আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠা খুবই উপকারী এ কথা সবাই স্বীকার করবে। কিন্তু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে মন চায় না। আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে থাকি। বিজ্ঞানীরা বলে যে ,সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে মস্তিষ্কের স্মৃতি ধারণ ক্ষমতা কমতে থাকে।
বর্তমান যুগ হলো কর্মব্যস্ততার যুগ। এতসব কাজকর্ম করে রাতে ঘুমোতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে যায়, সেই কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়। আবার বেশিরভাগ লোকই এখন অনেক রাত পর্যন্ত ফেসবুক ,ইউটিউব ,ইন্সট্রাগ্রাম ,টুইটার সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় দিয়ে থাকে, সে কারণে তাদের ঘুম থেকে উঠতে দেরি তো হবেই এটাই স্বাভাবিক। তারা মনে করে দেরিতে ঘুম থেকে উঠার কারণে তাদের শরীরের কোন ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু আসল কথা হলো কোনো ক্ষতি প্রথম প্রথম বোঝা যায় না, পরবর্তীতে এটি অনেক বড় আকারের ক্ষতিতে পরিণত হয়।
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার কারণে মন মেজাজ খুব সতেজ ও উৎফুল্ল থাকে। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার কারণে অনেক বেশি সময় পাওয়া যায় সারা দিনের কাজ কর্মের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই যারা দেরিতে ঘুম থেকে উঠবে তাদের থেকে যারা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবে তারা সকল কাজেই বেশি সময় পাবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার কারণে অনেকটা চিন্তামুক্ত থাকা যায় এবং ফ্রেশ থাকে মন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার কারণে দেহ ও মন স্বয়ংক্রিয় থাকে ফলে মানসিকভাবে অনেকটা সবল থাকে।
সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি দিক। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই সকালে বিছানায় শুয়ে বাঁচাতে পাঁচ মিনিট পরে উঠব। অথবা আর একটু ঘুমিয়ে নি একটু পরেই উঠব।এরকম ভাবতে ভাবতে কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে অলসতায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। কিন্তু এর ফলে যে কতটা ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো লক্ষ নেই। সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের ভোরে ঘুম ভাঙে, তারা বেশি সুখী হন। এই সুখ স্বল্পমেয়াদি নয়, বরং সারাটা জীবন ধরেই সুখ ছুঁয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস সাময়িকী।
এবার ছোট্ট একটা সত্য কাহিনী বলি,
ফাতেমা (রা.) নবীজির মেয়ে। তিনি বলেন, আমি সকালবেলার অলস ঘুমে ছিলাম। হজরত রাসূল (সা.) আমার ঘরে এলেন। আমাকে নাড়া দিলেন। ডেকে বললেন, মা ওঠো! তোমার রবের রিজিক গ্রহণ করো। অলসদের (সকালের ঘুমে কাতর) দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের রিজিক বণ্টন করে থাকেন। (আত-তারগিব: ২৬১৬)।
এই কারণে সূর্যাস্তের সাথে সাথে যারা যা কাজ আছে সে কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া উচিত। ভোরের বাতাস তুলনামূলকভাবে বিশুদ্ধ। এই সময়ে জগিং করলে অথবা বারান্দায় বসলে নিঃশ্বাসের সঙ্গে বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ করা যায়। ফলে শরীর সুস্থ থাকে। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা অনেক। ভোরের ফুরফুরে আবহাওয়ায় দেহ-মন সতেজ থাকে। কাজ করার জন্য সারা দিনে প্রচুর সময় পাওয়া যায়। ভোরে উঠলে দীর্ঘ জীবন লাভ করা সম্ভব। যুক্তরাজ্যে ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, ভোরে ওঠা ব্যক্তিদের চেয়ে দেরিতে ওঠা মানুষের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা ১০ শতাংশ বেশি।
সুতরাং আমরা দেখতে পাই যে ,সকালে ঘুম থেকে ওঠার প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা অনেক বেশি। সেকারণে প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও ,সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করে নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে ,স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূলে।
ভালো থাকবেন। সব সময় সচেতন থাকবেন ,এই কামনায় ব্যক্ত করে এখানে লেখা শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।