মাঝে মাঝেই আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশি লাফায় তো শরীরের মাংস লাফালে কি হয় । মাংস লাফায় সাধারণত পেশির সংকোচনের কারণেই এমন হয়ে থাকে। এর থেকে পরিত্রান পেতে হলে প্রাথমিকভাবে মেঝেতে, খাটে বা চেয়ারে বসে পা দুটোকে সোজা করে দিন সামনের দিকে। এরপর পায়ের পাতা চেপে ধরে নিচের দিকে টানুন। আর সাথে সাথে উঠবেন না। একটু সময় নিয়ে তারপর উঠুন।
শরীরের মাংস মাঝে মাঝে লাফায় কেন?
এই দেহের মাংস লাফানোকে ইংরেজিতে মাসল স্পাজম বা মাসল ক্রাম্পস বলে। এই ঘটনা বেশি ঘটে যখন পেশি অনিচ্ছাকৃত সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং স্বল্প সময়ে শিথিল হতে পারে না। অনেক সময় ঘুমের মধ্যেও পায়ের অথবা ঘাড়ের মাংসপেশিতে টান লাগে। তখন কিছুক্ষণের জন্য যেন দেহের ঐ অংশ অবশ হয়ে যায়।
আবার ঠিক হতে কিছুক্ষণ সময় নেয়। ঘুমের মধ্যে এরকম মাংসপেশিতে টান লাগলে সাথে সাথে উঠে পড়বেন না। আগে স্থির হন এবং পা অথবা ঘাড় সোজা রাখুন। এরপর একহাত দিয়ে যেখানে টান লেগেছে সেখানে ম্যাসাজ করুন। আর পাশে কেউ থাকলে তার সাহায্য নিন। আর সম্ভব হলে একটা অতিরিক্ত বালিশ পায়ের নিচে দিয়ে পা উপরে তুলে রাখুন। এতে আরাম পাবেন।
ঘুমের সময় পাশ ফিরতে গেলে অনেক সময় মাংসপেশিতে টান লাগে। আবার হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ গর্তে বা ঢালু জায়গায় পা পড়লে পায়ের মাংস লাফাতে থাকে। তখন একপাশে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যাবেন।আর বসার মতো জায়গা বা বেঞ্চ পেলে বসে পড়বেন। এই অবস্থায় ৩-৫ মিনিট পা স্থির রাখবেন। এরপর হাঁটা শুরু করবেন।
আবার, ব্যয়াম করার সময় তাড়াহুড়া করা, অতিরিক্ত ওজন বহন করা, দুই সেটের মাঝে যথেষ্ট বিরতি না দিলেও মাসল স্পাজম ঘটতে পারে। তাই ব্যয়াম করলে যথেষ্ট সময় নিয়ে করতে হবে। আর ব্যয়াম শেষ হওয়ার পর অন্তত দশ- পনেরো মিনিট রিল্যাক্স করতে হবে।
মাসল স্পাজমের কারণ কি?
মাংস লাফানো বা মাংসপেশিতে টান পড়া সাধারণ ঘটনা বলেই মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা, ব্যয়াম করার আগে ওয়ার্ম আপ করা, শারীরিক অবসাদ, পানিশূন্যতা ; এমনকি দেহে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালসিয়ামের অভাবেও হাত ও পায়ের মাংস লাফায়।
অতএব, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পরিমিত আর সুষম আহার করতে হবে।
তবে যদি বারবার মাংস লাফানোর মতো ঘটনা ঘটে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কেননা এটি কোনো মারাত্মক শারীরিক জটিলতার লক্ষণ হতে পারে।
এছাড়া স্নায়ুর জটিলতার কারণেও অনেক সময় হাত ও পায়ের মাংস লাফায়।
কারণ মষ্তিস্ক থেকে এরা ঠিকমতো সিগন্যাল পায় না।
কারা মাসল স্পাজমে আক্রান্ত হয় বেশি?
সব বয়সী মানুষেরাই মাসল স্পাজমে আক্রান্ত হতে পারে।
তবে বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা আক্রান্ত হয় বেশি।
আবার যারা বিরতি না দিয়ে শারীরিক পরিশ্রম করতে থাকেন, তাদের পেশি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়লে এই মাংস লাফানোর মতো ঘটনা ঘটে। তাই ডাক্তাররা অতিরিক্ত ব্যয়াম করতে সবসময় নিষেধ করেন।
শরীরের কোনো অংশের মাংস লাফালে কেমন বোধ হয়?
