প্রাথমিক কথা
আমার সন্তান কি সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে? আমার সব কথা শুনবে? কথা না শুনলেতো ওকে মানুষ করতে পারবনা। যখন বয়স ৭-৮, এবারের পরীক্ষায় গোল্ডেন প্লাস না পেলে সবাইকে আমি মূখ দেখাবো কিভাবে?
আমাদের সমাজের বাবা মায়েদের বর্তমান চিন্তা ধারার বাস্তব চিত্র ঠিক এমনই। সত্যি কথা বলতে কি সন্তানরা নয় বরং আমরা বাবা মায়েরাই একধরনের “সামাজিক সম্মান” নামক প্রতিযোগিতায় নিজেরা লিপ্ত হয়েছি।কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনি যে এটা নিজেদের এবং আমাদের বাচ্চাদের জন্য ভবিষ্যতে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াতে পারে। চিন্তা করবেননা, সবকিছুরই সমাধান আছে।
বিস্তারিত আলোচনাঃ
সমস্ত বাবা-মা উপযুক্ত দায়িত্বের মাধ্যমে তাদের সন্তানকে সঠিক সংস্কার দিতে চান। তাদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, চেতনা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করা সমস্ত পিতামাতার স্বপ্ন। সন্তানের জন্মের থেকে বড় হওয়ার সময় পিতামাতার উদ্বেগের শেষ নেই।
শিশুরা পৃথিবীতে তাদের নিজস্ব নিয়তি নিয়ে আসে। আমরা বাবা-মা কেবল তার যত্ন নিই। আমরা চাইলেও আমাদের বাচ্চাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি না।
মূলত আমরা বাবা-মায়েরা যারা তাদের সন্তানের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য সর্বদা উদ্বিগ্ন- উপরের উক্তিটি তাদের জন্য।
নিজের সন্তানের যথাযথ লালন-পালনের জন্য গবেষণার বিকল্প নেই। গবেষণা,পর্যালোচনা,নিরীক্ষা আলাদা হতে পারে।
-বুক অধ্যয়ন
-কেস ইতিহাস গবেষণা
-প্রিয় অভিজ্ঞতা
সমাজের কাউন্সিলর, বিশেষজ্ঞ রয়েছেন -আমরা অন্যদের তাদের বাচ্চাদের সম্পর্কে প্রচুর জ্ঞান দিই কিন্তু আমাদের নিজের সন্তানের ক্ষেত্রে সব ভুলে যাই তা সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত।
পিতামাতার জন্য উদ্বেগজনিত ব্যাধি:
উদ্বেগ ব্যাধি চরম উদ্বেগ এবং ভয় বোঝায়। পিতামাতার উদ্বেগ শিশুর আচরণের পরিবর্তন, ঘুম,খাওয়ার মেজাজ, আন্দোলন, সামাজিক ক্রিয়াকলাপ, বাড়ির ক্রিয়াকলাপ, বিদ্যালয়ের বাড়ির কাজ, সংস্থার বন্ধুবান্ধব ইত্যাদি সম্পর্কে উদ্বেগ সৃষ্টি করে ।
বাচ্চাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল গঠনে পিতামাতার পরিস্থিতি:
নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের বিষয়ে চিন্তিত হওয়া স্বাভাবিক কারণ । কিন্তু কখনও কখনও,অতিরিক্ত সুরক্ষা শিশুদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে এবং তাদের দক্ষতা বিকাশ রোধ করতে পারে। তারা বিভিন্ন দক্ষতা থেকে পিছনে ফিরে আসে যা তাদের সমাজের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হওয়া থেকে পিছিয়ে দেয়। বিশেষ কিছু সমস্যা জেনে নেইঃ
১। কঠোর নিয়ম:
পিতামাতারা কোনও যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বাচ্চাদের কঠোর নিয়ম সরবরাহ করেন। অনমনীয় ও কর্তৃত্ববাদী প্যারেন্টিং কখনও কখনও খুব বেশি সহায়ক নাও হতে পারে।
২। উপযুক্ত ক্রিয়াকলাপ:
প্রাকৃতিক পরিণতিগুলি বিভিন্ন বয়সের সমস্ত শিশুদের উপযুক্ত কাজের জন্য একটি ভাল পাঠ হতে পারে। বাচ্চাদের তাদের জীবনধারণের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর পছন্দগুলি শিখতে গাইডেন্স এবং মাঝে মাঝে কিছুটা বিধিনিষেধের প্রয়োজন হয় কিন্তু তাদের বিকাশে বাধা হয় এমন বাধানিষেধ তাদের জন্য ক্ষতিকর।
৩। নিষ্ক্রিয় ভাবনাঃ
সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে অযথা গহীন ভাবনা থেকে নিজেদের বের করে নিয়ে আসুন। সঠিক ভাবনায় নিয়োজিত হন। বাচ্চাদের বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী শোনান, বাচ্চাদের চোখে তাদের কষ্ট করে বেড়ে ওঠার আলোকচিত্র স্থাপন করুণ। জীবনের সফলতার বিষয়গুলি কতটা মধুময় সে সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস দৃঢ় করুণ। দেখবেন তারা জীবনে সফল হতে সচেস্ট হয়ে উঠবে।
৪। সবকিছুতে ‘না’ বলা বন্ধ করুন:
সন্তানের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপে অবিচ্ছিন্নভাবে ‘না’ শব্দটি শিশুকে জীবনে অন্যের উপর আরও নির্ভরশীল করে তোলে। শিশুদের দক্ষতা অর্জনের জন্য সহজ দায়িত্ব দেওয়া উচিত, তাকে ছোট ছোট কাজ বুঝিয়ে দিন। শিশুকে দায়িত্বশীল হতে সাহায্য করুণ।
৫। অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া বন্ধ করুন:
বেশিরভাগ পিতামাতাই প্রায়শই তাদের সন্তানের বাচ্চাদের খেলনা বা ঘরের জিনিসগুলি ভাঙ্গার বিষয়ে কঠোর হয়ে থাকেন। এটি মনে রাখা উচিত,এই সমস্ত ক্রিয়াকলাপ শিশুদের শেখার প্রক্রিয়ার অংশ। তাকে বকা না দিয়ে ক্ষতিকর বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। ধৈর্যশীলতা বজায় রাখায় সচেস্ট হোন।
পরিশেষ মন্তব্যঃ
যদি বিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের ব্যক্তিগত জীবন যাচাই করা যায় এবং তাদের বিচার,আচরণ, জীবনধারা, চিন্তাভাবনাগুলি পর্যালোচনা করা যায় তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব হবে। এবং এটি হ’ল আপনার বাচ্চাদের ভবিষ্যতের লালনপালন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা পাওয়া।