিকে চোখ খুলে যায় আমার। হঠাৎ খেয়াল করলাম হাতের ওপর কাতুকুতু লাগছে। হাত একটু নাড়া দিতেই সুড়ুত করে জিনিসটা কোথায় যেন চলে গেলো বুঝতে পারলাম না। পরে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে দেখি দেওয়ালের নিচে একটা ইয়া বড় মাকড়সা।
আমার অবস্থা তখন শোচনীয় হয়ে গিয়েছিলো!
প্রচন্ড ঘৃণা আর মনপর মধ্যে প্যানিক এটাকের তোড়ে আমার জান খুপড়ি থেকে বারংবার বের হয়ে যেতে চাইছিলো!
এরকম আরও অনেক ঘটনা রয়েছে আমার জীবনে। আপনাদের জীবনেও কম নেই আশা করি। কমেন্ট বক্স তে আছেই, জানিয়ে দিয়েন যদি আপনারও এরকম কোন অভিজ্ঞতা থেকে থাকে..
পাঠকদের জানিয়ে রাখি এই জাতীয় ফোবিয়া বা ভয়ে মানুষ নিজেদেরকে পাহাড়-পর্বত জাতীয় ভ্রমণক একটু কম উপস্থিত করে রাখতে পছন্দ করে। মাকড়শার কথা তাঁরা শুনতে পারেনই না একদম। আশে পাশে কোথাও মাকড়সা দেখে এসেছেন বললে তারা সে জায়গা যেমনই হোক, যেতে চাইবেনা।
তবে জেনে রাখা উচিৎ যে, এই এরেখনোফোবিয়া বা মাকড়শার ভয় মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে গেলে মানুষ অন্যান্য আরও ফোবিয়া বা ভয়রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। যেমনঃ এব্লুটো ফোবিয়া বা স্নান, ধোয়া-মোছা অথবা পরিষ্কার করার ভয় রোগ। আর অত্যাধিক হয়ে গেলে প্যানিক এটাকের শিকার হয়ে যায়।
এই ফোবিয়ায় কমবেশি সবাই-ই আক্রান্ত। তবে জেনে রাখুন এটি বিশেষ কোন রোগ নয়। এই মাকড়শা নিয়ে অতিরিক্ত ভয় থাকলে সেটা নিবারণে কিছু ব্যবস্থা আপনাকে অবশ্যই নেওয়া উচিত। যেমনঃ
১. মাকড়শা দেখলেই মারবেননা। ঝাড়ু বা লম্বা কোন লাঠি দিয়ে তাড়িয়ে দিবেন। মনে রাখবেন, আপনার অসাবধানতা ব্যতীত কখনোই আপনি সেটির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেননা।
২. মাকড়শা,, ব্যাপারটাকে সহজে নিতে শিখুন। অর্থাৎ নিজ বাসায় বা অন্যকোথাও মাকড়শা থেকে থাকলে আপনার কিছুই হতে যাচ্ছেনা, এমনটা ভাবা। ভাবতে না পারলেও ভাবার চেষ্টা করা।
৩. সম্ভব হলে একটা বড় মাকড়শাকে মেরে সেটিকে সাহস করে দেখা। আর সর্বোপরি সেটির সবকিছু দেখে নেওয়া, ইত্যাদী।
কমেন্ট করে জানিয়ে দিন আপনিও যদি এই ফোবিয়ার ভিকটিম হয়ে থাকেন..
পরবর্তী পোস্টে আরও একটি ফোবিয়া বা ভয়রোগ নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে থাকবে সেই ফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপগুলোও।
Related Tags:
ফোবিয়া কি?
ফোবিয়া কাকে বলে?
Arachnophobia
এরেখনোফোবিয়া
মাকড়শার ভয়
মাকড়শা দেখলেই গা শিউরে ওঠা
মাকড়শার ভয় থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ
এরেখনোফোবিয়া থেকে উত্তরণের পদক্ষেপ