মানব ধর্মের একটাই গান, মানুষ মানুষের সবেই সবার। কিসের হিংসা? কিসের বড়াই? মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই। ফুল ফোটে ঝড়ে যায়, তাতে কিছু সময় নেয়, সময় দেয় না মৃত্যুর কাছ থেকে ধার নিয়ে আসা এ জীবন! বলা হয়, “আমার হলো বাড়ি, তোমারটাতো ঘর তফাৎটা কি বলতে পারো কে আপন,কেই বা পর?”এক পলকের এ জীবনে স্বপ্ন অফুরান। ঘর বাধি,সংসার গড়ি, গর্ব কামাই,দম্ভ করি, আপন পরের হিসেব খুলি! স্মৃতি কথার ছন্দ রচি! ভোগ বিলাসের কল্প করি! পরের সুখের গন্ধ শোঁকি! নিত্য নতুন কতো না রঙিন স্বপ্ন দেখি!স্বপ্নের কি কোন শেষ আছে? চাওয়া পাওয়ার কমতি যেথায়,হৃদয়ের আলতো ফ্রেমে সেথায়ই কষ্টগুলো মমি হয়ে রয়! জীবন ধারার এ পর্বে সুখ আর শোক, জীবিত বলতে সবারই।
তবে গোলাপের অনুভূতির কথা ভাবি।গোলাপের সংস্রবে আসা ভ্রমরকে তাঁর কোমলতায় ভেবেছিলো আমার,গোলাপ তো ঝড়ে গেলো!দেখিনা তো সে ভ্রমরের আনাগোনাও এ বাগে! মানুষ তার পার্থিব সম্পর্কের স্বরূপটা যেন গোলাপ এবং তাঁর ভ্রমর সংস্রবের অনুরূপ! যেমনি ভাবে ঝড়ে পড়া গোলাপ ও তাঁর অনুভূতি এবং ভালোবাসাহারা ভ্রমর!ফুল বিহনে যাকে আর বাগে দেখা যায় না।তবুও মানুষ মানুষের তরে। তোমার আমার আনন্দের এ বাসর ঘর! সবাই সবার! আবার কেউ কারও নয়। একাকী এসেছি একাকীই যাব!তফাৎটা শুধু এপার আর ওপার।
“দূর দূর করে এ মন ,ক্লান্ত পথিকের পথের বায়,
নিঃস্ব হলে নিঃসঙ্গ ভুবন, আপন পর ভাই কাহারে কয়?”
কেউ কি দেখেছি কোন দিন কারো ছাড়া কেউ নয়!
জীবনেরও পথ হয়েছে অচল যবে হয়েছিল সঙ্গী হারা? কথায় কে না কয় ,এই জীবনের তুমি অংশ…তুমি বিনে এ জীবন ধ্বংস!
ভালোবাসার অনলে দগ্ধ হয়ে উজাড় হৃদয় যে কেউই যা ইচ্ছে তা বলে। স্বার্থের আঘাতে কে করে রেখেছে আগলে? ভালোবাসা হারিয়ে কারো কী রয়েছে থেমে
জীবনের পথ চলা?
আর কে বা হয়েছি দীর্ঘজীবী? অসীম সুখের স্বপ্ন দেখি
উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ও তীব্র। তাই বলে সাপের মাথা থেকে মণি হরণ করার দঃস্বপ্ন ফলাতে পেরেছে এমন ও বা কে সে? এ জনম পলকের হলেও অনন্ত মহিমা লাভের
এক মহা সুযোগ। জীবনের বড় শক্তি এবং উপার্জনের কাল এটাই যে পলকটি উপস্থিত হয়। কারণ,
এপারের ঘর শূন্য রবে, ওপারের বাড়িটাই সাঙ্গ হবে সবার,আজ আর কাল,পর হবে শুধু ভব সংসার।
রঙ তামাসার রঙ মঞ্চে শুধুই রঙিন স্বপ্ন আর অভিনয় অভিমান! কিন্তু এ ভব সংসারে সমরাঙ্গনের মাঝে বড় অর্জন মানুষের হৃদয় জয় করা। মনুষ্যত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে মানুষ মানুষে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকা।এবং অনন্ত ভবিষ্যৎ এর চিরস্থায়ী বাড়িটা সাজিয়ে নেওয়া। তবেই এ জনম হবে সার্থক এবং সফল।
নিঃসঙ্গ ভুবন
মুহা. কবির হোসেন
মোছরার একটি ঝুলন বাকলে
চিত হয়ে পাখি,
দূর আকাশে তাকিয়ে একালে
ভাবছে দু’টো আঁখি।
কলা গাছটা হলো আড়াল
দাঁড়ালে ফুল ডাটে,
নীল আকাশটা লাগছে বিরল
অবলা এ কূল তটে।
ক্লান্ত বেলা গড়িয়ে আমূল
আসবে কী মা ফিরে?
ঝড়া বাকলের এ ডাটে দূর্বল
কোন সে অচিন পুরে!
অভাগা মন হয় সে পাগল
বর্ণিল বিচিত্র ধরে,
কোথায় এ কেমন অবুঝ আকল
সোনালী সচিত্র করে?
ঝর হাওয়ায় সন্ধ্যা তারা
শুক তারা ডাকে,
আঁধার বুঝি আসছে তারা
ঘন মেঘের ফাকে।
দূর দূর করে এ মন
ক্লান্ত পথের বায়,
নিঃস্ব হলে নিঃসঙ্গ ভুবন
কেউ কাহারো নয়।