দেহের কোনো অংশের মাংস লাফালে হালকা থেকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। সেইসময় ঐ অঙ্গ নড়াচড়া করাতে বেশ কষ্ট হয়। এই অবস্থা কয়েক সেকেন্ড হতে পনেরো মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
সবথেকে কার্যকরী উপায় হচ্ছে মাংস লাফালে ঐ অঙ্গকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দেয়া। এতে পেশি সংকুচিত হয়ে গেলে তা স্বাভাবিক হবার সময় পায়। তবে নিয়মিত মালিশ করলে এই অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়।
আবার, সারাদিন বসে থাকার পর হঠাৎ হাত- পা নড়াচড়া করাতে গেলে মাংসপেশিতে টান লাগতে পারে।
তখন মাংস লাফায়। অন্যদিকে, ছয়- আট ঘন্টা চেয়ারে বসে কাজ করার পর যখন দাঁড়াতে যাবো, তখন পায়ের মাংস লাফাতে থাকে।
এইজন্য কাজ শেষ করে সাথে সাথে দাঁড়াবেন না। হাত- পা আগে বসা অবস্থাতেই স্ট্রেচিং করে নিন।
তাহলে আর পায়ের মাংস লাফাবে না। সবথেকে ভালো হয়, দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় বসে না থেকে মাঝে মাঝে একটু হেঁটে আসুন।
কাজে বিরতি দিন। এতে শরীর ও মন সতেজ থাকবে আর হাত- পা নিস্তেজ হয়ে আসবে না।
শরীরের মাংস লাফালে কি হয় ? লাফানো কোনো খারাপ রোগের লক্ষণ?
যদিও সাধারণভাবে দেহের মাংস লাফানোকে স্বাভাবিক মনে করা হয়। কারণ এটি একটু পরেই ঠিক হয়ে যায়।
কিন্তু যদি বারবার এরকম হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হবে। প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্ট দেখাতে হবে।
কারণ এই মাংস লাফানো মষ্তিস্কের জটিলতা, এপিলেপসি কিংবা প্যারালাইসিসের লক্ষণ হতে পারে।
আবার, শরীরের যে অংশে মাংস বেশি লাফায় সেখানে কোনো অভ্যন্তরীণ জটিলতা থাকতে পারে।
আঘাত লাগতে পারে। যেমন: হার্টের পেশি লাফানো অথবা বুকে বা তলপেটে ব্যথা হার্ট এটাক বা জটিল কোনো রোগের উপসর্গ হতে পারে। তাই অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শরীরের মাংস লাফালে এর প্রতিকার কি?
প্রথমত, লাইফস্টাইল পাল্টাতে হবে। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা যাবে না।
আবার, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা চলবে না। দ্বিতীয়ত, খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে।
প্রচুর পানি পান করতে হবে। আর সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে বাদ দিতে হবে।
বাদাম, খেঁজুরসহ বিভিন্ন উদ্ভিজ প্রোটিন খেতে হবে।
এছাড়া ডিম- দুধ খেতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
সুষম আর স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। আর প্রাণীজ প্রোটিন, ভিটামিন ডি, আয়রন আর খনিজ জাতীয় খাবার খেতে হবে।
সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে হবে।
এছাড়া কিছু নিয়ম- কানুন মেনে চললে এই মাংস লাফানোর সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
১| নিয়মিত হাঁটতে হবে। কারণ হাঁটলে শরীরের পেশি সচল থাকে।
২| মাঝে মাঝে হাত- পা ম্যাসাজ করতে হবে। এতে পেশির কার্যকারিতা বাড়ে।
সম্ভব হলে মাসে অথবা দুইমাসে একবার পার্লার থেকে বডি ম্যাসাজ করানো যেতে পারে।
৩| বডি স্ট্রেচিং করতে হবে।
৪| সপ্তাহে অন্তত দুইদিন যোগব্যয়াম করতে হবে।
৫| ব্যয়ামের মাঝে অবশ্যই বিরতি দিতে হবে।
৬| শারীরিক পরিশ্রমের পর বিশ্রামের বিষয়টা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
৭| ঘুমের সময় পজিশন ঠিক রাখতে হবে আর বিছানা যাতে আরামদায়ক হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৮| সিড়ি দিয়ে উঠা- নামা করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। যাতে মাংসপেশিতে টান না লাগে।
৯| যদি পুরনো কোনো আঘাতের জায়খায় বারবার মাংস লাফাতে থাকে, তাহলে অবশ্যই ফিজিওথেরাপিস্টের শরনাপন্ন হতে হবে। অতিঅবশ্যই, কোনো রকম থেরাপি নেয়ার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
এই ছিলো (শরীরের মাংস লাফালে কি হয়) আজকের মতো। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।