ছাত্রজীবন হলো সমগ্রজীবনের মূলভিত্তি।ছাত্রজীবনে অর্জিত দক্ষতা ও জ্ঞানের উপরই মূলত পরবর্তী জীবনের সাফল্য নির্ভর করে।কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে,পরবর্তী জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এমন অনেক দক্ষতাই আছে যেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের শেখায় না ও ছাত্রজীবনেই,নিজ উদ্যোগে,তা শিখে নিতে হয়।নতুবা,পরবর্তী জীবনে আফসোসের সীমা থাকে না।নিচে তেমনই কিছু কার্যকর দক্ষতা নিয়ে লিখেছি, যা বাস্তব জীবনে কাজে লাগবেঃ-
১.টাইম ম্যানেজমেন্ট/সময় ব্যবস্থাপনা
গুরুত্বপূর্ণ এ দক্ষতাটি ছাত্রজীবন থেকে শিখে নেওয়া খুবই জরুরি। এর মানে হচ্ছে যে,আপনার যাবতীয় কাজসমূহকে সম্পাদনের জন্য নির্দিষ্ট সময় ও পরিকল্পনা করে নেওয়ার পদ্ধতি।সঠিক ‘সময় ব্যবস্থাপনা’কম সময়ে অধিক কাজ করতে ও সময় বাচিয়ে কাজকে সহজ করতে সাহায্য করে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য(পারিবারিক,সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি) পালন করতে হয়।সময় ব্যবস্থাপনা ছাত্রজীবন থেকেই শিখে নিলে,পরবর্তী জীবনে এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়।এক্ষেত্রে,কিছু কৌশল মেনে চলতে পারেন-
1.প্রতিদিনের কাজের তালিকা ‘ to do list’এ করে রাখা।
2.এমন লক্ষ্য নির্ধারণ যা অর্জন ও পরিমাপ করা সম্ভব।
3.বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে থেকেই নির্ধারণ করা ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আগে শেষ করা।
4.সময়কে ঘণ্টায় নয় মিনিটে হিসেব করা।
5.প্রত্যেক কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ।
২.স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট/চাপ ব্যবস্থাপনা
‘স্ট্রেস’বা ‘চাপ’ শব্দটির সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত।ছাত্রজীবন হতে শুরু করে সমগ্র মানবজীবনে এর প্রভাব ভয়াবহ।আজকাল আমরা অনেককেই বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনে ভুগতে দেখি। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে অনেককে আত্মহত্যাও করতে শোনা যায়।আর এর অনেক কারণ থাকলেও মূল কারণ কিন্তু হতাশার মাঝে চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে না জানা। তাই কীভাবে চাপ নিয়ন্ত্রণ করবেন তা বিশদভাবে নিচে লিখলাম-
1.চাপ অনুভব করার উৎস বা কারণ নির্ধারণ করুন।
2.পৃথিবীর কোনো কিছুই স্থায়ী না। আপনার চাপটাও স্থায়ী থাকবে না,এরূপ মানসিকতা বজায় রাখুন।
3. to do listথেকে কাজের পরিমাণ কিছুটা কমান।
4.যেটা করতে পারবেন না,সেটা গড়িমসি করে করার কোনো মানে হয় না।এর চেয়ে বরং না বলতে শিখুন।
5.নিজের দুঃখ কষ্টের কথা আপনজনদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
6.যে জিনিসগুলো পরিবর্তন করা আপনার হাতে নেই সেগুলো মেনে নিন।
7.উপভোগ ও বিশ্রামের জন্য সময় বের করুন।
৩.রিসোর্সফুলনেস
