বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফল চাষ করা হয়ে থাকে। এই ফলের ভেতর আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম্বুরা ও অন্যান্য। ফল চাষাবাদ করে অনেক কৃষকই আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এছাড়াও বর্তমানে দেশে বিদেশী ফলেরও বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
বিদেশী ফলের ভেতর ড্রাগন, মাল্টা, স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, অ্যাভোকাডো, রকমেলন ও রাংগান এই সাতটি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে প্রতি বছরই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউটের মতে যে সময় দেশী ফলের উৎপাদন কম থাকে সে সময় বিদেশী ফল উৎপাদন করে পুষ্টির অভাব পূরণ করতে বাণিজ্যিকভাবে বিদেশী ফলের উৎপাদন করা হয়।
মহামারী করনাভাইরাস চলাকালীন সময়ে অনেকেই তাদের কাজ হারিয়ে গ্রামে চলে গেছে এবং অনেক উচ্চ শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীরাও বেকার জীবন কাটাচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেরই কৃষি কাজে লিপ্ত হতে দেখা গিয়েছে। বিদেশী ফলের চাহিদা ভোক্তাদের কাছে দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলের দোকান ও বাজারে বিদেশী ফলের চাহিদা খুবই বেশী যার কারণেই উচ্চ শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এই ফলের চাষাবাদ করছে।
অন্যতম সাতটি বিদেশী ফলের চাহিদা ও বাংলাদেশে যেসকল বিদেশী ফল চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া যায়:
ড্রাগন: বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। ড্রাগন ফল একটি সম্ভাবনাময় ফল যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, রঙিন ও আকারে বেশ বড়। এই বিষয়ে ড. বাবুল চন্দ্র সরকার বলেন যে এই ড্রাগন ফলে রঙিন অংশটুকু শরীরের পুষ্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুতে ড্রাগন ফল সাদা, লাল, গোলাপি ও হলুদ রঙের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের ভেতর সবচেয়ে বেশী ফলন হয় পিংক ও গোলাপি কালারের ড্রাগন।
স্ট্রবেরি: বাংলাদেশে স্ট্রবেরি চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছে। স্ট্রবেরি খেতে অনেক সুস্বাদু এবং এই ফরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি’ থাকে। বাংলাদেশে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত স্ট্রবেরি চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
মাল্টা: সারাদেশেই মাল্টা চাষ করে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। মাল্টাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি’ থাকায় এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। এছাড়া চাষযোগ্য জমিতে এই ফলের উৎপাদন খুবই ভাল।
রাম্বুটান: বিদেশী ফলের ভেতর ভোক্তাদের কাছে রাম্বুটানের বেশ চাহিদা আছে। রাম্বুটান মালয়েশিয়ান একটি ফল। বাংলাদেশে বর্তমানে এই ফলের চাষাবাদ হয়ে থাকে। রাম্বুটান শীতকালে চাষ করা যায় না এবং গরম কালেই এই রাম্বুটান ফল চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
রকমেলন: বাংলাদেশে এই বিদেশী ফল রকমেলন চাষ করা হচ্ছে এবং এই ফলটি সাউথ আফ্রিকার অন্যতম ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এই ফলের চাষাবাদ করা সম্ভব। যেসকল এলাকাতে বৃষ্টিপাত কম হয় সেসকল এলাকাতেই রকমেলন ভাল হয় বলেছেন ড. ইসলাম।
লংগান: বাংলাদেশে বিদেশী ফলের ভেতর লংগান বেশ আলোচিত ভোক্তাদের কাছে। লংগান দেখেতে অনেকটা লিচুর মত এবং অনেকে এটাকে কাঁঠলিচু বা আঁশফল বলে থাকে। লংগান খেতে খুবই সুস্বাদু।
অ্যাভোকাডো: এই বিশেষ ধরণের ফলটি সারাবিশ্বেই অত্যন্ত চাহিদা সম্পূর্ণ একটি ফল। বর্তমানে অ্যাভোকাডো বাংলাদেশেও চাষাবাদ হচ্ছে। ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিসম্মত একটি ফল এবং এই ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেল মজুত আছে।
বাংলাদেশে এই সাতটি বিদেশী ফলের চাষাবাদ করে কৃষকেরা খুবই লাভবান হচ্ছেন এবং ভোক্তাদের মুখেও ফলগুলোর বিশেষ কদর শুনতে পাওয়া গেছে।
সূত্র: বিবিসি