তদন্ত শুরু হলো – নদীতে ভেসে আসা বেওয়ারিশ যুবকের লাশ । সংবাদপত্র-অনলাইন আর টিভিতে শেকড় ছাড়াচ্ছিলো যুবকের বৃক্ষশরীর । মোবাইল মেমোরিতে পাওয়া চমৎকার সেলফি পোষ্ট করছিলো অজানা কেউ । নায়কতুল্য দেবকান্তি এই যবুকের ধর্ম পরিচয় কি ?
সনাক্তযোগ্য ধর্মাঙ্গটি জলজপ্রাণীদের প্রাতরাশ । নগরের অধিকাংশ তরুণী রুপুবান যুবককে কল্পনা করলো প্রেমিক হিসেবে । কেউ বা স্বামী আর বৃদ্ধারা তাদের হারিয়ে যাওয়া সন্তানের শোকে ডুকরে উঠলো । বিধবারা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য বুনতে শুরু করলো সুদৃশ্য মসলিন । অনেকে গোপনে কিনতে গেলো টিশার্ট আর জিনস ; খাঁটি সুতি কাপড়ের ধুতি কেউ কেউ, গেরুয়া চীবর পছন্দ হলো কারো কারো । ফেসবুক টুইটারের দেয়ালে ভরে উঠলো নানা সন্দেহ মন্তব্য আর গুজবে ।
তদন্তকর্তাকে সারাক্ষণ ঘিরে থাকলো উদ্বিগ্ন ক্যামেরা-কলম আর ল্যাপটপ । ভিড় ভেদ করে এগিয়ে এলো এক নারী- ঐ লাশ বেওয়ারিশ নয় – ও আমার স্বামী । এক তুরুণী চিৎকার করে উঠলো- আমার প্রেমিক ।
ন্যূব্জ বৃদ্ধার আহাজারি- ঐ যুবক তাঁর হারানো মানিক । ও আমার একমাত্র ভাই- কেঁদে উঠলো এক মেয়ে । এক বিব্রত বৃদ্ধ বললো – সাদা পোশাকধারীদের হাতে হারিয়ে যাওয়া আমার সন্তান । বৃক্ষহীন নগরেও অদৃশ্য পাতার ফিসফাস, যুবকের লাশটি বেওয়ারিশ নয় । প্রয়োজন নেই ময়না তদন্তের দাবি জমলো দিগ্বিদিক । ওর অতৃপ্ত আদলে আর হিংস্র ছুরির দাগ দরকার নেই , জনতার দাবির ভরে নুয়ে এলো ক্ষমতাধরগণ; তাহলে কিভাবে লাশটি সমাহিত হবে ?
কেউ বললো – সুগন্ধি সহযোগে চন্দনের চিতায় দেহভস্ম হোক, অনেকের মতে – শুভ্র কাফনে সমাহিত হোক ওর পবিত্র শরীর, বুকে ক্রুশ এঁকে বললো আরেকজন- মাতা মেরীর মমতায় ওকে শোয়ানো হোক কাঠের কফিনে ।
ভিড়ের ভেতর থেকে প্রায় ঝড়ের বেগে এক মাতৃতুল্য নারী এসে সমাধান দিলো ও অমৃতের পুত্র-ও নিস্পাপ আদম ওকে ফুলশয্যা পেতে নদীতে ভাসাতে হবে – যেভাবে শিশু মুসাকে তাঁর মা ভাসিয়েছিলো নীলনদে, আর লখিন্দরকেও বেহুলা গাঙ্গুড়ের জলে ; এবং প্রত্যেক ঘাটে সে বরিত হবে বীরের সম্মানে । এক সর্বেশ্বরবাদী সবিনয়ে প্রস্তাব দিলো এখন ওর একটি নাম প্রয়োজন সর্বসম্মত- গ্রহণযোগ্য – অভূতপূর্ব ; সমর্থনের হাওয়া বয়ে গেলো প্রত্যেকের নীরব নৌকায় । তাহলে নিষ্পাপ ওর নাম হোক- মোহাম্মদ, অদ্ভুত সারল্য মুখে ও হোক- ডেভিড, নির্যাতনে নীল- ওর নাম থাক- কৃষ্ণ, গৌতম তুল্য নিঃস্বার্থ- আজ থেকে ওর পরিচয় – বড়ুয়া । এই নামে প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম মতে প্রার্থনা জানালো, স্বর্গের সব শক্তি হুরি ও অস্পরি বর্ষিত হোক ওর আত্মার ওপর, জগত বঞ্চিত যুবকের প্রাপ্য হোক আনন্দ ওপার ।
এবার তদন্তকর্তা তাঁর রিপোর্টে লিখলেন – যুবকের লাশটি বেওয়ারিশ নয়, ওর নাম- মোহাম্মদ ডেভিড কৃষ্ণ বড়ুয়া ।
ধন্যবাদ সবাইকে ভালো লাগলে শেয়ার করে অন্যকে জানতে সাহায্য করুন । আর এই গল্প থেকে আপনি কি শিখতে পারলেন তা কিন্তু আমাদে জানাতে ভুলবেন না । আপনাদের অনুপ্রেনাই আমার লিখার আগ্রহ বাড়াবে । অবশ্য লিখাটি আমার না এটা আমি একতি পোষ্টার থেকে পেয়ে লিখেছি । আমার মনে হলো এখান থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে । ধব্যবাদ আবারো ।