এ শব্দটি হয়তো অনেকে প্রথমবার শুনছেন।রিসোর্সফুলনেস অর্থ কোনো একটা সমস্যা সমাধানের জন্য যেসব তথ্য বা উপায় জানা লাগবে,নিজের আশেপাশের জিনিসপত্রকে কাজে লাগিয়ে ঐসব তথ্য বা উপায় জেনে নেওয়ার বা বের করার ক্ষমতা/ দক্ষতা।এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দক্ষতা।এ দক্ষতার অভাবে অনেকে সমস্যার সঠিক সমাধান বের করতে পারে না ও ব্যর্থতার স্বীকার হয়।ছাত্রজীবন থেকেই তাই এ দক্ষতাটি অর্জন করা উচিৎ।নিচে কয়েকটি উপায় দেওয়া হল,যেসব কাজে লাগিয়ে আপনি রিসোর্সফুল একটি মানুষে পরিণত হতে ও যেকোনো পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারবেন-
1.আত্নবিশ্বাস রাখুন।
2.খোলা মন দিয়ে চিন্তা করুন।
3.গুহল বা অন্যান্য মিডিয়া কাজে লাগিয়ে অজানা তথ্যটি বের করুন ও সক্রিয় থাকুন।
4.পজিটিভ চিন্তা করুন।
5.হার মানবেন না।
৪.দলবদ্ধ কাজ ও নেতৃত্ব
৫.ভুল স্বীকার ও ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার মানসিকতা
৬.সিদ্ধান্ত নেয়া ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
৭.ঘরের প্রাথমিক কাজ সম্বন্ধে ধারণা রাখা
জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কেবল লেখাপড়া যথেষ্ট নয়।পাশাপাশি ঘরের ছোটোখাটো কাজ জানাও একটা ছাত্র বা ছাত্রীকে যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।নিচে কিছু প্রাথমিক কাজ নিয়ে লিখলাম যা জানা থাকলে ভালো ও জানা না থাকলে আজ থেকেই জানা শুরু করুন-
1.First Aid বা চিকিৎসা পদ্ধতির প্রাথমিক ধারণা।
2.অন্তত একটি রান্না শিখে রাখা।
3.সরকারি ট্যাক্স সম্বন্ধে ধারণা রাখা।
4.টাকার সঠিক ব্যবহার বা Money Management এর দক্ষতা অর্জন।
5.ঘরের প্রাথমিক জিনিসপত্র মেরামত করতে জানা।
৮.ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন
৯.ব্যক্তিগত সাজসজ্জার দক্ষতা
ব্যক্তিগত সাজসজ্জা হলো একটা আর্ট।পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুযায়ী পোশাক পড়া এর অন্তর্ভুক্ত।অনেকের কাছে মনে হতে পারে এটা তো একটা কমনসেন্সের কথা।কিন্তু এ কমনসেন্সের ব্যাপারটাতেই অনেকে গুরুত্ব দেয় না।নিচে এ সম্পর্কে কিছু টিপস দিলাম-
1.পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে পোশাক নির্বাচন।
2.আত্নবিশ্বাসী হাসি।
3.বন্ধুসুলভ আচরণ।
4.স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহণ ও ব্যায়াম।
5.ত্বক ও চুলের যত্ন।
১০.ব্যর্থতা মেনে নেওয়া ও হার না মানা
১১.সাহায্য চাইতে জানা
সাহায্য চাওয়াটা আমার নিতান্ত নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি ও মনে করি সাহায্য চাইলে আত্নসম্মান ছোট হয়ে যায়।আসলে সাহায্য চাওয়া মানে নিজেকে ছোট করা না।আপনার মনে রাখা উচিত সফলতার যে স্বর্ণশিখরে আপনি যেতে চান সে জায়গায় ইতোমধ্যেই অনেক মানুষজন আছে।তাদের কাছে জেনে নিন তারা কীভাবে ঐ জায়গায় গেছে ও আপনার সমান থাকতে তারা কি কি কাজ করত।এ সাহায্যগুলো তাদের কাছে কাছে চান।তার আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে।
১২.সততা ও ধৈর্যশীলতা প্রদর্শন
যে কয়টি দক্ষতার কথা বললাম তা একজন ছাত্রের থাকা উচিত।শুধু দেশের জন্য নয় বিশ্বের বুকে নিজ দেশকে তুলে ধরতে একজন ছাত্র বা ছাত্রীর নিজেকে দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা উচিত।কারণ,দেশের দায়িত্ব তাদের উপরই।
আশা করি পড়ে ভালো লেগেছে।অবশ্যই কমেন্ট করবেন ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।