বর্তমান যুগে আমাদের দেশেও লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলো :
১. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি : গতানুগতিক শিক্ষা দ্বারা কর্মসংস্থার সুযোগ সৃষ্টি করা যায় না। তাই সাধারণ শিক্ষার সাথে লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এ বিষয়টি কারিগরি জ্ঞান, ভাষা জ্ঞান, আত্নোন্নয়ন, সমস্যা সমাধান, ব্যক্তি সম্পর্ক ইত্যাদি দ্বারা মানবসম্পদকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে। ফলে যে দেশের অতিরিক্ত মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন করে বিদেশে রপ্তানি করে কর্ম সংস্থার সুযোগ ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হয়।
২. মানব সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার : লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে জ্ঞান থাকলে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কার্যাবলি স্বল্পসময়ে, কম পরিশ্রমে ও দক্ষতার সাথে সম্পাদন করা যায়। সুতরাং, মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের গুরুত্ব অপরিহার্য।
৩. দক্ষ ব্যবস্থাপনা : ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনয়নে লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দক্ষতার সাথে কাজ করার জন্য এ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।
৪. দক্ষ কর্মী সৃষ্টি : লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের মাধ্যমে আত্ন উন্নয়ন, সামাজিক দক্ষতা, ব্যক্তি সম্পর্ক, সমস্যা সমাধান, দলবদ্ধ কার্য সম্পাদন, শর্টহ্যান্ড ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষাদান করে দক্ষ কর্মী তৈরি করা যায়।
৫. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ : লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট বিষয়টি রপ্ত করে একজন লিপিকার যে কোনো লেখনি স্বল্পসময়ে ও স্বল্পশ্রমে সম্পন্ন করে তার কর্ম দক্ষতা দেখাতে পারেন। এটি কার্যালয়ের কার্যভার লাঘব করে এবং সময় ও অর্থ বাচিয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
৬. সমন্বয় সাধন : লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের মাধ্যমে একজন সচিব সামাজিক দক্ষতা, ব্যক্তি সম্পর্ক, সমস্যা সমাধান, দলবদ্ধ কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে পারেন।
৭. যোগাযোগ উন্নয়ন : লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলে এবং সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধা : প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সমূহ সুন্দর, সংক্ষিপ্ত অথচ সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত, সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উপায় বা পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষাদান করে লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান তথা দেশের সার্বিক কল্যাণ সাধন করে।
৯. নথিপত্র সংরক্ষণ : যে কোনো অফিসিয়াল চিঠিপত্র সংরক্ষণ করা এবং প্রয়োজনের সময় দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নথিপত্র সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ বিষয়ে, জ্ঞানার্জন সম্ভব লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের মাধ্যমে।
১০. মুখপাত্র : এ বিষয়ে, জ্ঞানসম্পন্ন একজন সচিব প্রতিষ্ঠানে তার নির্বাহীর নিয়ন্ত্রণাধীন থেকে কাজ করেন। তিনি অনেক সময় নির্বাহীর প্রতিনিধি বা মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১১. গোপনীয়তা রক্ষা : একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা রক্ষা করে কীভাবে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায় সে সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের মাধ্যমে।
১২. সময় বাঁচাতে : লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর অন্যতম অংশ ইংরেজি শর্টহ্যান্ড। এর মাধ্যমে কম সময়ে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়।
১৩. সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে : সাটলিপির মাধ্যমে দ্রুত ডিকটেশন নিতে পারার দক্ষতা এ বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। আর এই দক্ষতা সাংবাদিকতা পেশার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
১৪. সভা পরিচালনা : লাইফ স্কিল বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি সভা সুন্দরভাবে উপস্থাপনা এবং দক্ষতার মাধ্যমে পরিচালনা করতে পারেন।
১৫. আত্নবিশ্লেষণ ও আত্নোন্নয়ন : এ বিষয় পাঠে একজন ব্যক্তি নিজেকে বিশ্লেষণ করতে পারে এবং আত্নোন্নয়নের ধারা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে থাকে।
১৬. পাঠাভ্যাস : পাঠাভ্যাস গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে ইচ্ছা, আগ্রহ, পরিবেশ, আসবাবপত্র বিন্যাস, বিষয়বস্তু উপস্থাপন, উপকরণের ব্যবহার, সময় তালিকা, শিক্ষণের মনোভাব ইত্যাদি উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের মাধ্যমে এসব উপকরণের যথাযথ প্রয়োগ ঘটিয়ে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা যায়। ফলে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়।
১৭. সামাজিক দক্ষতা : এ বিষয়টি মানুষের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও নমনীয় আচরণ করে সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির উপায় শিক্ষা দেয়।
১৮. সমস্যা সমাধান : এ বিষয়টি পাঠের মাধ্যমে অফিসের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করণ ও তা সমাধানের উপায় জানা যায়। ফলে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখা যায়।
১৯. বাজেট ও পরিকল্পনা প্রণয়ন : লাইফ স্কিল পাঠে একটি অফিসের বাজেট ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজ হয়। বাজেটিং ও পরিকল্পনা সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নেই ভূমিকা রাখে না, বরং পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটেও ভূমিকা পালন করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব অপরিসীম। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে লাইফ স্কিল ডেভেলপমেন্ট পাঠের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।