মনের গতি প্রকৃতি নিয়ে মনোবিজ্ঞানীগন বহু গবেষণা ও পর্যালোচনা করে এর প্রকৃতি, প্রভাব ও পরিসীমা বুঝার চেষ্টা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ মন থেকে সন্তুষ্ট না হলে তাকে কোনভাবেই সুখী মানুষ বলা যায় না। কিন্তু মনের চাহিদা মূলত মানুষের বয়স, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সামর্থ, ও চারপাশের অবস্থার উপরই নির্ভরশীল।
এর বাইরে মন কল্পনা করতে পারেনা এবং সে এর বেশি চাইতেও পারে না। যদিও বলা হয়ে থাকে মানুষের মনের চাহিদা অপরিসীম, তবুও এর একটা আপেক্ষিক সীমারেখা নির্ধারণ করা যায়। এই লেখায় আমি সেই সীমানাকেই চিহ্নিত করার চেষ্টা করবো। তাহলে চলুন নিচের ঘটনগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক।
ঘটনা-০১: ফাহিম খুব দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের সংসারে সর্বদা অভাব অনটন লেগেই থাকে। কিন্তু তাদের পাশের বাড়ির লোকদের আর্থিক অবস্থা অনেকটা ভালো। তারা যখন পুকুর থেকে মাছ উঠায় তখন ফাহিমসহ গ্রামের অনেকেই তা দেখতে ভীড় জমায়। জেলেদের জালে বড় বড় মাছ পড়লে সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠে। ফাহিমও খুব আনন্দ পায়। ফাহিম চিন্তা করে তাদের মতো আমাদেরও যদি এরকম একটা পুকুর থাকতো?
কিন্তু তার এ আকাঙ্খাটা ততটা তীব্র নয়। শুমাত্র মনের একটা ভাবনাই মাত্র। মাছ উঠানো শেষ হলে প্রতিবেশিরা ফাহিমের মাকে প্রতিবার কিছু মাছ দিয়ে যায়। তার মা মাছ রান্না করলে ফাহিম সর্বদা বড় মাছটি খাওয়ার জন্য বায়না ধরে। কিন্তু মাছ ধরার সময় যে বড় বড় মাছগুলো ধরাপড়ে এবং যা দেখে সবাই চিৎকার করে এইমাছগুলো তার ধারেকাছেও নয়। দিয়ে যাওয়া মাছগুলো অনেক ছোট ছোট। কিন্তু ঐ বড় মাছগুলো খাওয়ার জন্য সে কখনো বায়না করে না এবং সেই চিন্তাও তার মাথায় আসে না। সে শুধু চায় তার মাকে দিয়ে যাওয়া মাছগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় মাছটি পেলেই হলো।
ঘটনা-০২: ফাহিমদের বসত ভিটা তাদের গ্রাম্য বাজারের খুব কাছেই। তাই এখানকার জমি ও বসতভিটার মূল্য দূরবর্তী জায়গার তোলনায় অনেক বেশি। তার পিতা চিন্তা করলো এই বসত ভিটা বিক্রি করে অনত্র স্থানান্তর হলে কম মূল্যে জমি ক্রয় করা যাবে এবং হাতে কিছু টাকাও থাকবে যা দিয়ে একটা ব্যবসা দাঁড় করানো যাবে।
এই চিন্তা করে তার বাবা উক্ত ভিটেমাটি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেলো। ফাহিম নতুন বাড়িতে গিয়ে দেখতে পেলো সেখানকার সবচেয়ে বড় বাড়িটি তাদেরই, যদিও তাদের পূর্বের ঘরটিই এখানে এনে স্থাপন করা হয়েছে। আশেপাশের মানুষদের আর্থিক অবস্থা তাদের চেয়েও সূচনীয়। তাই এখানে আসার পর থেকে সে নিজেকে ধনী পরিবারের সন্তান বলে মনে করা শুরু করলো। (চলবে)