মানুষিক স্বাস্থ্য ঃমানসিক স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা দিতে গেলে আগে ‘স্বাস্থ্যের’ সংজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন। আসলে শরীর ও মন একে অপরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত । একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটাকে কল্পনাও করা যাই না।
WHO মানসিক স্বাস্থ্যকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, (WHO/P. Virot. Mental health is defined) ‘as a state of well-being in which every individual realizes his or her own potential, can cope with the normal stresses of life, can work productively and fruitfully, and is able to make a contribution to her or his community’.
এক কথাই , সহজ ভাষাই স্বাস্থ্য বা মানসিক স্বাস্থ্য উভইকে একসাথে বুঝাতে গেলে বলতে হবে,
সাধারণত, মানুষ শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে যখন সম্পূর্ণ সুস্থ্য ও আরামে থাকে কোন জটিলতা থাকে না, জীবন- জাপন বাধা গ্রস্থ হয় না তখন আমরা বলতে পারি সে একজন সুস্থ্য মানুষ।
এখানে লক্ষ্য করুন, মানসিক বিষয়টি কিন্তু স্বাস্থ্য বা সুস্থতা থেকে আলাদা নই। অর্থাৎ মনও অসুস্থ্য হয়। শরীর রোগমুক্ত থেকে মন যদি রোগাক্রান্ত হয় তারপরও আপনাকে সুস্থ বলা যাবে না। আমাদের মনও অবশ্যই স্বাস্থ্যের একটি অংশ । শরীরকে যেমন রোগমুক্ত রাখার জন্য আমাদের সচেতনতা প্রয়োজন তেমন মনকে সুস্থ রাখার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নই । শরীরের যেমন রোগ রয়েছে তেমন মনেরও রোগ রয়েছে। এবং উভই এর-ই চিকিৎসা রয়েছে । তাই আমাদের প্রকৃত সুস্থতার সুখ পেতে হলে শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
যখন বুঝবো আমার মানুষিক স্বাস্থ্য রোগাক্রান্ত: মনের ব্যাধির সময় বেশিরভাগ ক্ষত্রেই আমরা সেটা নির্ণয় করতে ব্যর্থ হই । এটা আসলে মানুষিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতনতার বেজায় অভাব ছাড়া কিছুই নই। বাংলাদেশে এর সচেতনতার বিস্তার কম থাকলেও তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমরা অধিকাংশ মানুষ মনে করি, যারা পাগলামি করে, পাগল পাগল কথা বলে, পাগলামি আচরণ করে যাদের দেখতে পাগলের মতো, এক কথাই যাদের আমরা ‘পাগল’ বলি ( যদিও কোন ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ ব্যক্তিকে পাগল বলা মহা অনন্যাই , এতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, ‘পাগল’ নই, বলা উচিত ‘মানসিক অসুস্থ রুগী’) শুধু মাত্র তারাই মানসিক রোগের শিকার । কিন্তু প্রকৃত পক্ষে তা একেবারেই ভুল বা আংশিক ভুল। অনেক ক্ষেত্রে অনেক মানসিক রোগের শিকার মানুষ আপনি পেয়ে থাকবেন যাদের দেখে আপনি আঁচও করতে পারবেন না যে তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। অথচ তারা ভিতর ভিতর প্রচুর কষ্ট পাই, তুসের অনলে পুড়ে শেষ হয়ে যাই । এই সমস্ত রুগীদের প্রতি সদয় আচরণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য ।
মানসিক রোগ অনেক ধরনের হয়। লক্ষণ অনুযায়ী তা নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসা ও লক্ষণ অনুযায়ী ভিন্নতর হয়ে থাকে। তবে খুশির বেপার হল এখন বেশিরভাগ মানসিক ব্যাধিই নিরাময় যোগ্য বা নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কিভাবে আমরা বুঝব মানসিক ব্যাধিতে ভুগছি ও মানসিক রোগের প্রকারভেদ নিয়ে ও তার বিস্তর আলোচনা নিয়ে আসব পরবর্তী সময়ে (ইনশাআল্লাহ)। তবে মৌলিক কিছু কথা না বললেই নই। যেটা আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের একটা কথা খুব সুন্দর ভাবে মাথাই রাখা দরকার, সেটা হল, মানসিক রোগের লক্ষন-সমুহ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গ তৈরি করে। আপনার পেট ব্যথা থেকে শুরু করে যেকোনো শারীরিক জটিলতা কিন্তু মানসিক রোগের কারন হতে পারে। তাই আমাদের সঠিক রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য শারীরিক জটিলতার ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে শারীরিক কোন সমস্যা আছে কিনা থাকলে অবশ্যই তার চিকিৎসা নিতে হবে। এক্ষেত্রে আসল কারণটা খুঁজে বের করা খুব জরুরি ( মুল কারণ শারীরিক নাকি মানসিক ) না হলে শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা নিচ্ছেন কিছুদিন ভালো থাকছেন আবার পরে জটিলতাই ভুগছেন, এরকমটিই ঘটবে । বা উত্তম ফল পাবেন না।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাই যে, সমস্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েও অসুস্থতার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় ন। অথচ রুগী অত্যন্ত কষ্ট পাই, অনেক অসুস্থতাই ভুগে, অনেক জটিল সমস্যা সে অনুভব করে,( শারীরিকভাবে বা মানসিক ভাবে) সে ক্ষেত্রে অবশ্যই তখন আমাদের একটা মনঃ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবার উত্তম সময়। কারণ সেখানেই হইত থাকতে পারে আপনার উত্তম চিকিৎসা ।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতা ঃ আমরা জানি বেশিরভাগ রোগ থেকেই আমরা মুক্ত থাকতে পারি শুধু মাত্র সচেতনতার মাধ্যমে। মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম নই। বেশিরভাগ মানসিক রোগ থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি বা পরিত্রাণ পেতে পারি শুধু মাত্র সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। আর মানসিক রোগাক্রান্ত হলে অবশ্যই সকল প্রকার কুসংস্কার পরিত্যাগ করতে হবে। তথাকথিত কবিরাজ ( প্রতারক) বা ঝাড় ফুক এর আশ্রয় না নিয়ে ( ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে কোন বাধা নাই, বরং উৎসাহিত করা হয় ) বিজ্ঞান মনস্ক হতে হবে, নিতে হবে আধুনিক বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা। তাই আসুন আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশা -পাশী মনেরও যত্ন নিতে শিখি এবং একটি প্রকৃত অর্থে সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবন উপভোগ করি।
( ধন্যবাদ)