আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই?
আমি আজকে আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো ৫ টি সাকসেসফুল অভ্যাস যা আপনাকে একজন সাকসেসফুল ব্যাক্তি হিসেবে ঘড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
নাম্বার ১: ভোরে ঘুম থেকে উঠা
একজন সাকসেসফুল ব্যাক্তি হিসেবে নিজেকে ঘড়ে তুলতে আপনাকে অবশ্যই ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাসে যারা নিজেদের স্থান থেকে সফল হয়েছে তাদের সবারই প্রধান অভ্যাস ছিলো ভোরে ঘুম থেকে উঠা। যেমন:মাইক্রোসফট এর ফাউন্ডার্স বিল গেটস, অ্যাপল এর ফাউন্ডার্স স্টিভ জবস থেকে শুরু করে স্যামসাং এর কো ফাউন্ডার্স লী বায়ংচুল ছাড়াও খ্যাতিমান সকল ব্যাক্তিদের অভ্যাস ছিলো ভোরে ঘুম থেকে উঠা। পৃথিবীর ইতিহাসে যারা মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করতো সে সকল নবী এবং রাসূলদের অভ্যাস ছিলো ভোরে ঘুম থেকে উঠা। বিশেষ করে আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ভোরকে সফলতার সময় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রিয় রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য সকালকে বরকতের মাধ্যম হিসেবে কবুল করা হয়েছে। এছাড়াও মুসলমানদের ইতিহাসে যতো যুদ্ধ হয়েছে তার বেশিরভাগ সূচনা হয়েছে ভোরে ফজরের সালাত আদায় করে। অতএব সফলতার প্রথম ধাপে ভোরে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করতে হবে যদি নিজেকে সাকসেসফুল ব্যাক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। আর সকালে ঘুম থেকে উঠার প্রথম শর্ত হলো দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া।
নাম্বার ২: বেশি বেশি বই পড়া
এমন নয় যে সাকসেসফুল ব্যাক্তিরা নিজের কাজের প্রতি জন্ম থেকে চূড়ান্ত পারদর্শীতা অর্জন করেছিলো। বরং তারা প্রচুর সময় ব্যায় করেছিলো জ্ঞান অর্জনের জন্য। কারণ আপনি যে কাজ করবেন বলে ভেবেছেন তার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন ব্যাতিত সে কাজ সঠিক ভাবে সম্পাদন করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। বই হলো এমন এক মৌমাছি যা অন্যের সুন্দর মন থেকে মধু সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য নিয়ে আসে এছাড়াও আমাদের প্রিও রাসূল (সাঃ) এর উপর প্রথম ওহি নাজিল হয়েছিলো ‘পড়ো’ যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন, হে নবী পৃথিবীকে পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে পড়তেই হবে। এরপর আয়াত নাজিল হলো মহানবী (সাঃ) তা পাঠ করলেন। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই, বই এবং বই। বই আমাদের ব্রেইনের ধারণ ক্ষমতা কে বৃদ্ধি করে। ব্রেইন সবসময় চায় নতুন কিছু শিখতে, নতুন কিছু তার ভিতরে ঢুকাতে। অতএব সাকসেসফুল ব্যাক্তি হতে চাইলে নিজের মন কে সচল রাখুন বই পড়ার মাধ্যমে।
নাম্বার ৩: স্বাস্থ্য কে মূল্য দিন
স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম করা অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিত্যাগ করা, শরীরের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আপনার শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্য কে ভালো রাখবে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস আপনার মনকে সফল সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করবে। শারীরিক ব্যায়ামকে আপনার জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ বানিয়ে নিন।
