শিক্ষাজীবনে একটা বড় সমস্যার নাম procrastination। বাংলায় বললে দাড়ায় ‘গড়িমসি’। যদি একটু ব্যাখ্যা করে করে বলি তাহলে অর্থটা অনেকটা এরকম যে কোনো কাজ এখন করা উচিত কিন্তু সেটা পরে করার জন্য রেখে দেয়া। এই অভ্যাসটা কমবেশি প্রায় সবাইকেই ভোগায়। বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারার মূল কারন এটাই। এই সমস্যা থেকে বাচার জন্য একটা কার্যকর পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন আমেরিকান লয়ার মেল রবিন্স। তিনি এই কৌশলের নাম দিয়েছেন ‘ফাইভ সেকেন্ড রুল’। তিনি নিজেই এটি অনুসরন করে সফল হয়েছেন। তাই তিনি এর উপর ২০১৭ সালে একটি বই প্রকাশ করেন। আজকে এই জীবন পরিবর্তনকা্রী নিয়মটা নিয়েই বিস্তারিত লিখব।
তিনি এই কৌশলটা সম্পর্কে আইডিয়া পেয়েছিলেন রকেটের উড্ডয়ন দেখে। টেলিভিশন-এ দেখাচ্ছিল যে একটা রকেট এখনও ভূমিতেই। তারপর ফাইভ, ফোর, থ্রি, টু, ওয়ান… এভাবে কাউন্টডাউন করেই রকেটটা উড্ডয়ন করলো। মুহুর্তের মধ্যে আকাশে চলে গেলো। ব্যাপারটা নিয়ে একটু গভীরভাবে ভেবে দেখুন তো, একটা রকেট উড্ডয়নের মত ঘটনা এস্ট্রোনটরা মাত্র ৫ সেকেন্ডে ঘটিয়ে ফেলেছে, তাহলে আরো কত কিছুই না করা সম্ভব এই এতটুকু সময়ে!
আসলে ব্যাপারটা এভাবে চিন্তা করলে ভুল করবেন। রকেট স্টার্ট করে উড্ডয়ন করতে ৫ সেকেন্ড লেগেছে ঠিকই কিন্তু এর পেছনের গল্পটা কিন্তু মিস করে যাচ্ছেন। যে মহাকাশচারী রকেট উড্ডয়ন করালো উনার পার্স্পেক্টিভ থেকে একটু ভেবে দেখুন। তিনি যদি চাইতেন তাহলে কিন্তু রকেট স্টার্ট করতে আরেকটু বিলম্ব করতেই পারতেন। শেষ মুহূর্তে কিন্তু তিনি কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করে বা মৃত্যুর ভয়ে কিন্তু তিনি থেমে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং কাউন্টডাউন শেষ হতেই রকেটটা শূন্যের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। এবার আপনার নিজের জীবনের সাথে ঘটনাটাকে কানেক্ট করার চেষ্টা করুন।
পরীক্ষার্থীদের একটা সাধারন মানসিকতা যে পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর সবাই চিন্তা করে যে এর পরের পরীক্ষায় আমি সেরাটাই করবো। বাসায় ফেরার পর ভাবে যে কালকে থেকে পড়তে বসব। পরদিন আসার পর মনে হবে যে কেবলই তো একটা এক্সাম দিলাম। পরের এক্সাম আসতে এখনও অনেক দেরি। আজকের দিনটা পড়তে না বসলাম। কালকে থেকে পড়তে বসবো। আবার কালকের দিন আসে। এবার ক্লাস, কোচিং করে এসে খুবই ক্লান্ত। তাই নিজের শারীরিক দুর্বলতার কাছে হার মেনে নিয়ে বিশ্রাম নিতে হয়। এই দিনটাও চোখের পলকে চলে যায়, পড়ার টেবিলে গেলেও খুবই সামান্য সময়ের জন্য যাওয়া হয় তবে সেটা যথেষ্ট নয়।
এভাবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস চলে যায়। আবার যখন এক্সাম কাছাকাছি আসে তখন টনক নড়ে। কিন্তু নিজের মস্তিষ্ক তখন বলে যে এখন সময় অনেক কম, এই সময়ে পড়া শেষ হবে না, আবারও কিন্তু পড়ায় গড়িমসি করা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনাটা একটা সাইকেলের মধ্যে চলে গিয়ে পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে। জীবন থেকে সময়গুলো হারিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এর সমাধানটা খুবই সহজ। এইরকম ছোটখাটো কাজগুলোর ক্ষেত্রে যদি আমরা সিদ্ধান্ত নিতে কেবল ৫ সেকেন্ড সময় নিই তাহলেই কিন্তু প্রবলেম সল্ভ হয়ে যায়। আপনি কেবল সিদ্ধান্ত নিতে পাচ সেকেন্ড নিবেন তবে কাজটা আপনাকে দীর্ঘ সময় নিয়েই করতে হবে।
এক্ষেত্রে কাজটা কত বড় কিংবা কঠিন এগুলো চিন্তা করা যাবেনা বরং কীভাবে করলে কার্যকরভাবে শেষ করা যাবে তা নিয়ে ভাবতে হবে এবং কাজটা শুরু করে দিতে হবে। পরীক্ষা দিয়ে এসে “কেবলই তো পরীক্ষা দিলাম, অনেক সময় আছে” এতকিছু না ভেবে যদি সরাসরি পড়ার টেবিলে চলে যাই? জীবন কিন্তু একটা দ্বিতীয় সুযোগ কখনো কখনো দেয় , যখন আমাদের টনক নড়ে তখন “এত কম সময়ে শেষ করা সম্ভব না” মস্তিষ্ককে এই চিন্তা করার সুযোগ না দিয়ে যদি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেই? এই কথাটাই মেল রবিন্স তার বইতে বোঝাতে চেয়েছেন।
তবে হ্যা যখন আমরা কোনো ক্রিয়েটিভ কাজ করতে যাব তখন কিন্তু একটু ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।যেমন আপনি একটা ভিডিও বানাবেন সেক্ষেত্রে আপনাকে আগে থেকে কিছু ব্যাপারে ভাবতেই হবে। জীবনের বড় কোনো সিদ্ধান্ত যেমন নিজের জীবনের একটা লক্ষ্য সিলেক্ট করতে গেলে আমি কি হবো, কীভাবে হবো, এই কাজে কি আমার প্যাশন আছে কিনা এই ধরনের ব্যাপারগুলো অবশ্যই সময় নিয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয় কিন্তু আমরা যখন নিজের স্বপ্নের পেছনে দৌড়াচ্ছি তখন কিন্তু আমি জানি আমি কোথায় যাচ্ছি। তখন আর এত ভাবতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু না। তখন ফাই সেকেন্ড রুল আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারবে।
আশা করি এই কৌশলটি অবলম্বন করে স্টুডেন্টরা আরো প্রোডাক্টিভ হতে পারবে।