শীতকালীন ফলঃ
এর পূর্বের পোষ্টে আমি বলেছিলাম ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ কিছু রোগ জীবানুর সম্মুখীন হয়। আর এসব রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহ সিজোনাল শাক-সবজি ও ফল-মুলের ব্যবস্থা করেছেন। যা খেয়ে আমরা সিজোনাল রোগ-বালাই থেকে বেঁচে থাকতে পারি। বর্তমানে আমরা শীতকাল অতিক্রম করছি। আর গতপর্বে আমি শীতকালীন কিছু শাক-সবজির পুষ্টিগুন নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কিন্তু শীতকালীন ফলের আলোচনা বাকী থেকে গেছে। তাই এবারের আলোচনার বিষয় শীতকালীন ফল।
কমলা
কমলাকে বলা হয় শীতের ফলের রাজা। গুনে ও মানে এ ফল অতুলনীয়। কমলা বিভিন্ন জাত, প্রকার ও আকৃতির হয়ে থাকে। আমাদের দেশের সিলেট, রাঙ্গামাটি, পার্বত্য চট্রগ্রাম ও পঞ্চগড়ে কমলার চাষ হয়। কোন কোন কমলা মিষ্টি এবং কিছু কমলা ঈষৎ টক হয়ে থাকে। কবিরাজদের দৃষ্টিতে মিষ্টির চেয়ে টক কমলা বেশী উপকারী। কমলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, যা প্রত্যেকের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরন করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে থাকে। শীতকালে প্রতিদিন সকালের নাশতা শেষে এক কাপ কমলার রস রোগ প্রতিরোধে ধন্বন্তরী। হ্রদরোগীদের জন্য কমলার রস খুবই উপকারী। যারা অপুষ্টিতে ভুগছে তারা শীতের সকালে প্রতিদিন একটি করে কমলা খেলে তাদের অপুষ্টি দুর হবে। প্রসবকারিনী মা দৈনিক একটি কমলা খেলে দ্রুত সুস্থ ও সবল হয়ে উঠবে। মাথায় যন্ত্রনা হলে কমলার রসের সঙ্গে সামান্য ঘৃত মিশিয়ে চোখের দুই পাশের রগে লাগালে যন্ত্রনা দুর হবে। এটা হিস্টিরিয়া রোগনাশক।
আপেল
ছোট, বড়, লাল ও সবুজ রঙের আপেল এখন সর্বত্র পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাদ আছে, দৈনিক একটা আপেল খাও, ডাক্তার দুরে থাকবে। যারা অল্পতেই রেগে যায় এবং অনিদ্রায় ভোগে তারা দৈনিক একটা লাল আপেল ধুয়ে পরিস্কার করে খোসাসমেত খেলে সমস্যা চলে যাবে। যাদের হ্রদকম্পন রোগ আছে তারাও প্রতিদিন একটা আপেল খেলে সুস্থ হয়ে যাবেন। কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া ভালো হয় আপেলে। ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে আপেল।
কুল
কুলকে অনেকে বরই বলে থাকে। নানা জাতের কুল বাজারে দেখতে পাওয়া যায়। যেমন- আপেল কুল, নারকেল কুল, বাউকুল ইত্যাদি। অর্শের যন্ত্রনা, বিষাক্ত পোকা মাকড়ের দংশন, হ্রদরোগ, ফোড়া, কোষ্ঠবদ্ধতা, প্রদর, রক্ত আমাশয়, মাথাব্যথা প্রভৃতি রোগের চিকিৎসা রয়েছে কুল, কুলের পাতা ও ছালের মধ্যে।
সফেদা
সফেদা দেখতে অনেকটা গাবের মত। স্বাদে মিষ্টি এবং গন্ধযুক্ত ফল এই সফেদা। নানা গুনে সমৃদ্ধ সফেদা ফল। হার্টের দুর্বলতা, অপুষ্টি, পরিশ্রমজনিত দুর্বলতা, প্রসবকালীন দুর্বলতা ও মায়ের বুকের দুধের স্বল্পতা দুর করে সফেদা।
ডালিম-বেদানা
ডালিম ও বেদানা একই প্রজাতির ফল। ডালিমের ভিতরের দানা থাকে সাদা আর বেদানা লাল টকটকে। অধিক গর্ভস্রাব, হ্রদরোগ, আমাশয়, লিভার বৃদ্ধি, অনিদ্রা, অজীর্ণ, রক্তপিত্ত, অরুচি, ক্রিমি, শ্বেতপ্রদর, মেধাহ্রাস প্রভৃতি সমস্যায় কার্যকারী ডালিম ও বেদানা।
কামরাঙা
শীতকালীন একটি ফল কামরাঙা। টক ও মিষ্টি স্বাদের এই কামরাঙায় পাঁচটি ধার থাকে। কাঁচা, পাকা ও সালাদ করে খাওয়া যায় কামরাঙা। অরুচি, লিভার ব্যথা ও পুরাতন জ্বরে উপকারী এই ফল। প্রচুর পরিমান ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই ফল।
আঙুর
খুবই সুন্দর একটি ফল আঙুর। যা দেখলেই সকলের পছন্দ হয়ে যায় এবং খেতে ইচ্ছে করে। আমরা যে পুষ্টিসমৃদ্ধ কিশমিশ খেয়ে থাকি তাও এই আঙুর শুকিয়েই হয়ে থাকে। পুরাতন জ্বরে যেমন কামরাঙা উপকারী তেমনি নতুন জ্বরে উপকারী আঙুর। শারীরিক ক্ষীণতা, সন্তান লাভের জন্য, পিত্ত বিকার, রক্তপিত্তে ও এটা উপকারী।
পেঁপে
A pape a day keeps the doctor away. অর্থাৎ প্রতিদিন পেঁপে খাও, বাড়ির বাইরে ডাক্তার তাড়াও। অর্থাৎ প্রতিদিন পেঁপে খেলে আপনাকে ডাক্তারের প্রয়োজন হবে না। এই পেঁপে কাঁচা, পাকা, ভর্তা, ভাজি বা রান্না যেভাবে খুশি খাওয়া যায়। এর কোন অপকারীতা নেই। গুনে ভরা এই পেঁপে গ্যাস্ট্রিক, বুকজ্বালা, পেট ফাঁপা ও হজমের গোলমাল ভাল করে।
শীতকালীন ফল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা সিজোনাল রোগ-জীবানু থেকে রক্ষা পেতে পারি। তাই এখন থেকে আমরা যাতে ঔষধ ছাড়াই সুস্থ থাকতে পারি সেই চেষ্টাই করব ইন্শাআল্লাহ।