ঘড়িতে রাত ২টা ৩০ বাজে। সময়টা মধ্যরাত। এক মগ চা আর সামনে একটা বই নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করে খেয়াল হলো- অনেকদিন ধরে এভাবে বসা হয় না। ভার্সিটি বন্ধ ঠিকই কিন্তু ক্লাস তো চলছে। অনলাইন ক্লাস। জীবনটা যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছে। যখন তখন ক্লাসের সময় বদল হয়, মেকআপ ক্লাস থাকে, বাড়তি ক্লাস থাকে। আবার তাৎক্ষণিক নোটিশে ক্লাস বাতিল করা হয়। যে ঘটনাগুলো স্বাভাবিক ছিলো, সেগুলোই এখন অভ্যাসের বাইরে চলে গেছে। তার চেয়েও ভয়ানক বিষয় হচ্ছে মানসিক চাপ সামলে ওঠা।
এমনও হয়েছে সন্ধ্যা সাতটা থেকে পরীক্ষা দিয়েছি আর আটটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত বাড়তি ক্লাস করেছি। শুধু তাই নয়। রাত পৌনে এগারোটার সময় ম্যাম গুগল মিট এ ডেকে বলেন- পরীক্ষার খাতা সাবমিট হয় নাই! নেটওয়ার্কের সমস্যা, সার্ভারের সমস্যা, ডিভাইসে সমস্যা এগুলো তো নিত্যদিনের ব্যাপার। কতবার যে আমার পিসিটা উইন্ডোজ দিতে হয়েছে তার হিসাব আর নাই দিলাম।
এই লকডাউনে ছোটখাটো অনেককিছু শিখেছি। প্রয়োজনীয় বেশ কিছু নির্দেশনা পেয়েছি। টাইপিং স্পিড বেড়েছে। অনেক সফটওয়্যারের কাজ শিখেছি। হয়তো সাধারণ দিন হলে সময় নিয়ে এগুলো শেখা হতো না। খাপ খাওয়ানোর পাশাপাশি নতুন অনেককিছু শিখেছি এইকথা স্বীকার করতেই হবে। সময় মান্য করতে শিখেছি কারণ দেরি হলে সার্ভার সাবমিশন নেবে না। সচেতন হয়েছি। টুকটাক সিলেবাসের বাইরে বই পড়ছি। কারণ বই পড়তে আমি সবসময় ভালোবাসি। আগে সেমিস্টার ব্রেক ছাড়া সময় পেতাম না।
যেহেতু সময়টা অন্যরকম আর চ্যালেন্ঞ্চিং, খাপ খাওয়াতে আর অভ্যাস করতে সময় লেগেছে। সবকিছু একদিনে সম্ভব হয়নি। কিন্তু এতটাই যন্ত্রনির্ভর হয়ে গেছি যে, রাতের নিরবতায় বই আর ধোয়া -ওঠা এককাপ চা নিয়ে অনেকদিন বসা হয় না। আজকে মনে হলো। মাঝে মাঝে দমবন্ধ হয়ে আসে। আবার নিজেকে বুঝিয়ে যন্ত্রের কাছে ফিরে আসি। এমনকি মধ্যরাতেও যন্ত্র নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রযুক্তি এতটা বিরক্তিকর লাগেনি কখনো।
সত্যি বলতে কি, মৌলিক অনেক কিছু এখন আর নেই। অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। একটা বছর শেষ হতে চললো। একটা বই নিয়ে বসা আর চা খেতে খেতে পড়া তো অতি সধারণ ব্যপার। কিন্তু এই বিষয়টা এখন নেই। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, প্রস্তুতি, পড়াশোনা সবকিছু অনলাইনে। কখনো কখনো হতাশ হয়ে পড়াটা খুব স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে তো কি করছি, কেন করছি বুঝতেই পারি না। ক্লাস, যানজট, সকালে যাত্রীদের ভিড়, সিগন্যাল, বাস না পাওয়া, ভাড়া বেশি চাওয়া সবকিছুই এখন নিত্যদিনের বাইরে চলে গেছে। এরপর সবকিছু স্বাভাবিক হলে তখন আবার খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হবে।তবুও একটা ভালো দিনের প্রত্যাশা করতে থাকি। সুস্থ হয়ে উঠুক এই পৃথিবী।