দুই বন্ধুর গল্প শোনা যাক। তারা দুজনেই ব্যাবসায়ী এবং তারা দুজনেই নিয়মিত ব্যায়াম করতো। কিন্তু ব্যাবসার চাপে ১ম বন্ধু নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারতো না। যার ফলে তার প্রভাব তার ব্যাবসা এর উপর পড়ে। এক বছর পর ২য় বন্ধু ১ম বন্ধুর বাসাতে বেড়াতে গেলে সে থাকে আপসেট দেখে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি কি এখন নিয়মিত ব্যায়াম করতে যাও? সে বলল না। ২য় বন্ধু বললো বুঝতে পারছি এ জন্যই আপসেট তোমাকে ঘিরে ফেলেছে। যার প্রভাব পড়েছে তোমার ব্যাবসার উপর। মনে রাখবে সফলতার হার হচ্ছে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস। অতএব সাকসেসফুল ব্যাক্তি হতে চাইলে আজই জীবনের অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস গুলোর তালিকা তৈরি করে তা জীবন থেকে মুছে ফেলে দিন।
নাম্বার ৪: অন্যদের কাছে বিভ্রান্ত হবেন না
অন্যদের সফলতার গল্প আপনাকে উৎসাহিত করতে পারে। হ্যাঁ আমি যে পথে হাটছি সফল ব্যাক্তিরাও সে পথে হেটেছে। এতে আপনার মনোবল বৃদ্ধি পাবে। যা খুবই প্রয়োজন একজন সাকসেসফুল ব্যাক্তির জন্য। কিন্তু যখনই অন্যের সফলতা কে প্রতিহিংসা সরূপ দেখবেন তখন নিজের অজান্তেই নিজেকে ছোট ভাববেন। তখন অন্যের সফলতা আপনাকে কষ্ট দিবে। বরং আপনি তাকে অনুসরণ করুন। তার সফলতার কারন, তার করা ভুল, তার ইতিহাস, সে কি করছে, সে কি করেনি ইত্যাদি। তাকে উৎসাহের কারণ হিসাবে নিন প্রতিহিংসা হিসাবে নয়। প্রিয় রাসূল (সাঃ) বলেছেন হিংসা মানুষের আমলগুলো কে খেয়ে ফেলে যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে। অতএব অন্যের সফলতার প্রতি হিংসা আপনার নেওয়া পদক্ষেপগুলো কে খেয়ে ফেলবে। আপনাকে অপ্রয়োজনীয় চাপে ফেলবে যা আপনার সফলতার পথ কে মন্ত্বর করবে। তাই একজন সাকসেসফুল ব্যাক্তি কখনোই অন্যের সফলতা কে হিংসা মরবে না বরং থাকে অনুসরণ করবে এবং নিজের লক্ষ্যে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
নাম্বার ৫: নিজেকে স্বরণ করিয়ে দিন আপনার সময় সসীম এবং সীমিত
একজন সাকসেসফুল ব্যাক্তি রাতে নিজের সারাদিনের কর্ম নিয়ে চিন্তা করে। সে কতোটা এগোতে পেরেছে তার লক্ষ্যের দিকে। সে নিজেকে সবসময় স্বরণ করিয়ে দিবে এটাই তার শেষ দিন। তাই এই সুন্দর দিনটাকে যতোটুকু পারা যায় কাজে লাগাতে হবে। প্রবাদ আছে “ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল, ত গড়ে তোলো মহাদেশ সাগর অতল”
সাকসেসফুল ব্যাক্তিরা নিজের যে কোনো কাজই গুরুত্বের সাথে সম্পাপ্ত করে। বরং প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট কাজকে তারা বেশি গুরুত্ব দেয়, হোক তা অন্যের চুখে ছোট। প্রিয় রাসূল সাঃ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ইয়া রাসূল আল্লাহ তা’লা বান্দার কোন আমল কে বেশি পছন্দ করেন? তিনি বলেছিলেন বান্দার নিয়মিত আমল যদিও তা অল্প পরিমানে হয়। অতএব নিজেকে সাকসেসফুল ব্যাক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রতিদিন ছোট ছোট কিছু ভালো অভ্যাস ঘড়ে তুলুন। মনে রাখতে হবে সাকসেসফুল মানে ইমপ্রোভ এন্ড রিফাইল। সাকসেসফুল ব্যাক্তিরা সবসময় এক রাস্তায় চলে। যদিও তাদের আশে পাশে হরেক রকম সফলতার প্যাকেজ সামনে উঁকি দেয়। সাকসেসফুল ব্যাক্তিরা সময়ের অপচয় রোধে সচেষ্ট থাকে। অতএব সাকসেসফুল ব্যাক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে নিজেকে স্বরণ করিয়ে দিন আপনার সময় সসীম এবং সীমিত। যা আপনার মন কে পরিষ্কার রাখবে এবং সময় অপচয় থেকে রক্ষা করবে।
আশা করি আলোচনাটি আপনার স্বপ্ন পূরনের ক্ষোরক হবে ইনশাআল্লাহ।