আমাদের জীবনের প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হলো শৈশব। চারপাশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানুষ শিশুকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। শিশুর মানসিকতা তৈরি করে এই প্রভাবক গুলোই।
ব্যক্তিজীবনে শিশুটি কেমন স্বভাবের হবে বা তার চাহিদাগুলো কেমন হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো তার শৈশবের উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। শিশুরা অনুকরণপ্রিয় এবং নতুন কিছু শেখার প্রবনতা তাদের মধ্যে অনেক বেশি। তাই শৈশবে আমরা যা শিখি বা দেখি তা আমাদের পরবর্তী জীবনে সুনির্দিষ্ট ও সুনিপুণ ভাবে ছাপ ফেলে। তাই মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উচিত শিশুর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া ও খেয়াল রাখা।
শিশুর চারপাশে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা ও বজায় রাখা উচিত যা তার মননের সুন্দর ও পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য অনুকূল। শিশুর আশেপাশে এমন কোনো কথা বলা বা আচরণ করা উচিত নয় যা তার মস্তিষ্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
মানুষের মনের একটা অংশে তার শৈশব আবদ্ধ হয়ে থাকে যা কখনও মুছে ফেলা যায় না। যে শিশুটি তার চারপাশের মানুষদের মধ্যে উদারতা, শান্তিপ্রিয়তা, নৈতিকতা ইত্যাদি গুণাবলী দেখে বড় হয় সে ভবিষ্যৎ জীবনে এসব মূল্যবোধ অর্জন করতে পারে এবং তার কাজে ও আচরণে এসব গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
পক্ষান্তরে, শিশুটি যদি স্বার্থপরতা, মিথ্যাচার, হিংসা ইত্যাদি খারাপ প্রভাবকের মধ্যে থেকে বেড়ে উঠে , সে জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে সুন্দর মানসিকতার হতে পারে না। তার মনের একটা অংশে এসব বিরূপ গুণাবলী গুলি আবদ্ধ হয়ে থাকে এবং তার কাজের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় এসব বৈরী মনোভাব প্রকাশিত হয়। সন্তান যদি দেখে যে তার বাবা নিজের স্ত্রীকে মারধর করে তবে সে সন্তানও যে ভবিষ্যতে এমন কাজ করবে না তা কিন্তু বলা যায় না।
আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থা খুবই করুণ। মিথ্যুক, দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থপর মানুষে সমাজ সয়লাব হয়ে গেছে। আজকাল মানুষ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। কে, কখন, কিভাবে ক্ষতি করে দেয় বা ঠকিয়ে দেয় কিছুই বলা যায় না। মানুষের এমন হীনমন্যতার একটি কারণ হলো ভালো একটা শৈশব না পাওয়া। মানসিকতার সঠিক বিকাশ ঘটানোর সময় যে শৈশব , সেটিই যদি স্বার্থপরতা, ঘৃণা ও বৈরিতার মধ্যে কাটে , তাহলে শিশু কখনোই একজন নিষ্ঠাবান ব্যক্তি হতে পারে না।
সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করতে হলে পদক্ষেপ নিতে হবে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই। পরিবার থেকে শিশুর প্রথম শিক্ষালাভ হয়। পরিবারের সেই শিক্ষা হতে হবে নৈতিক ও গঠনমূলক। এই শিক্ষাই মানুষকে ব্যক্তিজীবনে সঠিক পথে চলার অনুপ্রেরণা ও আত্মবিশ্বাস দেয়। অনেক মা-বাবা আছেন যারা সন্তানের মানসিক বিকাশের প্রতি উদাসীন থাকেন। সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়েই তারা নিশ্চিন্ত হয়ে যান। কিন্তু শিশুর প্রধান বিদ্যালয় যে তার পরিবার- এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভাবেন না। সন্তানকে শেখানো উচিত কিভাবে মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকতে হয়। মানুষকে ভালোবাসা, পরোপকার ইত্যাদি গুণগুলো যেন সন্তানের মধ্যে বিকশিত হয় সে ব্যাপারে মা-বাবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এমন মা-বাবা আমাদের সমাজে খুব কম।
শিক্ষিত হয় অনেকেই, কিন্তু মানুষ হয়ে উঠে কয়জন? ধনী হওয়ার, খ্যাতি অর্জন করার উপদেশতো প্রায় সবাই দেয় , কিন্তু ভালো মানুষ হওয়ার উপদেশ কয়জনই বা দেয়? কয়জন বলে জীবনে এমন কাজ করো বা এমন কিছু হও যাতে মানুষের কল্যাণ হয়?
শৈশবের সঠিক শিক্ষা সারাজীবনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। তাই শৈশব হতে হয় ভালোবাসাময় ও সুশিক্ষায় পরিপূর্ণ। ফলে শিশু হয়ে উঠবে সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী।