আমাদের প্রচলিত সমাজে মেয়ে হয়ে জন্মানো একটা অভিশাপও বটে। একটা মেয়ে সবসময় অসহায়, চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে।মন চাইলে নিজের ইচ্ছেমতো চলতে পারে না।এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের তাদেরকে মানুষ হিসেবে দেখা হয় না। মেয়ে মানেই অসহায়।
কখনো পরিবারের কাছে, কখনো সমাজে,কখনো স্বপ্নের কাছে, কখনো ভালোবাসার মানুষটির কাছে, কখনোবা নিজের ইচ্ছের কাছে। একটা মেয়ে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রত্যেকটা সময় অন্যের ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয়। জন্মের পর কখনো মা বাবার জন্য, বিয়ে করার পর তার স্বামীর জন্য, বাচ্চা হওয়ার পর তার সন্তানের জন্য।
একটা মেয়ের জীবনে তাদের চাওয়া পাওয়া গুলো আশার গুড়েবালির মত। তাদের চাওয়া পাওয়া গুলো নিজের একান্তে থেকে যায়, কখনও মুখে প্রকাশ পায়না। তাদের কোনো স্বপ্ন আশা থাকতে নেই, যেটা থাকে সেটা হল অন্যের উপর বেঁচে থাকা ক্ষুদ্র অধিকার।
একটা মেয়ে নিজের ইচ্ছামত চলতে পারে না, নিজের প্রিয় কোন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারে না, নিজের পছন্দের জিনিসটি নিজে বেছে নিতে পারে না।পছন্দের মানুষটির সাথে ভালবেসে সুখে ঘর বাঁধতে। তাদের স্বপ্নগুলো জন্মের সাথে সাথে মরে যায়।
আমাদের সমাজে মেয়েদের স্বপ্নগুলো ইচ্ছেগুলো কোন মূল্য দেয়া হয়নি। তাদের চাওয়া গুলো কখনো বুঝতে দেয়া হয়নি। যদিও পৃথিবীর শুরু থেকে পুরুষদের চেয়ে নারীদের অবদান অনেক বেশি। একটা পুরুষ যতই মহৎ ও সৎ হোক না কেন একটা মেয়ের মত কখনোই কাউকে ভালবাসতে পারে না। প্রকৃতি মেয়েদেরকে এই শক্তি দিয়েছে। মেয়েদের হাত ধরে পৃথিবী অনেক কিছু এগিয়েছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর… অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।
কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় একথা আমরা বারবার ভুলে যাই। মেয়েরা জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে আরেকজনের সুখের জন্য। নিজের মা-বাবা ঘরবাড়ি। আমরা মেয়েদেরকে কখনো সম্মানের চোখে দেখি না, একটা মেয়েকে বুঝতে হলে,জানতে হলে সম্মান দিতে হলে নূন্যতম যে মেধা এবং যোগ্যতা লাগে-যা আমাদের অনেকের কাছে নেই।