সুন্দরপুর নামে একটি সুন্দর গ্রাম। এই গ্রামের একজন রাখাল ছেলে। নাম তার রাজু। সে রাখাল ছাড়াও তার বড় একটি পরিচয় হচ্ছে সে একজন সৎ, বুদ্ধিবান এবং নির্ভীক ছেলে। সে অনাথ। তাই তাকে ছোট থেকেই কাজ করে খেতে হয়। তার কাজ বলতে ছাগল, ভেড়াদের সে সারাদিন দেখাশোনা করে, বনে-বাদাড়ে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়। এভাবে প্রত্যেকদিন সে এই একই কাজ করে। ফলে তার পেটের ভাতের কথা চিন্তা করতে হয় না। সারাদিনের খাওয়া-দাওয়া তো সে পায়ই, তার উপর মাস শেষে কিছু টাকাও পায়।
এজন্য সে কিছু চিন্তা করে না। তার সাত-কূলেও কেউ নেই, যার জন্য তার চিন্তা হবে। তাই সে খায়-দায়, ভাবনাহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। নেচে-খেলে তার জীবন পার হতে থাকে। কেউই তাকে কখনো মন-খারাপ করে বসে থাকতে দেখে নি। সে বরাবরই হাসি-খুশি নিয়ে চলাচল করে।
একদিন সে ছাগল-ভেড়াদেরকে মাঠে চড়াচ্ছিল। এমন সময় সে লক্ষ করে পাশের জঙ্গল থেকে কিছু লোক ছদ্মবেশে বের হলো। তারা বের হয়ে এদিক-ওদিক ভালোভাবে তাকিয়ে গ্রামের দিকে চলল। তাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে ব্যাগ ছিল।
সে কৌতূহলবশত তাদের উপর সন্দেহ পোষণ করলো। তাই সে ওই জঙ্গলে যেতে চাইলো। কারণ, সে দেখতে চাইলো, ওই জঙ্গলে কি এমন আছে, যার কারণে, ওখান থেকে বের হয়ে লোকগুলো ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্যাগ নিয়ে গ্রামের দিকে যাচ্ছে। আর একজনের হাতে লাল রঙের কি যেন সে দেখতে পেলো। পরক্ষনেই আরেকজন ওই লোকের হাত পরিষ্কার করতে বলল।
সে তার খেলার সাথীদের রেখে জঙ্গলে রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য যেতে চাইলো। কিন্তু, তার অনুপস্থিতিতে যদি এই সাথীদের উপর কোনো জন্তু-জানোয়ার বা মানুষ আক্রমন করে বসে, তবে সে ছাগল সাথীদের মালিককে কি জবাব দিবে। তাই সে ছাগল-ভেড়া সাথীদের রেখে গেলো না। সে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
রাত ঘনিয়ে এলো। রাজুর যাওয়ার সময়ও হয়েছে। সে তার সাথে একটা টর্চ লাইট, দিয়াশলাই আর একটা লাঠি নিল। তারপর গ্রামের রাস্তা দিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করলো।
চারদিক তখন বেশ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। সে সাবধানে পা ফেলছে। সে টর্চটি জ্বালিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছে। হঠাৎ তার চোখ সামনে আটকে গেলো। সে তাড়াতাড়ি করে তার টর্চটা অফ করলো। কারণ, সামনের শত্রু তার উপস্থিতি তার টর্চের কারণে বুঝে যেতে পারে।
সামনে তাকাতেই সে লক্ষ করে, দুপুবেলার সেই লোকগুলো তাদের বেশভুশা পাল্টাচ্ছে। সবাই তাদের পরচুলা, দাড়িগুলো খুলে রাখল। তারপর এক গুহায় গিয়ে তারা বিশ্রাম নিতে লাগলো। রাজু তাদের আরও কাছে গেলো। গুহার সামনে মশাল জ্বালিয়ে রেখেছে তারা। সেই আলোতে তাদের মুখ ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে।
রাজু তাদের কাছে যেতেই দেখতে পেলো তাদের মুখোশের আড়ালে থাকা মুখখানি। সে দেখেই তো অবাক। সকালে পত্রিকায়ই তো সে এদের মুখ দেখেছিল। তার সাথীদের মালিকের পত্রিকা পড়ার শখ আছে। তাই প্রতিদিন পত্রিকা পড়ে তার সাথীদের মালিক। আজ সকালে সে যখন তার সাথীদের আনতে যায়, তখনই সে পত্রিকায় এদের চেহারা দেখতে পেয়েছে।
সে যখন মালিককে জিজ্ঞাসা করে এদের ব্যাপারে, তখন মালিক তাকে বলেছিল, “রাজু আজকাল বাঘের, হরিণের খুব শিকার হচ্ছে। এরা হচ্ছে সেই শিকারি। এরা বাঘকে মেরে তার চামড়া বিক্রি করে। কখনো কখনো জিন্দা বাঘ ধরে তাদের বিভিন্ন বড়লোকের কাছে বিক্রি করে দেয়। হরিণের মাংসের দাম জানিস তো? এরা এই হরিণের মাংসও বিভিন্ন লোকের কাছে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। এদের পুলিশ খুঁজছে। তাই পেপারে এদের ছবি দেওয়া হয়েছে।”
এবার সে সব বুঝতে পারলো। তাই সে খুব তাড়াতাড়ি জঙ্গল থেকে বের হলো। এরপর নিকটস্থ থানায় গেলো তার সাথীদের মালিককে নিয়ে। থানার ওসি সব তথ্য জেনে তার বাহিনী নিয়ে ওই জঙ্গলে গেলো। তারপর রাজুর দেখানো পথে তারা হাঁটতে লাগলো। একসময় তারা ওই শিকারিদের গুহার কাছে পৌঁছে গেলো। আর ওই শিকারিদের গ্রেফতার করা হলো।
আর তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজুকে সরকারের তরফ থেকে একটা বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হলো। সে সেখানে এখন ভালোভাবে পড়ালেখা করতে পারছে।