রমজান মাস মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আল্লাহর ইবাদত এ মসগুল থাকার সবচেয়ে উত্তম মাস। প্রত্যেক মুসলিম বান্দারা সারা বছর জুড়ে অপেক্ষা করে এই পবিত্র রমজান মাসের জন্য । রমজান মাসের তাৎপর্য অনেক। প্রতিটি মুসলিমবান্দারা আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় সিয়াম সাধানার মাঝে নিজেকে মসগুল রাখার চেষ্টা করে এই মাসে। প্রতিটি ঘর ইবাদত বন্দিগিতে আলো হয়ে যায় । রমজান মাসের ফজিলত এর কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই মাসটি ইবাদাতবন্দিগির মাধ্যমে অতিবাহিত করা।
বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সকল প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ করা হয়েছে। তাই যেহেতু রমজান মাস এখন নিজেকে নিবেদিত করতে পারবেন তাই বেশি বেশি ইবাদাত বান্দেগিতে । আপনি চাইলে আপনার পরিবার পরিজন সহ আত্নীয়,পাড়া প্রতিবেশী সকলকে ইবাদত করার জন্য উৎসাহী করতে পারেন৷ কারণ মহান আল্লাহ তাওয়লার সানিধ্য পাবার সবচেয়ে উত্তম মাস হলো রামজান মাস।
পরিবারের সকলের সাথে সকলে মিলে কিছু আমল করতে পারেন। নিচে ১১ টি আমল দেওয়া হলো।অন্তত ৫ টি হলেও নিয়মিত পালন করার চেষ্টা করবেন।
১আমল ১ঃ
প্রতিবার ফরজ নামাজের পর একবার করে হলেও অবশ্যই আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন।রাতে ঘুমানোর আগে বা ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেন।প্রতিবার ফরজ সালাতের পূর্বে এই আমাল যদি চালু রাখেন তাহলে আপনার জান্নাতে যাবার জন্য মৃত্যুই হবে একমাত্র বাধা!সুবহান আল্লাহ! (নাসাঈর হাদীস)
২.আমল ২ঃ
সুরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াতঃ* – রাতে ঘুমানোর আগে ১ বার পড়বেন।
২৮৫. আমানুর-রাসুলু বিমা উংজিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি, লা নুফার-রিকু বাইনা আহা’দিম-মির রুসুলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না, ওয়া আত্বা’না, গুফরা নাকা, রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।
২৮৬. লা ইউ কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস-আ’হা। লাহা মা কাসাবাত ওয়া আ’লাইহা মাক তাসাবাত। রব্বানা লা-তু আখজিনা-ইন্না সিনা- আও আখত্বা’না। রাব্বানা ওয়ালা তাহ’মিল আ’লাইনা ইসরান কামা হা’মালতাহু আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা। রব্বানা ওয়ালা তুহা’ম্মিলনা মা-লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়াআ’ফু আ’ন্না, ওয়াগ ফিরলানা, ওয়ার হা’মনা। আংতা মাওলানা, ফানছুরনা আ’লাল ক্বাওমিল কাফিরিন। এটার ফযিলত বলে শেষ করা যাবেনা। রাতের বেলা এই দুই আয়াত পড়লে সেটাই ওই রাতের জন্য যথেষ্ট- এই মর্মে হাদীস এসেছে। কতই না বরকতময় এই দুই আয়াত!
আমল তিনঃ *প্রত্যেক ওযুর পর কালেমা শাহাদত পাঠ করুন (আশহাদু আন লা-~ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা~ শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ) ।* এতে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৩৪)
৪.আমল চারঃ
সুরা ইখলাস* – ১০ বার, কমপক্ষে ৩ বার। ( প্রতিবার পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন খতমের সওয়াব হয় ইন শাআ আল্লাহ্)
৫। দশবার দরুদ
দরূদে ইব্রাহীম পড়া উত্তম। তবে ” *সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”* পড়লেও একবার দরুদ পড়া হয়ে যাবে। (একবার দরুদ পড়লে দশবার আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়, রাসূল স: খুশি হন; বিচার দিবসে তাঁর শাফায়াত পাওয়া সহজ হবে ইন শাআ আল্লাহ্) সাথে রাসূল (সাঃ) এর ঘুমানোর দুয়া ” *আল্লাহুম্মা বিইসমিকা আমূ-তু ওয়া আহইয়া* ” পড়ে নেয়া ও ডান কাধ হয়ে শোয়া।
৬। *৩৩ বার সুবহান আল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ,৩৪ বার আল্লাহু আকবার* পড়া। রাসূল সঃ এর নিয়মিত আমল এটি।
৭। দুই হাতের তালু একত্রে মিলিয়ে *সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক সূরা নাস* পড়ে তাতে ফুঁ দিবেন: তারপর দুই হাতের তালু দ্বারা দেহের যতটা অংশ সম্ভব মাসেহ করবেন। মাসেহ আরম্ভ করবে মাথা, মুখমণ্ডল ও দেহের সামনের দিক থেকে। (এভাবে ৩ বার।)
৬। *১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহিঃ* যে ব্যাক্তি দৈনিক ১০০ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হি
ওয়া বিহামদিহী’ পড়বে।তার গোনাহ মাফ হইয়া যাইবে, যদিও তা সাগরের ফেনা থেকেও বেশী হয়’। (বুখারী ও মুসলিম)
৮। প্রত্যেক সকাল ও সন্ধ্যায় সাইয়িদুল ইস্তিগফার পড়া। ক্ষমার শ্রেষ্ঠ দুয়া। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিন্মলিখিত দো’আ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে’। “আল্লা-হুম্মা আনতা রববী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।”
৯। *সূরা মুলক* (কবরের আযাব থেকে রক্ষা করে)
১০। ঘুমাচ্ছেন, এ অবস্থায় ঘুম যদি ভেঙ্গে যায়—- তখন এইটা পড়ে নিবেন– লা~ ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর। সুবহা-নাল্লাহি, ওয়ালহামদুলিল্লাহি, ওয়া লা~ ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার, ওয়া লা- হাওলা ওয়ালা- কুউওয়াতা ইল্লা-বিল্লা-হিল ‘আলিয়্যিল ‘আযীম, রাব্বিগফির লী। উবাদা ইবনু সামিত (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যদি কারো রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে যায় অতঃপর সে উপরের যিকিরের বাক্যগুলো পাঠ করে এবং এরপর সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় অথবা কোনো প্রকার দু‘আ করে বা কিছু চায় তবে তার দু‘আ কবুল করা হবে। আর যদি সে এরপর উঠে ওযু করে (তাহাজ্জুদের) সালাত আদায় করে তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে।”
(সহীহ বুখারী, ১/৩৮৭, নং ১১০৩)
১১। *তাহাজ্জুদ* (ফরজ সালাতের পর আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়, দুয়া কখনো লক্ষ্যভ্রস্ট হয়না) আশা করি অন্তত ২-৩-৪ টা হলেও প্রতিদিন করবেন। আল্লাহর নিকট প্রতিদিনের আমল সবচেয়ে প্রিয়।
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।* [ সুরা ইমরান :১০৪ ]
আশা আজকের পোস্টটি পড়ে আপনাদের উপকার হবে।উপরোক্ত আমল সমূহ পাঠ করার চেষ্টা করুন। নিজেকে ইবাদত এ মসগূল রাখুন। সকলকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।